• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হাবিপ্রবিতে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত

  হাবিপ্রবি প্রতিনিধি

০৬ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:৩৩
অবস্থান
৫৭ শিক্ষকের অবস্থান (ছবি : দৈনিক অধিকার)

এক মাস বন্ধের পর রবিবার (৬ জানুয়ারি) খুলেছে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। বিশ্ববিদ্যালয় চালুর দিন থেকেই পূর্বের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম ও সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত ৫৭ জন শিক্ষক।

বিভিন্ন ইস্যুতে চলমান আন্দোলনের কারণে স্থবির হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম। যৌন নির্যাতনকারী শিক্ষকদের স্থায়ী শাস্তিসহ ৬ দফা দাবিতে প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম এবং ইনক্রিমেন্টের দাবিতে সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত ৫৭ জন শিক্ষক অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন।

সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত ৫৭ জন শিক্ষক ও রেজিস্ট্রার লাঞ্ছনার অভিযোগ উঠে। রেজিস্ট্রার লাঞ্ছনার ঘটনায় দুই শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করা হলে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে উপাচার্যকে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালীন ছুটি বৃদ্ধি করে এক মাস বন্ধ রাখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

যৌন নির্যাতনকারী শিক্ষকদের স্থায়ী শাস্তিসহ ৬ দফা দাবিতে গত বছরের ৬ নভেম্বর থেকে ঘণ্টা ব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম। প্রতিদিন দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই অবস্থান কর্মসূচি চলে আসছিল। ৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে চলমান অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। এক মাস বন্ধের পর ৬ জানুয়ারি একই স্থানে ঘণ্টা ব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম।

ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে এ কর্মসূচি চলে আসছে। প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. বলরাম রায় বলেন, 'আমরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছি। উপাচার্য মহোদয় আমাদেরকে আলোচনার জন্য ডাকেন নি। এক মাস বন্ধ রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। অ্যাকাডেমিক কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা না করে রিজেন্ট বোর্ডের সাথে আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়কে এক মাস বন্ধ করা হয়েছে অথচ সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের মত অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয় নি। আমরা আমাদের দুই সহকর্মীকে রেখে ক্লাস পরীক্ষা এবং ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব না। আমাদের দাবি মানা না হলে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক এস এম হারুন-অর-রশিদ বলেন, কোন নিয়ম বা আইনের তোয়াক্কা না করে দুই শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে অথচ ১৪ নভেম্বরের শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় কিছুই করা হয় নি। বিশ্ববিদ্যালয় এক মাস বন্ধ হওয়ার আগে ক্লাস-পরীক্ষা চলছিল অথচ বিশ্ববিদ্যালয়কে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলে সংশ্লিষ্ট সমস্যার সমাধান করে বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হয়। আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এক মাস বন্ধ ছিল, এ সময় আমাদের কোনো দাবি মেনে নেওয়া হয় নি বরং আমাদেরকে জামাত-বিএনপি এজেন্ট বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বর্তমান উপাচার্যের সময়ে সম্পন্ন সকল তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের অবস্থান (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ফোরামের সহসভাপতি এ টি এম শফিকুল ইসলাম বলেন, এক মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা হয়েছিল তখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের মতো তেমন কোনো পরিস্থিতি হয় নি। আমরা মনে করি, উপাচার্য মহোদয় তার ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে বন্ধ ঘোষণা করেছিলেন।

এদিকে বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদ ও শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচারের দাবিতে ১৫ নভেম্বর থেকে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করে আসছেন সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত ৫৭ জন শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের আগে মুখে কালো কাপড় ও মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন তারা। এক মাস বন্ধের পর পূর্বের ন্যায় আবারো প্রশাসনিক ভবনের সিঁড়িতে চলমান অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন।

রবিবার অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে কৃষ্ণ চন্দ্র রায় বলেন, বেতন বৈষম্যের কোনো সমাধান এবং ১৪ নভেম্বর শিক্ষক লাঞ্ছনার কোন বিচার আমরা পাইনি । ২৯ নভেম্বরের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই জন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। অথচ ১৪ নভেম্বরের শিক্ষক লাঞ্ছনার কোন তদন্ত রিপোর্ট আমরা পাই নি। ৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি অস্থিতিশীল জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা সেশন জটের আশংকায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং আন্দোলনরত শিক্ষক-উভয় পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. সফিউল আলম বলেন, 'যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটির রিপোর্টসহ বিচারের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে, এখন শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে।

শিক্ষক লাঞ্ছনা এবং রেজিস্ট্রার লাঞ্ছনার বিষয়ে তিনি বলেন, 'স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ৪৩ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও রেজিস্ট্রার লাঞ্ছনার মত কাজ হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তারা রেজিস্ট্রারের মত সিনিয়র শিক্ষককে তার অফিস কক্ষ থেকে টানা-হ্যাঁচড়া করে নামিয়ে নিয়ে যান।

ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর অধ্যাপক ড. মু আবুল কাসেম বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বরাত দিয়ে বলেন, জাতীয় বেতন স্কেল/২০১৫ এর পরিপত্র জারির পর থেকে ইনক্রিমেন্ট দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। পরিপত্রে বলা আছে, পদোন্নতি-পর্যায়োন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনর্জিত অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট প্রদানের বিষয় বিবেচনায় এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেই। এছাড়া এ সংক্রান্ত ইতিপূর্বে গৃহীত(যদি নিয়ে থাকেন) কোনো সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রদত্ত অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট তবে তা আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

ক্লাস পরীক্ষা বন্ধের ব্যাপারে উপাচার্য বলেন, ক্লাস পরীক্ষা চলছে, শুধুমাত্র ২ টি অনুষদ ছাড়া বাকি সকল অনুষদে পরীক্ষা নিয়মিত চলছে।

ইনক্রিমেন্টের ব্যাপারে উপাচার্য বলেন, তাদের ইনক্রিমেন্টের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাথে আলোচনা করা হবে।

উপাচার্য বলেন, আমার আগের উপাচার্য শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট দিয়ে আসছিলেন যদিও সেটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের নির্দেশনা বহির্ভূত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এখন বলছেন, ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হবে না। তবুও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সমাধান করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি বলেন, রবিবার (৬ জানুয়ারি) বিকেল তিনটায় অনুষদের ডিনদেরকে নিয়ে মিটিং করা হবে, এই মিটিংয়ে এই বিষয়ে আলোচনা হবে।

২ শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের ব্যাপারে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টার সাথে আলোচনা করে আইন অনুযায়ী দুই শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে রিজেন্ট বোর্ডে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড