বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি
গেল ১৮ ও ২০ ডিসেম্বর একটি পত্রিকায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম’ এই মর্মে দুটো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ১৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনের এক স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান বরাবর লেখা চিঠিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. জিনাত হুদা বলেন, ‘অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন কিছু মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের জামায়াত-শিবিরের প্রার্থীকে ভিসি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। এমন নিয়োগ বাণিজ্য আমরা মেনে নিতে পারি না।’
একই পত্রিকায় ২০ ডিসেম্বর সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছে পাঠানো চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, ‘গেল ১৫ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক নিয়োগ বোর্ডের দিন ধার্য করা হয়েছিল। প্রার্থীদের কয়েকজন প্রার্থীর অনার্স ও মাস্টার্সের ফল ভালো থাকা সত্ত্বেও কম যোগ্যতা সম্পন্ন এবং জামাত-শিবিরের একাধিক প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন উপাচার্য, কিন্তু নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের প্রতিবাদের কারণে উপাচার্য সফল হননি। অন্যদিকে, এই বোর্ড বসার আগেই তার পছন্দের জামাত-শিবিরের একজন প্রার্থীকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর ওই শিক্ষককে খণ্ডকালীন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।’
এছাড়া, তিনি আরও বলেন, ‘ওই প্রার্থী মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা করেছেন।’ সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘যে প্রার্থীকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সে তো আমার সরাসরি শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার চলাফেরা-চালচলন তো আমি জানি।’
যে খণ্ডকালীন শিক্ষকের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন তার কয়েকজন সহকর্মী এবং তার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক। এই প্রতিবেদককে একজন সহকর্মী জানান যে, ‘যাকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ হতে অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন, এবং মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে চতুর্থ হয়েছেন। এছাড়া, এসএসসি এবং এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ ৫.০০ স্কেলে ৫.০০ পেয়েছেন। এমনকি এই শিক্ষক অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুল স্কলারশিপও পেয়েছিল। একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে এই শিক্ষকের একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাদ্রাসায় পড়লেই কি কেউ জামায়াত শিবির হয়ে যায়? তাহলে তো আমাদের প্রধানমন্ত্রী জামাত শিবিরকে প্রমোট করছেন, কেননা তিনি কিছুদিন আগেই কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিয়েছেন।’ আরেকজন সহকর্মী প্রশ্ন তুলেছেন যে, ‘এই খণ্ডকালীন শিক্ষক যদি জামায়াত শিবিরই হয় তবে কীভাবে সে ২০১১-২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাবি’র হলে অবস্থান করলেন, কেন হল কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনো অ্যালিগেশন আনল না।’
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে, তারা সবাই বলেছেন ছাত্রজীবনে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে এই শিক্ষক লেখাপড়া করেছেন এবং কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে তিনি যুক্ত নন বলে তারা মনে করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক জানান যে, ‘অভিযুক্ত শিক্ষক অত্যন্ত মেধাবী এবং যোগ্যতাসম্পন্ন। যিনি অভিযোগ করেছেন তিনি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে এসব করেছেন বলে তার ধারণা, কেন তিনি শুনেছেন অভিযোগকারীর নিজেরও পছন্দের প্রার্থী ছিল যার সমস্ত যোগ্যতাপূর্ণ না হওয়ায় রেজিস্টার অফিস থেকে ভাইভা কার্ড পাননি।’
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড