আরিফুল ইসলাম আরিফ
জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র তিন দিন বাকি। দিন যত গড়াচ্ছে সর্বত্র নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ ততই বাড়ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বক্তব্য, চিন্তা-ভাবনা, ইশতেহার, নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচনি জোট, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রভৃতি বিষয়ে গণমাধ্যম এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। একই সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলছে ভোটাররাও।
এবারের নির্বাচনে অন্যান্য ভোটারের পাশাপাশি তরুণ ভোটারের প্রভাব থাকবে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির মূলেও তরুণ সমাজের ভূমিকা সর্বাধিক। আসন্ন নির্বাচনে তরুণ সমাজের ভাবনা, পছন্দ-অপছন্দ, সমর্থন কিংবা বিরোধিতা ভোটের ফল নির্ধারণ করে দিতে পারে।
কেমন হবে নতুন সরকার? সেই সরকার তরুণ বান্ধব হবে কি না ? মুক্তিযুদ্ধের চেতনার হবে কি না? দুর্নীতিমুক্ত এবং শিক্ষা বান্ধব হবে কি না? তারুণ্যের কর্মসংস্থান কতটা করতে পারবে?
এসব নিয়ে ভাবছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণরা। তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন দৈনিক অধিকারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম আরিফ।
আইন ও বিচার বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনুপ রায় বলেন, ‘এ বছর প্রথম জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেব তাই ভালো লাগছে। একটি দেশের সরকারের কাজের কিছু ইতিবাচক আবার কিছু নেতিবাচক দিকও থাকে। আগের বছরগুলোকে এবং প্রার্থীর গুণাবলী পর্যালোচনা করে আমার কাছে যাকে ভালো মনে হবে তাকেই ভোট দেব। আশা করছি একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে। আমি যেহেতু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি আর পড়াশোনা যেহেতু শেষ পর্যায়ে তাই যে সরকারই আসুক না কেন আমি চাই বেশি বেশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হোক। আমি চাই চাকরির আবেদনের ফি সম্পূর্ণ ফ্রি হোক, বেকার তরুণদের সহজ শর্তে ন্যূনতম ৫ লাখ টাকা ঋণ প্রদান এবং প্রশাসনের খালি পদগুলোতে দ্রুত নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হোক।’
জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, ‘একজন তরুণ ভোটার হিসেবে আমি বলতে চাই, তরুণরাই সিন্ধান্ত নেবেন এদেশের দায়িত্বভার কাদের হাতে তুলে দেবেন। যে সরকারই ক্ষমতায় যাক না কেন তরুণ প্রজন্ম দেশের সবক্ষেত্রে আগের থেকে আরও বেশি অংশীদারিত্ব পাবে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তরুণরা আগামী দিনের পুরোপুরি কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পাবে। নতুন সরকারকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে মিশন তা পুরোপুরি সম্পন্ন করতে হবে। শিক্ষা বৃত্তি ও বিদেশে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সকল কর্মপ্রচেষ্টা যেন অব্যাহত থাকে সে ব্যাপারে তরুণদের কাছে সরকারকে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। শিক্ষা ও কারিগরি ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্ম শতভাগ সুবিধা পাবে এই আশা রাখি নির্বাচিত সরকারের কাছে।’
মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তাহমিনা হামিদ ঐশী বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনীতি শব্দটা শুনলে বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি হয়। যে রাজনীতি ছাড়া দেশ চালানো অসম্ভব, সে রাজনীতি নিয়ে এ ধরনের ভীতি সঞ্চার হয়তো অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে এর পেছনের কারণগুলো সততার সঙ্গে ক্ষতিয়ে দেখলে যে কেউ এই ভয়ের যৌক্তিকতা টের পাবেন। সামনে নির্বাচন। আশেপাশের মানুষদের যখন বলতে শুনি যে সম্ভাব্য সহিংসতা এড়াতে ভোটকেন্দ্রেই যাবেন না, তখন খুব খারাপ লাগে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করতে এত অনিশ্চয়তা এত ভয় কেন? সে প্রশ্নের সদুত্তর হয়তো হর্তাকর্তারা মুচকি হেসে এড়িয়ে যাবেন, কিন্ত স্বাধীন দেশের একজন নাগরিক হিসেবে ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা চাই। এটা মানছি যে হুট করে আমূল পরিবর্তন সম্ভব নয়, তবু রাজনৈতিক দলগুলোর খারাপ কাজের ভাগটা দাড়িপাল্লায় মাপলে যাতে ভালো কাজের তুলনায় অনেক কম ঠেকে সেই নিশ্চয়তা চাই। যাতে প্রতিটা নির্বাচনে মানুষ আশার আলো জ্বেলে ভোট দিতে যেতে পারে যোগ্য নেতা নির্বাচন করার উদ্দেশ্যে।’
ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুরুজ্জামান শুভ বলেন, ‘আমি প্রত্যক্ষভাবে কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। তরুণ ভোটার হিসেবে আমার চাওয়া, নির্বাচন যেন স্বাধীন, নিরপক্ষে ও অবাধ হয়। অবশ্যই সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেব। প্রার্থীরা এখন যেভাবে আমাদের কাছে আসছে নির্বাচিত হওয়ার পর তা যেন অব্যাহত থাকে। সাধারণ জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়েছেন বিষয়টি যেন তারা ভুলে না যান। এমন সরকার চাই যিনি জনগণের জন্য কাজ করবেন। দুর্নীতিমুক্ত ও শিক্ষাবান্ধব বাংলাদেশ গড়বেন। বিশেষ করে দেশের উন্নয়ন যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবে নতুন সরকার।’
বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, ‘আশা করি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। বর্তমান সরকার নির্বাচন বান্ধব একটা পরিবেশ এরই মধ্যে তৈরি করেছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে এবং আগামীতে উন্নয়ন ও শান্তির ধারা বজায় রাখবে তাদেরকেই ভোট দেব। এমন সরকার চাই, যারা সবসময়ই মানুষের পাশে থাকবে। শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করবে। তারুণ্যের কর্মসংস্থান করবে। অর্থাৎ জনগণের বিষয়টি যিনি সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেবেন তাকেই ভোট দেব।’
উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী আবু হাসান বলেন, ‘আমি শিক্ষিত ও জনবান্ধব প্রার্থীকে প্রথম ভোটটি দিতে চাই। যিনি সুখে দুঃখে সবসময় নিজের এলাকার মানুষের সঙ্গে থাকবেন। দেশ এখন উন্নয়নশীল। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা দরকার। আশাকরি, দেশের স্বার্থে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে। যে রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় আসুক, তরুণ প্রজন্মের চাওয়া থাকবে যাতে দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে তরুণদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। যে সরকারই আসুক না কেন, দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম যেন আরও বেগবান হয়, সেটাই প্রত্যাশা।’
জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নন্দিতা সরকার বলেন, ‘নির্বাচন শব্দটা আলাদা একটা অনুভুতি তৈরি করে। দেশ পরিচালনার জন্য ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত করাই হলো নির্বাচন। পুরো দেশ পরিচালিত হবে এই নির্বাচিত দলের মাধ্যমে। তাই এর তাৎপর্য সকলের কাছে অনেক বেশি। তবে আমাদের মতো তরুণদের কাছে নির্বাচন অন্যরকম একটা আমেজ সৃষ্টি করে। আমাদের চিন্তা চেতনার সঙ্গে মিলবে এমন কাউকে দায়িত্বে বাঁছাই করতে উদগ্রীব আমরা। যে দেশ আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ঠাঁই, সেই দেশের প্রতি যার টান বেশি, যারা দেশের ও দেশের জনগণের জন্য, তাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাবে এমন প্রতিনিধিকে আমরা দেশ পরিচালনার ভার তুলে দিতে চাই।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেকবার নির্বাচনের সময় ভোট জালিয়াতি, সংঘর্ষের মতো ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটে যেটা সেই এলাকার ভোটারদের মনে ভীতি তৈরি করে দেয়। এবারের চাওয়া এটুকুই যেন, সকলেই নিশ্চিন্তে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগটুকু পায়। এছাড়া, বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনের সময় যে ঝামেলা হয় তাতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বেড়ে যায়, এইসব এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি কড়া করলে নির্বাচনকালীন এইসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। সর্বোপরি আমি চাই দেশের মানুষের সুষ্ঠু ভোটাধিকার নিশ্চিত যেন হয় এই নির্বাচনের মাধ্যমে। ভোটারের নিজের পছন্দের যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করুক ভোট দিয়ে এবং নির্বাচিতরা শাসক হবেন না, হবেন দেশের সুপরিচালক। ভালোবেসে, যত্নে সাজাবেন আমাদের দেশকে, দেশের মানুষের প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন, পূরণ করবেন তাদের সকল প্রতিশ্রুতি।’
লেখক : শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড