মুহাম্মদ জহিরুল হক
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনি আমেজ বিরাজ করছে সারাদেশে। গেল বুধবার থেকে মাইকের আওয়াজ, জনসভা, পথসভা, উঠান বৈঠক ও গণসংযোগসহ পোস্টার-ব্যানার সাঁটানোর মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণার তোড়জোড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে হাট-বাজারে সবার মুখে মুখে নির্বাচনি আলাপ-আলোচনা। নির্বাচন কেমন হবে? নতুন সরকার কে হতে যাচ্ছে? তা নিয়ে বাকবিতণ্ডা চলছে সব জায়গায়।
নির্বাচন নিয়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। এবারের জাতীয় নির্বাচনে নতুন ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ২৭ লক্ষ। যাদের বেশির ভাগই তরুণ। তাই নির্বাচনের ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই তরুণ জনগোষ্ঠী।
তেমনি নির্বাচনি হাওয়া লেগেছে বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (বিজিসিটিইউবি) তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন, চেয়ারম্যানের ঝুপড়ি দোকান ও বাস থেকে শুরু করে ক্লাস রুমে ক্লাসের ফাঁকে শিক্ষার্থীদের আড্ডার বিষয় বস্তু হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। তরুণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তারা খুবই আশাবাদী। তারা ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও শান্তি পূর্ণ নির্বাচন প্রত্যাশা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ক্বানেতা সুলতানা দিশান নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, ‘নিরাপদে ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সুরক্ষিত ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আজাদ বলেন, ‘ভোটাধিকার, সুশাসন ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতিমুক্ত সরকার চাই।’
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শামিলা সুলতানা শাওন বলেন, ‘এমন একটি নির্বাচন চাই যেখানে থাকবে না কোনো সংশয়, ভীতি ও স্বজন হারানোর আশঙ্কা। যাতে আমরা স্বাধীনভাবে আমাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারব। এমন নির্বাচন চাই না, যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে না, থাকবে না রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিক হিসেবে নিজের ভোট প্রদানের সুযোগ। সুষ্ঠু নির্বাচন চাই যাতে নৈরাজ্য, হানাহানি, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে না। যোগ্য নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা রাখে এমন ব্যক্তিকে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমা আকতার মিলি বলেন, ‘আমি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে এমন সরকার চাই, যারা মানুষের নিরাপত্তা, নারীর অধিকার ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারবে। যেহেতু আমাদের দেশ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সেহেতু জনগণের মৌলিক চাহিদা ভোগ করার অধিকার আছে। যেই সরকার এই বিষয়গুলোর দায়িত্ব নিতে পারবে আমি মনে করি সে ই দেশের সরকার হিসেবে উপযুক্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী বাবলু মিয়া বলেন, ‘আমরা অবশ্যই সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সেজন্য আমি চাই বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়ন করা হোক। যাতে আমরা নিরাপদে ভোট প্রদান করতে পারি। আমি প্রত্যাশা করি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসুক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী মেহেরুন্নেসা শিরিন বলেন, ‘মাদকমুক্ত সমাজ চাই। আমি মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবারের কাউকে ভোট দেব না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাছনারা সুলতানা বলেন, ‘কর্মসংস্থানের সুযোগ ও মত প্রকাশের নিশ্চয়তা চাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী, পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় ছাত্রনেতা ও বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদের দক্ষিণ জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ তাসিন এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি দৈনিক অধিকারকে বলেন–
দৈনিক অধিকার : নির্বাচনে ছাত্রলীগ কি ভূমিকা পালন করবে?
আবু সাইদ তাসিন : ছাত্রলীগ কোনো নির্বাচন কেন্দ্রীক সংগঠন নয়। সেই ১৯৪৭ সালের ৪ জানুয়ারি হতে এই দেশের প্রতিটি আন্দোলন, সংগ্রাম এবং অধিকার আদায়ে ছাত্রলীগ সব সময় সোচ্চার ছিল। বিগত সময়ের সব নির্বাচনের মতো ছাত্রলীগ সর্বদা নৌকার পক্ষে কাজ করবে। নৌকার বিজয়ের জন্য ছাত্রলীগ তার সর্বোচ্চ মেধা ও শ্রম দিয়ে কাজ করে যাবে।
দৈনিক অধিকার : কেন্দ্র থেকে আপনাদের প্রতি নির্দেশনা কি?
আবু সাইদ তাসিন : কেন্দ্র থেকে আমাদেরকে যে নির্দেশনা দেওয়া হবে, আমরা ছাত্রলীগ সবসময় সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি, মতবিরোধ ভুলে গিয়ে জোটগতভাবে কাজ করে যাব এবং জননেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে পুনরায় নির্বাচনে জয়ী করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব।
দৈনিক অধিকার : নির্বাচন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করেন কি?
আবু সাইদ তাসিন : অবশ্যই আমি মনে করি, জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময় প্রায় প্রতিটি নির্বাচন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। ইনশাআল্লাহ এই নির্বাচনও নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশা রাখি।
দৈনিক অধিকার : আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন কি সুষ্ঠু হবে?
আবু সাইদ তাসিন : সুষ্ঠু না হওয়ার কোনো কারণ নেই। যদিও কিছু মৌলবাদী, জঙ্গীগোষ্ঠী ও স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠী নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে বলে তথ্য রয়েছে। আমরা ছাত্রলীগ মাঠে থেকে আশা করি তা প্রতিহত করতে পারব। সাধারণ জনগণ এদের বয়কট করবে।
দৈনিক অধিকার : আপনার উপজেলা পটিয়ার নির্বাচনি হালচাল বলুন। নৌকার প্রার্থীর সম্ভাবনা কেমন?
আবু সাইদ তাসিন : আমাদের পটিয়ায় নৌকার মাঝি আলহাজ্ব শামসুল হক চৌধুরী আমাদের বিগত দশ বছরের এমপি। আপনি জানেন স্বাধীনতার ৩৭ বছর পর ২০০৮ সালে আমরা প্রথম নৌকার বিজয়ী প্রার্থী পেয়েছিলাম। আমরা এ আসন আর হারাতে চাই না। পটিয়ায় ছাত্রলীগ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে এই আসনটি দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে পুনরায় উপহার দিতে চাই। ইনশাআল্লাহ শামসুল হক চৌধুরী বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।
উল্লেখ্য, গেল ৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ এর তফসিল ঘোষণা করেন। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামী ৩০ ডিসেম্বর সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিপক্বতা অর্জনে ইতিবাচক পরিবর্তন বলে মনে করছে অনেকেই। এই নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ মানুষ নতুন করে সুশাসন, সহনশীল রাজনীতি, পরমতসহিষ্ণুতা, রাজনৈতিক দলের সহিষ্ণু অবস্থান, শান্তি, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, দারিদ্র্য দূরীকরণ, বেকারত্ব দূরীকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা ব্যবস্থা, নাগরিক অধিকার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতিমুক্ত দেশের স্বপ্ন দেখছেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড