সাইফুল মজুমদার
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের মানুষের আগ্রহের শেষ নেই, চায়ের আড্ডায়, বাস বা ট্রেনে সর্বত্রই মানুষের মুখে এখন একটিই আলোচনা- নির্বাচন। নির্বাচনী ভোটের এই হাওয়া লেগেছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের মাঝেও।
ক্যান্টিন, ক্যাফেটেরিয়া, বিভিন্ন ঝুপড়ি, আবাসিক হলের পাশে দোকানগুলোতে শিক্ষার্থীদের আড্ডার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এছাড়াও অনেকে পছন্দের প্রার্থীদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠক, উঠান বৈঠক, কর্মীসভা, মতবিনিময় সভাসহ নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ততম দিন পার করছেন।
ভোট একটি রাষ্ট্রের নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ ভোট প্রয়োগ করার অধিকার পাঁচ বছর পর একবারই আসে নাগরিকের কাছে। এ জন্যই দেশের সাধারণ মানুষসহ শিক্ষার্থীদের কাছে বিশেষ করে এবার নতুন ভোটারদের কাছে এ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যে সকল শিক্ষার্থী সারা বছর বলে এসেছেন ‘আই হেট পলিটিক্স’ তাদের মুখেও হামেশা শোনা যাচ্ছে নির্বাচনের কথা। তাদের আড্ডার বিষয়বস্তু আসন্ন নির্বাচনের হালচাল। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে নাকি প্রহসনের নির্বাচন হবে এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
এবারের নির্বাচনে এক কোটি ২৩ লাখ নতুন ভোটার তাদের ভোট প্রয়োগ করবেন, যাদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। অনেকেই মনে করছেন, এ নির্বাচনের হার-জিতের ব্যবধান গড়ে দেবে এ নতুন ভোটাররা। এই তরুণ ভোটারদের ভোট পেতে হলে কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মাদকমুক্ত দেশ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ প্রদান এবং বেকারত্ব নিরসনে কাজ করতে হবে। একটি উন্নত দেশ ও জাতি গঠনে তাদের ভোট ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ তবে সেই ভোট সবাই প্রয়োগ করতে পারবে কি না সেটা নিয়ে এখনও শঙ্কা কাটেনি। মাভাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আড্ডায় এমন বিষয়গুলো ওঠে আসছে।
অধিকাংশের মতে তখনই নাগরিকের ভোটের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা পাবে যখন ভোটার তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে। আর নাগরিকের ভোটে যখন কোনো প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন তখন তার জবাবদিহিতার একটা জায়গা তৈরি হবে।
এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নতুন ভোটার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, অতীতের মতো কোনো প্রশ্নবিদ্ধ বা প্রহসনমূলক নির্বাচন যাতে না হয়, আমরা যাতে সুষ্ঠুভাবে নির্বিঘ্নে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারি। নির্বাচন কমিশনকে সকল প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করলে কিংবা আচারণবিধি ভঙ্গ করলে সে যে দলেরই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী রিফাদ আহমেদ বলেন, নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা অনেক উন্নয়নের আশ্বাস দেন, বাস্তবিক পক্ষে তা কিছুই হয় না। নির্বাচনে সব প্রার্থীদের মারিং লুটিং রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ইএসআরএম বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মাজহারুল বাপ্পী দৈনিক অধিকারকে বলেন, এবারের সবদলের নির্বাচনের ইশতেহারে তরুণদের বিভিন্ন সময়ের দাবিগুলো মানতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক শাহাদাত হোসেন শিবলী দৈনিক অধিকারকে বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কোন নির্বাচন কেন্দ্রিক সংগঠন নয়, এটা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠন। কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির পক্ষে মাঠে থেকে যা যা করা দরকার তা সর্বোচ্চ করবে। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে যেন কোনো প্রকার মৌলবাদী শক্তি অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থাকব এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করব আমরা। এছাড়া, ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায়ে তাদের পাশে থেকে কাজ করে যাব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এক কর্মী বলেন, এই সরকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের নায্য দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া, কথা বলায় বাধা দেওয়াসহ সর্ব ক্ষেত্রেই যৌক্তিক দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে বাধা দিয়েছে। বেশিরভাগ যৌক্তিক দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে দমন পীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে শিক্ষার্থীরা।
বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে আর মুক্তিযুদ্ধের মূল মন্ত্রই ছিল সাম্য, স্বার্বভৌমত্ব এবং সুবিচার। তাই এই দমন-পীড়ন, নির্যাতন কোনোভাবে মেনে নেয়নি শিক্ষার্থীসহ তরুণ নাগরিকরা। এজন্য তারা একটা পরিবর্তন চান। আমরা সবসময় ক্যাম্পাসে সহঅবস্থান এবং যে কোনো প্রগতিশীল সংগঠনের জন্য সভা সমাবেশ উন্মুক্ত রাখা, ছাত্র-সংসদ নির্বাচন এবং হলগুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে আমরা কাজ করে যাব। শতভাগ আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ এবং হলগুলোতে মেধা অনুসারে আসন বন্টন নিশ্চিতকরণে আমরা কাজ করে যাব। বাকস্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে আমরা সোচ্চার থাকব।
লেখক : শিক্ষার্থী, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড