• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জবিতে তথ্য সরবরাহে প্রশাসনের অনীহা, হয়রানির শিকার সংবাদকর্মীরা

  জয়নুল হক

১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৩৬
জবি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (ছবি : সংগৃহীত)

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা তথ্যপ্রাপ্তিতে ভোগান্তি এবং হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বরাবরের মতোই তথ্য প্রদানে অনীহা প্রকাশ ও তথ্য সরবরাহে অসহযোগিতা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে জানা যায়, তারা বিধি মোতাবেক তথ্য পেতে আবেদন করেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সময়মতো কোনো তথ্য পান না। তারা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি বের হয়ে আসবে বলেই তথ্য দিতে অপারগতা দেখায় প্রশাসন।

তারা আরও জানান, জবি কর্মকর্তারা তথ্য অধিকার আইন উপেক্ষা করেই তথ্য প্রদানে অনীহা প্রদর্শন করছেন। ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিনিধিরা অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্যের জন্য আবেদন করলে তাদেরকে এ দপ্তর-সে দপ্তর ঘুরিয়ে দীর্ঘ কালক্ষেপণ করেও পরিপূর্ণ তথ্য দেয় না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, সাংবাদিকদের এ অভিযোগ অস্বীকার করেন জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তথ্য কমিশনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, তথ্যপ্রাপ্তি নাগরিকের অধিকার। বিধি মোতাবেক আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ তথ্য দিতে বাধ্য থাকবে। অন্যথায় মামলা করার বিধান রয়েছে।

জানা যায়, বাংলাদেশের নাগরিকদের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতেই ‘তথ্য অধিকার আইন-২০০৯’ নামে নির্দিষ্ট আইন প্রণীত রয়েছে। তথ্য অধিকার আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার রয়েছে। নাগরিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাকে তথ্য দিতে বাধ্য থাকবে। এ আইনে ২ (ঘ) ধারায় তথ্য প্রদান ইউনিট ও তথ্যের ধরনের বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তথ্য প্রদানে বাধ্য থাকার কথা বলা হয়েছে ৪ (ক) ধারায়। কর্তৃপক্ষের গৃহীত সিদ্ধান্ত, কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য নাগরিকের নিকট সহজলভ্য করে প্রচার ও প্রকাশ করতে নির্দেশনাও দেওয়া রয়েছে আইনের ৬ এর ১ ও ২ (১) ধারায়।

আইনের ৭ ধারা লঙ্ঘন না হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য না দেওয়া বা দিতে বিলম্ব করা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়মিত স্বভাবে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সাংবাদিকরা। ‘দেব’, ‘দিচ্ছি’, ‘পরে আসেন’, অনুমতি লাগবে’ ইত্যাদি অজুহাতে তারা এড়িয়ে যান বিভিন্ন বিষয়। এতে জনগণের সুনির্দিষ্ট অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। প্রশাসনিক গঠন, কার্যক্রম এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের তথ্য প্রকাশে কর্মকর্তাদের এমন অনীহা এবং অসহযোগিতা সংশ্লিষ্ট কাজে অস্বচ্ছতার ইঙ্গিত বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরা জানান, বিভিন্ন বিষয়ের তথ্যপ্রাপ্তির জন্য তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে যেতে হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত কর্মকর্তারা মৌলিক তথ্য প্রদানে অসহযোগিতা করে আসছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জাতীয় দৈনিকের সংবাদদাতা আহসান যোবায়ের অভিযোগ করে বলেন, কেরানীগঞ্জের প্রস্তাবিত নতুন ক্যাম্পাসের কর্ম পরিকল্পনা জানতে আমি রেজিস্ট্রার দপ্তরে গেলে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলেন, এ বিষয়ে জানতে উপরমহলের অনুমতি লাগবে। পরে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে আবেদন করলে তিনি তথ্য প্রদানে স্পষ্টত অস্বীকৃতি জানান।

অন্য একটি জাতীয় পত্রিকার জবি প্রতিনিধি লতিফুল ইসলাম জানান, ক্লাস-পরীক্ষা মেইনটেইন করে আমাদের সংবাদ সংগ্রহ এবং প্রকাশ করতে হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো তথ্যের জন্য আবেদন করলে তারা নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করে যা তথ্য প্রদানে তাদের অনীহা এবং অসহযোগিতা ছাড়া কিছু নয়।

একটি জাতীয় দৈনিকের নারী প্রতিনিধি অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকের অনুমোদিত পদসংখ্যা জানতে রেজিস্টার দপ্তরে সাদা কাগজে লিখিত আবেদন করা সত্ত্বেও দেব, দিচ্ছি বলে ১৫ দিনেও তথ্যটি আমাকে দেওয়া হয়নি এবং আবেদনের এক সপ্তাহ পর থেকে আমার ফোনও রিসিভ করেননি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান। অথচ, তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ কোনো কারণে তথ্য প্রদানে অপারগ থাকলে বা বিলম্ব হলে ১০ দিনের মধ্যে তা আবেদনকারীকে অবহিত করতে হবে।

কোনো তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে বিভিন্ন সময় যোগাযোগ করা হলে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের অনুমতি লাগবে এবং অনেক সময় সরাসরি অপারগতা প্রকাশ করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। আবার অনেক কর্মকর্তা তথ্য প্রদানে উপমহলের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলেও তথ্য প্রদানে অনীহা দেখান বলে অভিযোগ করেন অপর এক সংবাদকর্মী।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে সাংবাদিকদের তথ্য প্রদানে উপরমহলের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে জবি উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘কোনো তথ্যই গোপন রাখা হয় না। বিধি অনুযায়ী আবেদন করলে আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য সরবরাহ করি।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক’র (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তথ্য প্রদানে অনীহা দুরভিসন্ধিমূলক এবং কোনো অনিয়ম ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এটা হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘নির্দিষ্ট কিছু বিষয় ছাড়া সব তথ্য দিতেই বাধ্য তারা। তারা তথ্য না দিলে প্রতিবাদ করতে হবে এবং আইনের আশ্রয় নিতে হবে। এটা আইনী অধিকার। তথ্য প্রাপ্তিতে এমন অসহযোগিতা পেলে তিনি ও তার সংগঠন সহযোগিতা করবে বলে জানান তিনি।

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড