• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিভাগীয় উন্নয়ন ফি এবং নবীন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে জাবি শিক্ষক মঞ্চের উদ্বেগ

  জাবি প্রতিনিধি

২১ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৪৪
জাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (ছবি : সংগৃহীত)

বিভাগীয় উন্নয়ন ফি এবং নবীন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন ‘শিক্ষক মঞ্চ’। মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ উদ্বেগ জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জনগণের টাকায় পরিচালিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে প্রথম পর্বে এবং স্নাতকোত্তর পর্বে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। ‘বিভাগ উন্নয়ন ফি’ এর নামে আদায় করা এই টাকার অঙ্ক প্রতি বছর বেড়েছে। বিভিন্ন বিভাগ কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, হিসাব, কেন্দ্রীয় জবাবদিহিতা ও অডিট ছাড়াই ইচ্ছা মতো ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও শিক্ষার্থীরা এই অতিরিক্ত ও নিরীক্ষাবিহীন স্বেচ্ছাচারী প্রক্রিয়ায় করা ফি বাতিলের জন্য আন্দোলন করছে। তাদের দাবি বিভাগ উন্নয়নের জন্য এবং ছাত্র কল্যাণের আওতাধীন বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে বরাদ্দ করতে হবে।

বলা হয়, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীগণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে সিনেট সদস্যদের স্মারকলিপি প্রদান, উপাচার্যসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে আসীন ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তাদের ন্যায্য দাবি আদায় করার ধারাবাহিক চেষ্টা করে চলেছেন। ২০১৬ সালে এ প্রসঙ্গে আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু লক্ষ করছি প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি।

এতে আরও বলা হয়, এমফিল ও পিএইচডি ভর্তির জন্য অর্থ আদায় বিগত সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। অথচ বিভাগীয় উচ্চশিক্ষা পর্ষদ এবং বিভাগীয় কেন্দ্রীয় শিক্ষা পর্ষদের যথাযথ নজরদারি ও বিধিমালা পরিমার্জনের অভাবে এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানে কোনো ধরনের গুণগত মান বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যর্থ হচ্ছে। বিভাগগুলো ও বিশ্ববিদ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রকারান্তরে এখন ডিগ্রি বিক্রির অভিযোগও উত্থাপিত হচ্ছে। এমতাবস্থায়, শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন ন্যায্য ও যৌক্তিক বলে আমরা মনে করি। আমরা আরও মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোর সকল তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়কেই করতে হবে। সকল তহবিলের হিসাব বিধি অনুযায়ী স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে এবং যথাযথ দপ্তরের মাধ্যমে নিয়মিত নিরীক্ষণের পরে নিরীক্ষা প্রতিবেদন জনপরিসরে প্রকাশ করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর পাশাপাশি বিভাগগুলোর অবকাঠামোগত মেরামত কাজ যথাযথভাবে হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সম্প্রসারণ ও বই-জার্নাল ক্রয়ে বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। পরিকল্পিত উদ্যোগ ও বরাদ্দের অভাবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে না। নজরদারি ও স্বচ্ছতার অভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রমের গুণগত মান নিয়ে বিভিন্ন সময়েই প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব ব্যাংকের কৌশলপত্রের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিক্ষাকে মুনাফামুখী করে তোলার জন্য বিভাগগুলোর ফি আদায়ের স্বেচ্ছাচারকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করছে। শিক্ষাদানের অবকাঠামো টিকিয়ে রাখা ও গতিশীল রাখার প্রয়োজনের কথা বলে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের স্বল্পতার কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় এবং উইকেন্ড কোর্স চালু রাখা ক্রমেই একটি ‘স্বাভাবিক’ যুক্তি ও প্রবণতায় পরিণত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন তহবিলে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ আনার দেনদরবার করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। নিয়ন্ত্রণহীন ও জবাবদিহিতা বিহীন অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যে কোনো ধরনের অর্থ আদায় ও ব্যয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যমান হার অনুযায়ী এ বছরে বিভাগগুলোতে এক কোটি চল্লিশ লক্ষ টাকা আদায় হবে। বিভাগগুলো আন্দোলনের মুখে বিভাগ উন্নয়ন ফি বাবদ সাত হাজার টাকা প্রথম পর্বের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্নাতকোত্তর পর্বে ভর্তির জন্য একই খাতে টাকা আদায়ে বৈধতার কোনো মানদণ্ডই মানা হচ্ছে না। এই টাকা বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের জন্য অসহনীয় ও অনৈতিক চাপ তৈরি করছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি, বিভাগ উন্নয়ন ফি'র নামে প্রথম পর্ব ও স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তির সময় অন্যায্য ও অবৈধ টাকা আদায় অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন বিভাগের তহবিল ও খাতওয়ারি প্রয়োজন অনুযায়ী এই অর্থ সংস্থান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা সমুন্নত রাখবেন। গেল কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব খাত থেকে আয় অনেক বেড়েছে। ভর্তি পরীক্ষার ফর্ম বিক্রি করে বিপুল টাকা আয় করার পরে এই অর্থ প্রদানের অনৈতিক চাপ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করার কোনো বৈধ ও গ্রহণযোগ্য কারণ নাই। ভর্তি পরীক্ষার ফর্ম বিক্রি আর ‘অবৈধ’ উইকেন্ড কোর্সের টাকা বিভাগ উন্নয়নেই ব্যয় হওয়া উচিৎ। সেই ব্যয়ের হিসাবে স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম পর্বের শিক্ষার্থীদের ক্লাশ শুরু হবে কিছুদিনের মধ্যেই। অনেক বছর থেকে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমরাও নতুন আগত প্রথম পর্বের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ শিক্ষাজীবনের জন্য র‌্যাগিং ও গণরুম সমস্যার সমাধান দাবি করে আসছি। এসব বিষয়ে পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর জন্য প্রশাসনকে এখন থেকেই কার্যকর ব্যবস্থা নেবার জোর দাবি জানাচ্ছি।

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড