• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অনুপ্রেরণার আরেক নাম জান্নাতুল মাওয়া

  কাশপিয়া ইমতিয়াজ দৃষ্টি

১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:৫৫
শিক্ষা
জান্নাতুল মাওয়া (ছবি : সম্পাদিত)

গল্পটা একটু অন্যরকম। তবে এমন গল্প অনেকের অনুপ্রেরণা হতে পারে। স্বপ্ন দেখার শুরুটা সেই ছোটবেলা থেকেই। এত কম বয়সে এত বড় স্বপ্ন হয়তো খুব কম মানুষই দেখতে পারেন। বড় হয়ে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট হয়ে অনেক টাকা কামিয়ে, সেটা দিয়ে একটা চাইল্ড হোম বানানোর ইচ্ছা ছিল জান্নাতুল মাওয়ার।

মানুষের বিশেষ করে শিশুদের মুখের হাসির প্রতি বরাবরই ভীষণ লোভ থেকে এমন চিন্তা আসে মাওয়ার। আর তাই, ক্লাসের সেকেন্ড গার্ল যখন সাইন্স না নিয়ে নিজের ইচ্ছায় বিজনেস স্টাডিজ নেয়, সব টিচারদের আক্কেল গুড়ুম। আস্তে আস্তে পড়ালেখার আর ক্যারিয়ারের চাপে যেন স্বপ্নটা আড়ালে চলে গিয়েছিল। অ্যাকাউন্টিং ও বোরিং লাগত দেখে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট হবার স্বপ্নটা স্বপ্নই রয়ে গেল।

কালক্রমে হয়ে উঠলেন উদ্যোক্তা। আর আবারও বাচ্চাদের জন্য কিছু করার ইচ্ছাটা জেগে উঠল। আস্তে আস্তে বুঝতে পারলেন বাচ্চাদের বাসস্থান থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষা থাকলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। তাই নিজেকে ব্যস্ত করলেন কিছু সংগঠনের সাথে যারা শিশুদের সাথে বড়দেরও জীবনে পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তার মাঝে সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ হলো অল ফর ওয়ান ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনে কাজ করছেন মাসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রজেক্ট হেড হিসেবে।

পিরিয়ডের মতো একটা স্পর্শকাতর বিষয়ে কথা বলতে আগে নিজেই বিব্রত বোধ করতেন। এখন মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদেরও সেশন নিচ্ছেন যেন তারা মেয়েদের সম্মান করে, নিজেদের লজ্জাস্থান নিয়েও যেন সচেতন থাকে ৷ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুলে যারা ক্লাস ৩-১০ পড়ে তাদের মাসিক পূর্ববর্তী আর পরবর্তী বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয় এখানে।

স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপকারিতা, মাসিক নিয়ে অহেতুক কুসংস্কার আর লজ্জা কাটানোর জন্য মাওয়া ও তার ফাউন্ডেশন ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্কুল থেকে স্কুল, গিয়েছেন সাভার, এমনকি সিলেটের চা শ্রমিকদের কাছে গিয়ে বলেছেন কেন মাসিক সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনের সময়ে নিঃসংকোচে কথা বলা উচিত। অল ফর ওয়ান ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মিরা জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮ পুরস্কার নিয়েছেন।

অন্যদিকে, মাওয়া কাজ করছেন লিপিং বাউন্ডারিজের মেন্টর হিসেবে, যারা কিনা মাদ্রাসার মেয়েদের আত্মবিশ্বাসী করার জন্য তাদের সাইকো সোশ্যাল হেলথ আর কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ নিয়ে কাজ করে। সবশেষে মাওয়া বলতে চান হাসিমুখ ফাউন্ডেশনের কথা।

২০১৫ সালে ইউনিভার্সিটির ক্লাব প্রোগ্রাম থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের এই স্কুলের সাথে পরিচয়। এরপর সুযোগ পেলেই বাচ্চাদের টানে ছুটে যাওয়া। ওদের মুখের হাসি যেন মাওয়ার জীবনের অনুপ্রেরণা।

সবশেষে না বললেই না, কয়েকদিন আগে জার্মান অ্যাম্বাসি থেকে আয়োজিত ‘ইওর অ্যানগেজমেন্ট কাউন্ট’ প্রতিযোগিতায় সেরা ৯ এর মধ্যে স্থান পায় মাওয়া, আর অর্জন করেন সার্টিফিকেট।

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে জান্নাতুল মাওয়া

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে জান্নাতুল মাওয়া

মাওয়ার মতে, সমাজের যেসব সমস্যা আমরা দেখি সেগুলো তখনই দূর করা সম্ভব যখন সবাই মিলে একসাথে কাজ করা যাবে। যে যেখানে আছে, নিজের ছোট ছোট কন্ট্রিবিউশানে গড়তে পারে একটা সুন্দর পৃথিবী। সৃষ্টিকর্তা এই সুন্দর পৃথিবী গড়তে সবাইকে সাহায্য করুন।

মাওয়ার জীবনের অনুপ্রেরণা হলো বাবার থেকে পাওয়া সততা আর মায়ের কাছ থেকে সবার জন্য কেয়ার করার মানসিকতা, তা একটা হাসি দিয়েই হোক না কেন।

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড