পবিপ্রবি প্রতিনিধি
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) বরিশালস্থ ক্যাম্পাসের ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন ডিসিপ্লিনের ১২তম ব্যাচের সকল শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একযোগে একই স্ট্যাটাসে শেয়ার করেছেন। স্ট্যাটাসে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সময়মত ইন্টার্নশীপ প্রোগ্রামের ভাতা প্রদানের অনুরোধ জানান।
মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) শিক্ষার্থীরা রাত ১০টার দিকে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামের ভাতা সময়মত না দেওয়ায় ইন্টার্নকালীন তাদের আর্থিক দুর্ভোগ-দুর্দশার কথা জানিয়ে নিজ নিজ আইডি থেকে স্ট্যাটাসটি শেয়ার করেন।
ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের পোস্ট (ছবি : সংগৃহীত)
ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
প্রিয় পবিপ্রবি, অপার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, আমাদেরকে প্রায় ৫ বছর সযত্নে ডি ভি এম শিক্ষা দেওয়ার জন্য। তবে আজ জীবনের এই ক্রান্তিলগ্নে উপস্থিত করার জন্য আমরা দুঃখিত ও হতাশাগ্রস্ত। আমরা বাবুগঞ্জ (বহিঃস্থ) ক্যাম্পাসের, ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন ডিসিপ্লিনের ১২তম ব্যাচের ছাত্র/ছাত্রী (২০১৩-২০১৪ সেশন)। বর্তমানে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম হেতু ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছি।
উল্লেখ্য, গত ১লা জুলাই ২০১৮ থেকে আমাদের ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম শুরু হয়েছে। যার দরুণ বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আমাদের অবস্থান করতে হচ্ছে। যাক সেসব কথা, এখন আসল কথা বলি। ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম চলাকালীন বিভিন্ন খরচ বাবদ প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু বাইরে এসে দেখছি আমাদের খরচের তুলনায় সেটা অপ্রতুল! অনেকগুলো প্লেসমেন্ট হওয়ায়-খাওয়া, আবাসন, পরিবহন ইত্যাদি কারণে অনেক বেশি খরচ হয়ে যায়। অবশ্য প্রশ্ন উঠতে পারে, আমরা কি শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাতার ওপর নির্ভর করে আছি?
উত্তরটা বেশ দুঃখজনক! আজ অবধি আমরা প্রোগ্রামের চার মাস অতিবাহিত করে ফেলেছি। কিন্তু ভাতা পেয়েছি মাত্র এক মাসের অর্থাৎ ১৫ হাজার টাকা! সেটাও আবার এক মাস পূর্বে!
ক্যাম্পাসে থাকাকালীন দেখেছি অনেক বন্ধুরা পরিবার থেকে টাকা পেতো না, বরঞ্চ নিজের খরচ নিজেকে টিউশন করে চালাতে হতো। বাবুগঞ্জের মতো নাজুক এলাকায় টিউশনি করে আবার কাউকে বাড়িতে টাকা পাঠাতে হতো পরিবার চালানোর জন্য। তা হলে একবার ভাবুন তো তারা কীভাবে দিনাতিপাত করছে! কীভাবে দিনাতিপাত করছে জানেন? কর্জ করে, সুদে ধার দেনা করে! আর এটাই হচ্ছে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীদের সার্বিক অবস্থার চিত্র। আর এমন অবস্থায় তো টাকাওয়ালাদেরও হাঁপিয়ে ওঠার কথা।
মাননীয় পবিপ্রবি, আরও দুঃখের কথা শুনবেন? আমাদের মধ্যে কেউ কেউ টাকার অভাবে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। সত্যি কথা বলতে কি জানেন? এই কথাগুলো বলার আগে আমরা নিজের সাথে বহুবার যুদ্ধ করেছি, কারণ আমরা যে মহান পবিপ্রবির ছাত্রছাত্রী!
পিছে এটিএম বুথের মতো আমাদের সার্টিফিকেট জানি আটকে না যায়!
আমরা জানি আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা অনেক আন্তরিক, তাছাড়া যখন আমরা ভালো কিছু করতে পারি তখন আপনিতেই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে, মনে মনে অজস্র কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি।
কিন্তু সব কিছু ছাড়িয়ে আমরা এখন হতাশায় ভুগছি, বিশ্বাস করুন আমাদের অনেক খারাপ দিন যাচ্ছে! এমতাবস্থায় অর্থিক সহায়তা না পেলে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম চালিয়ে যাওয়া একান্ত অসম্ভবপর। অন্যথায় আমাদেরকে ক্যাম্পাসে ফিরে আসতে বাধ্য হতে হবে। সেটা আমাদের প্রোগ্রামের জন্য ক্ষতিকারক, হয়তো ক্যাম্পাসের জন্যও ক্ষতিকারক হবে।
যেখানে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ভাবে টিএ/ডিএসহ প্রতিমাসে ভাতা পেয়ে থাকছে, সেখানে আমরা টিএ/ডিএ তো দূরে থাক মূল ভাতাটাই সময় মতো পাচ্ছি না! আর দেশের বাইরে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামের কথা নাই বা বললাম!
মাননীয় পবিপ্রবি, পরিশেষে আমাদের দৈন্যতার কথা একটু ভাবুন। সাথে সাথে আমরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেটা ভাবতেও ভুলবেন না।
এ নিয়ে ইন্টার্নশিপে থাকা শিক্ষার্থীরা জানান, 'আমাদের দাবি দাওয়া বারবার প্রশাসনকে জানানো হলেও তাদের তেমন দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না দেখায় আমাদের এই পদক্ষেপ'। দুই এক দিনের মধ্যে এ নিয়ে একটি স্মারকলিপি উপাচার্য বরাবর পাঠানো হবে বলেও শিক্ষার্থীরা জানান।
পবিপ্রবি'র এনিমেল সায়েন্স অব মেডিসিন অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রুহুল আমিন জানান, 'ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থীদের ভাতা সম্বলিত কাগজপত্র মূল ক্যাম্পাসে পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনিক জটিলতার কারণে প্রসেসিং এ একটু বিলম্ব হয়ে থাকতে পারে। এ নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। টাকা পাওয়া মাত্রই তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।'
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড