হাসান তামিম
ঢাকা কলেজ উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই বিদ্যাপিঠ হলো এই উপমহাদেশের প্রথম সুপ্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাঙালি জাতির অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই ঢাকা কলেজ। যুগের পর যুগ তৈরি করছে দেশের সেরা সন্তানদের। সময়ের সাথে সাথে সুনামের সুউচ্চ চূড়ায় অবস্থান নেয় ঢাকা কলেজ। জাতির অনেক মেধাবী সন্তান ধন্য হয়েছেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হয়ে।
১৭৭ বছরের সুদীর্ঘ পথ চলায় শত সহস্র স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি আর প্রাঞ্জল সম্ভাবনার দুয়ার এসে মিলিত হয়ে যেন, নতুন এক সম্ভাবনাময় পৃথিবীর বার্তা দিয়ে যাচ্ছে ঢাকা কলেজ। ‘নিজকে চিনো’ এই মন্ত্রে দীক্ষিত হতে এক ঝাঁক তরুণদের পদচারণায় সর্বদা মুখরিত থাকে কলেজ চত্বর। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করা হয়।
১৮৪১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৭৭ বছরের পথ চলায় অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে ঐতিহ্য এবং প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠান। ৫২-র ভাষা আন্দোলন, ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং অসংখ্য গনতান্ত্রিক আন্দোলনে এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের ছিলো সক্রিয় অংশগ্রহণ।
১৮৪১ সালে সে সময়ের গভর্নর জেনারেল লর্ড অকল্যান্ড এবং জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ঢাকা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। উনিশ শতকের ঢাকা নগরীর ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্নে, অনেক আশা ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সরকারি উদ্যোগ এবং জনগণের উৎসাহ ও সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত ঢাকা কলেজ ভবনটিরও রয়েছে এক রোমাঞ্চকর ইতিহাস।
শুরুতে কলেজটি পূর্বের স্থাপিত ঢাকা গর্ভনমেন্ট স্কুলের সঙ্গে সংযুক্ত করে গড়ে তোলা হলেও অতি শিগগিরই এটির জন্য একটি পৃথক ভবন প্রয়োজন হয়। তবে এ বিষয়ে সরকারের খুব একটা সদিচ্ছা ছিলো না। কলেজ ভবন নির্মাণের জন্য সরকার স্থানীয়ভাবে একটি কমিটি গঠন করে। তবে কলেজ ভবন তৈরি এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াবলীর দায়িত্ব তদারকি করে জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন। ভবনটির নকশা তৈরি এবং নির্মাণের দায়িত্ব পায় মিলিটারি বোর্ড।
১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বর কলকাতার তৎকালীন বিশপ রেভারেন্ড ড্যানিয়েল ‘ঢাকা কলেজ’ হিসেবে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রতিষ্ঠালগ্নে ঢাকা কলেজের ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো বুড়িগঙ্গার তীরে। সদরঘাটের স্থপতি কর্নেল গ্যাসর্টিন এর নকশা করেন। খাঁটি ব্রিটিশ ঢঙে, বিলাতি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির আদলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানটি পালন করা হয়। অনুষ্ঠান উপলক্ষে রেভারেন্ড ড্যানিয়েল একটি যথাযথ এবং প্রাসঙ্গিক বক্তৃতা প্রদান করেন।
সেই সময়ে ঢাকা কলেজ হয়ে ওঠে পূর্ববাংলার ইংরেজি শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। বিশেষ করে ঢাকা কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল জে. আয়ারল্যান্ড তিনি ছিলেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও হিন্দু কলেজের শিক্ষক। তিনি কলেজের শিক্ষাদান পদ্ধতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন। যার ফলে খুব কম সময়ের মধ্যে ঢাকা কলেজ উপমহাদেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাতি লাভ করে।
সেই ১৮৪১ সাল থেকে এই ২০১৮ সালের এই সময় পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও উপমহাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠানের এই দীর্ঘ পথচলায় মেধাবী তরুণের স্বপ্নের ক্যাম্পাসের নাম ঢাকা কলেজ। তারা এখানে স্বপ্ন নিয়ে আসেন মেধার বিচ্ছুরণ ঘটাতে যে আলোক বর্তিকায় আজও আলোকিত ঢাকা কলেজ।
উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়নরত। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ২২টি বিষয়ে শিক্ষাদান কার্যক্রম চালু রয়েছে।
১। বাংলা ২। ইংরেজি ৩। প্রাণীবিজ্ঞান ৪। রসায়ন ৫। গণিত ৬। পদার্থবিজ্ঞান ৭। ইতিহাস ৮। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ৯। ইসলামের ইতিহাস ১০ সমাজবিজ্ঞান ১১। মনোবিজ্ঞান ১২। ভূগোল ১৩। ব্যবস্থাপনা ১৪। পরিসংখ্যান ১৫। হিসাববিজ্ঞান ১৬। উদ্ভিদবিজ্ঞান ১৭। গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান ১৮। অর্থনীতি ১৯। ইসলামিক স্টাডিজ ২০। ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান ২১। দর্শন ২২। ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি
এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ৮টি ছাত্রাবাস। ছাত্রাবাসগুলো হলো:
১. উত্তর ছাত্রাবাস
২. দক্ষিণ ছাত্রাবাস
৩. পশ্চিম ছাত্রাবাস
৪. আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস
৫. ইলিয়াস ছাত্রাবাস
৬. শহীদ ফরহাদ হোসেন ছাত্রাবাস
৭. দক্ষিণায়ন ছাত্রাবাস
৮. শেখ কামাল ছাত্রাবাস।
এছাড়াও রয়েছে শরীর চর্চা কেন্দ্র, লাইব্রেরি, রিডিং রুম।
নানা প্রতিবন্ধকতা আর বাঁধার পাহাড় পেরিয়ে আরো অগণিত হৃদয়ের জ্ঞানের তৃষ্ণা নিবারণের জল হোক ঢাকা কলেজ। আগামীর দিনগুলো হোক আরো সমৃদ্ধশালী।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড