এম এস আজীম
৪ নভেম্বরের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা পিছিয়ে ৯ নভেম্বর নির্ধারণ করেছে শিক্ষা বোর্ড। তাও আবার পরীক্ষার ঠিক একদিন আগে এমন সিদ্ধান্ত। এটা দোষের কিছু না, পরীক্ষা পেছাতেই পারে। দেশ কোনো বিশেষ সঙ্কটময় মুহূর্তে থাকলে এমন সিদ্ধান্ত অস্বাভাবিক নয়।
তবে এটা যখন রাজধানীতে কোনো সমাবেশের জন্য হয়, তখন বিতর্ক হওয়াটাই স্বাভাবিক। মন্ত্রী স্বয়ং জানিয়ে দিলেন এমন তথ্য।
আমরা আগে দেখেছি, দেশে যখন ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতো তখন পরীক্ষা স্থগিত কিংবা তারিখ পরিবর্তন করা হতো। এবার কোনো সমাবেশের কারণে পরীক্ষা পেছানো হলো। বিষয়টি কতটা ইতিবাচকভাবে দেখছে ২৭ লাখ পরীক্ষার্থী ও তাদের পরিবার? নাগরিক সমাজের মধ্যেও তৈরি হয়েছে বিরুপ প্রতিক্রিয়া।
এমন পরিস্থিতির যৌক্তিক কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, একদিন আগে জানানো হলো পরদিন পরীক্ষা হচ্ছে না। এমন সিদ্ধান্ত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক চাপ তৈরি করেছে। দ্বিতীয়ত, পরিবর্তন করে পরীক্ষাটি এমন এক দিন দেওয়া হলো, যার আগ ও পরের দিন পরীক্ষা আছে। তার মানে টানা তিন দিন পরীক্ষায় বসতে হবে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের।
এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে দায়ী কারা? সমাবেশওয়ালারা নাকি বোর্ড। সমাবেশ হবে এ বিষয়টি মাসখানেক আগে থেকেই জানত বোর্ড। তাহলে পরীক্ষা শুরুর আগে কেন তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো না।
মন্ত্রী যুক্তি দিয়েছেন, কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস সনদ মাস্টার্সের স্বীকৃতি পেয়েছে। তারা শোকরানা মাহফিল করছে। কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হবে রাজধানীতে। এ কারণেই পরীক্ষার তারিখ পেছানো হয়েছে।
এটা অযৌক্তিক নয়, দেশ স্বাধীনের পর থেকে সরকারি স্ব স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছিল কওমি মাদ্রাসা। অবশেষে বর্তমান সরকার তাদের সে দাবি পূরণ করেছে। কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সমাবেশ করতেই পারে। তাই বলে এতো বড় একটা পাবলিক পরীক্ষা হঠাৎ পিছিয়ে দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেখানে আগেই ঘোষণা দিয়েছিল যেহেতু ওই দিন সমাবেশ আছে সেদিন যেন পরীক্ষার্থীরা একটু সময় নিয়েই বাসা থেকে বের হয়। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি পারত না। বিকল্প পথে পরীক্ষার্থীদের পৌছে দেওয়া ব্যবস্থা করতে। কিন্তু সে আস্থাটা আর রাখা হলো কই। তার আগে পরীক্ষাই পিছিয়ে দিল বোর্ড।
অনেকে মনে করছেন, সমাবেশে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী প্রধান অতিথি। পরীক্ষা পেছানোর জন্য সেটাও কারণ হতে পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন পরীক্ষা পেছাতে? প্রধানমন্ত্রী যদি না বলে থাকেন তবে এমন সিদ্ধান্ত যুক্তিসঙ্গত নয়। তিনি বহুবার বলেছেন ও প্রমাণ দিয়েছেন, এ সরকার শিক্ষাবান্ধব। তবে কেন আগবাড়িয়ে সংশ্লিষ্টদের এমন কাণ্ড। প্রধানমন্ত্রী অনেকবার বলেছেন, আমাকে অধিক নিরাপত্তা দিতে গিয়ে জনগণ থেকে দূরে নিয়ে যাবেন না। বাস্তবে কী তেমটাই করা হচ্ছে না?
তবে এমন কারণে পরীক্ষা পেছানো যেন আবার রীতিতে পরিণত না হয়। শিক্ষার অগ্রাধিকারেই তো গড়ে উঠবে মেধার বাংলাদেশ।
লেখক : এমএস আজীম, সাংবাদিক
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড