• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৪০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কেমন আছেন কুবি শিক্ষার্থী ইরফান উল্লাহ?

  আনিসুর রহমান, কুবি:

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:৩৩
দুর্ঘটনা

দুর্ঘটনা একটি হাসিখুশি জীবনকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। একটি পরিবারকে কে ঠেলে দেয় অন্ধকারে। চিকিৎসা ব্যয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে স্বাবলম্বী মানুষ হয়ে যায় অসহায়। এমনি একজন ইরফান উল্ল্যাহ। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার লনুয়া ইউনিয়নের পূর্ব গাটিয়া ডেঙ্গা গ্রামে। পড়াশোনা করতেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে ২০১৯-২০ সেশনে। ক্লাস, টিউশন ও আড্ডায় হাসিখুশি চলছিলো জীবন। কিন্তু গত গত ৯ নভেম্বরের একটি দুর্ঘটনায় পাল্টে যায় সব কিছু।

প্রতিদিনের মতো সাইকেলে করে টিউশন থেকে ফিরছিলেন ক্যাম্পাসে। কিন্তু ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে রাস্তা পার হওয়ার সময় তিশা পরিবহনের ঢাকা মেট্রো ব-১৫-১৬৪৮ নম্বরের একটি যাত্রীবাহী বাসের চাপায় মারাত্মক ভাবে আহত হন ইরফান উল্লাহ। হাত, বুক ও মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় নেয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। প্রথমে কুমিল্লা মেডিক্যাল পরে ঢাকা মেডিক্যাল এবং সর্বশেষ কল্যাণপুর ইবনে সিনায় স্থানান্তর করা হয়। পনেরো দিনের অন্তর অন্তর বড় দুটি অপারেশন করতে হয়। যাতে ব্যয় হয় বহু টাকা।

বর্তমানে ঢাকার কল্যাণপুর ইবনে সিনা প্রাইভেট হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দীর্ঘ ৩ মাস আইসিইউতে থাকার পর গত ১০ ফেব্রুয়ারি কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তার অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকের চাইতে দ্রুত। মাথায় আঘাতের কারণে চিনতে পারছেন না কাউকে। শরীরের অন্যান্য স্থানের অবস্থা নাজুক। পচে যাওয়া ক্ষতস্থান এখনো শুকায়নি। এভাবে কত দিন থাকবেন তা অজানা।

আচ্ছা, গল্পটা কি অন্যরকম হতে পারতো না? যদি দুর্ঘটনাটি না হত! ইরফানের নিয়মিত ক্লাসে আসা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলা কিংবা বাবা-মায়ের মুখে হাসির কারণ হতো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সে আজ জিন্দা লাশ হয়ে তিন মাস বিছানায় শুয়ে। এখনো অজানা আর কতদিন জিন্দা লাশ হয়ে থাকবে। সকলের কাছ থেকে সে আজ বিচ্ছিন্ন। যাদের সাথে নিয়মিত উঠা-বসা, তাদের থেকে আজ বহু বহু দূরে।

এই দুর্ঘটনা কি শুধু ইরফানের জীবনকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছে? না। ভাবুনতো তার পরিবারের অবস্থা। তার পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মুখ মলিন। এছাড়াও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেই বিষয় তা হলো ইরফানের চিকিৎসার খরচ বহন করা সামর্থ্য। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে লক্ষ লক্ষ ব্যয় করার সামর্থ্য যে নেই তা দৃঢ় সত্য। আজ ইরফানের পরিবারের অবস্থা খুবই করুণ।

পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, আইসিউ বিল ব্যাতীত ইরফানের চিকিৎসা বাবদ এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৩ লক্ষ টাকা। আইসিইউ বিল এসেছে প্রায় ২৭ লক্ষ টাকা। যার উল্লেখযোগ্য অংশ এখনো অপরিশোধিত। এছাড়াও প্রতিদিন ঔষধে ব্যয় হচ্ছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। বর্তমানে ইরফানের পরিবার প্রায় নিঃস্ব । "প্রশাসন, ডিপার্টমেন্ট, সংগঠন আমাদের যেমন সাহায্য করেছে তা দিয়ে চিকিৎসার সামান্য কাজ শেষ হয়েছে। এখনও সাতাশ লক্ষ টাকা বাকি রয়েছে। সামনে কত টাকা লাগে জানি না। আমরা এখন নিঃস্ব। আপনারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন" বলছিলেন ইরফানের বড় ভাই মুহিবুল্লাহ।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মো: জিল্লুর রহমান বলেন, "হাসিখুশি থাকা ছেলেটির আজ করুণ। তার পরিবারও দেউলিয়া হয়ে যাওয়া অবস্থা। কিন্তু দু:খের বিষয় আজ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কর্তৃক তেমন কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যায় নাই। ইরফানের নিজ বিভাগের অল্প কিছু শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী মিলে প্রথমে নভেম্বর মাসে এবং আজ দ্বিতীয়বারের মত বিভাগের ব্যাচভিত্তিক কিছু টাকা কালেকশনের চেষ্টা করে। কিন্তু সেই কালেকশনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও তেমন কোনো আশানুরূপ সাপোর্ট পাওয়া যায় নাই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কালেকশন এর যে অর্থ সেটা ইরফানের ঔষধ ও আইসিইউ বাবদ খরচের ধারে কাছেও যাওয়া সম্ভব হয় নাই।"

তিনি আরো বলেন, "প্রথম অবস্থায় ভিসি স্যার, প্রক্টর স্যার এর শরণাপন্ন হলে ভিসি স্যার নিজে আইনানুগ ব্যবস্থা সহ অর্থের ব্যবস্থা করে দিবে আশ্বাস দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগকে অর্থ সহায়তায় নিরুৎসাহিত করে। যে কারণে বিভাগীয় পর্যায় থেকে তেমন কোনো সাপোর্ট পাওয়া যায় নাই। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে তার সবচেয়ে বড় সাপোর্টই হওয়া দরকার প্রশাসনিক সাপোর্ট সেখানে প্রশাসনের এই ধরনের কর্মকান্ড কারোরই কাম্য নয়। তাই আমি চাই প্রশাসন কোনো একটি উদ্যোগ গ্রহণ করুক। বিভাগভিত্তিক ফান্ড থেকে শুরু করে প্রশাসনিক নিজস্ব ফান্ড সকল সোর্স থেকে অর্থের সহায়তায় প্রশাসন যেন নির্দেশনা দেয়। শিক্ষার্থীরাও যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসুক। সর্বোচ্চ টুকু সাপোর্ট করুক।"

ইরফানের সার্বিক বিষয়ে কথা বলেছিলাম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ দপ্তরের প্রধান মো. হাবিবুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, "বিষয়টি নিয়ে আমরা অবগত আছি। ইরফান আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সে গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করেছে এবং দীর্ঘ দিন হসপিটালে আছে। তার চিকিৎসায় বহু টাকা ব্যয় হচ্ছে যা তার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। যা খুবই দুঃখজনক। সে আমাদের শিক্ষার্থী বলে নয়, মানবতার জন্য হলেও আমাদের তা পাশে এসে দাঁড়ানো উচিত। আমরা তার চিকিৎসার জন্য চাঁদা তোলার ব্যবস্থা করতে পারি। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সবার পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া দরকার।"

তিনি আরও বলেন, "আমি ভিসি স্যারকে বলবো যাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইরফানের চিকিৎসার জন্য একটি অনুদানের ব্যবস্থা করে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করে বাস মালিকের কাছ থেকে জবাবদিহিতা মূলক ক্ষতিপূরণ গ্রহন করা প্রয়োজন। আমরা চাই ইরফান পুনরায় সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসুক। তাই আমাদের সবাইকে তার ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।"

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড