• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জুতা পালিশ করতে দেরি হওয়ায় দোকান মালিককে পেটালেন ২ ছাত্রলীগ নেতা

  জাবি প্রতিনিধি

০৭ মে ২০২৩, ১২:৩৯
জাবি

জুতা পালিশ করতে দেরি হওয়ায় সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) সংলগ্ন ইসলামনগর এলাকার এক ব্যবসায়ী ও দোকানের কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগে জাবি শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন দোকান মালিক রোমেন রায়হান।

শুক্রবার (৫ মে) সন্ধ্যা সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন ইসলামনগর এলাকার 'মেস্মেরাইজ' নামের একটি দোকানে হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতারা।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাব্বির হোসেন নাহিদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান জয়। নাহিদ নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শহীদ রফিক জব্বার হলের আবাসিক ছাত্র।

মেহেদী হাসান জয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও মওলানা ভাসানী হলের আবাসিক ছাত্র। তারা উভয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী।

ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসলামনগর বাজারে জুতা কিনতে দোকানে যান সাব্বির ও মেহেদী। জুতা কেনার পর পালিশ করতে দেরি করেন কর্মচারী মিরাজুল ইসলাম। এতে সাব্বির উত্তেজিত হয়ে যান এবং দ্রুত পালিশ করার জন্য ধমক দিতে থাকেন। একপর্যায়ে ওই কর্মচারীর সঙ্গে সাব্বিরের কথা-কাটাকাটি হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাব্বির ওই কর্মচারীকে মারতে মারতে দোকানের ভেতর থেকে বাইরের রাস্তায় নিয়ে আসেন। রাস্তায় কয়েক দফায় মারতে থাকেন। একপর্যায়ে ওই কর্মচারীকে কান ধরিয়ে ওঠবস করানো এবং পা ধরে মাপ চাওয়ানো হয়। এ সময় দোকানমালিকের বড় ভাই সাবেক বুয়েট শিক্ষার্থী নেওয়াজ থামানোর চেষ্টা করলে তাকে থাপ্পড় মারেন মেহেদী হাসান।’

প্রত্যক্ষদর্শী মাসুদ খান বলেন, ‘জুতা পালিশ করতে দেরি হওয়ায় আমাদের সামনে কর্মচারীকে মারধর শুরু করে। সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে সব আছে। আমরা অশিক্ষিত মানুষেরা ভুল করতে পারি। তাই বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে এভাবে মারবে, এটা মেনে নিতে পারছি না।’

ভুক্তভোগী কর্মচারী মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘জুতা কেনার পর আমাদের দোকানের নিয়ম অনুযায়ী আমি পালিশ করতে থাকি। তারা তাড়াহুড়ো শুরু করলে আমি একটু সময় লাগবে বলে জানাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা আমাকে বেধড়ক কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। আমি কান ধরে ওঠবস এবং পা ধরে মাফ চাওয়ার পরও আমাকে মারতে থাকে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

ইসলামনগর বাজারের ওই দোকানের মালিক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২ ব্যাচের শিক্ষার্থী রোমেন রায়হান। তিনি বলেন, তিনি একটু বাইরে ছিলেন। ঘটনার সময় এসে দেখেন তাঁরা কর্মচারীকে পেটাচ্ছেন। তিনি ক্যাম্পাসের বড় ভাই পরিচয় দেওয়ার পরও তারা মারতে থাকেন। তার বড় ভাইকেও থাপ্পড় দিয়েছেন। এরপর দোকান বন্ধ রাখার জন্য বলে গেছেন। তিনি দোকান খুলতে পারছেন না।

দোকান মালিকের বড় ভাই নেওয়াজ রাসেল বাপ্পি বলেন, মিরাজকে মারধর করতে দেখে আমি কারণ জানতে চাই। এসময় নাহিদ ও জয় দোকানের মধ্যে আমাকে মারধর করে। পরে দোকান থেকে বাইরে বের করে এনে আবারও মারপিট শুরু করে তারা।

জানতে চাইলে সাব্বির হোসেন মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ওই দোকানে জুতা ক্রয় করি ১ হাজার ৩৫০ টাকা দামে। তাঁদের আমরা ১ হাজার ৫০০ টাকা দিই। তাঁরা আমাদের ১৫০ টাকা ফেরত না দিয়ে ৫০ টাকা ফেরত দেন এবং আগে আরও ২০০ টাকা ফেরত দিয়েছে বলে দাবি করেন। আমরা প্রতিবাদ করলে ওই কর্মচারী আমাদের ওপর হামলা করেন।’ ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে মারধর করতে দেখা গেছে উল্লেখ করলে সাব্বির বলেন, ‘আমরা আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করি, এতে ধস্তাধস্তি হয়। কোনো মারামারি হয়নি।’

মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত মেহেদী হাসানও। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের ভাঙতি টাকা ফেরত দেয় নাই। জুতা কেনার পর রসিদ না দিয়ে আমাদের ভোক্তা অধিকার ক্ষুণ্ণ করেছে। আমরা ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ দেব।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

এ ঘটনায় আশুলিয়া থানার উপ–পরিদর্শক (এসআই) সোহেল খন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, তিনি একটি লিখিত অভিযোগের কথা শুনেছেন। সেটা তদন্তের জন্য তাকে বলা হয়েছে। তিনি থানায় গেলে বুঝতে পারবেন, ওটা অভিযোগ নাকি মামলা হয়েছে।

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড