পবিপ্রবি প্রতিনিধি
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আতিকুর রহমানের নেতৃত্বাধীন এক দল গবেষক নারিকেলের নতুন প্রজাতির একটি মাইট (মাকড়) শনাক্ত করেছেন।
গবেষক দল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের (বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, খুলনা ও বাগেরহাট) নারিকেলে খুঁজে পাওয়া এই নতুন প্রজাতির মাইটটির বৈজ্ঞানিক নাম দিয়েছেন Acarus cocosi Mondal, Rahman & Jahan, 2018 (অ্যাকারুয়াস ককসি মণ্ডল, রহমান এন্ড জাহান, ২০১৮).
নারিকেলের নতুন মাইট শনাক্তকরণ ও তার অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে গবেষণা দলের প্রধান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ২০০৪ সালে যশোরে সর্ব প্রথম নারিকেলে বাদামী রঙে শুকিয়ে যাওয়া বা নারিকেলের অসম বৃদ্ধি বা ফেটে যাওয়া লক্ষণ পরিলক্ষিত হলেও ২০০৬ সালে যশোরে আরএআরএস (বারি) সর্ব প্রথম নারিকেলে ইরায়োফাইড মাইটের আক্রমণ শনাক্ত করেন; কিন্তু নারিকেলে এ ধরনের আক্রমণ শুধু কী একটি প্রজাতির ইরায়োফাইড মাইটের আক্রমণে হচ্ছে নাকি ভিন্ন কোনো প্রজাতির উপস্থিতি আছে, তা অনুসন্ধানে আমাদের গবেষক দল পবিপ্রবির রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং সেন্টারের আর্থিক অনুদানে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন এবং নারিকেলের বৃতির নীচে এবং আক্রান্তস্থান থেকে দুইটি প্রজাতির মাইট শনাক্ত করেন, যার একটি বিশ্বে নতুন (acarus cocosi sp. novi. ) অন্যটি বাংলাদেশে নতুন (sancassania berlesi).
দক্ষিণ কোরিয়ার কিয়ংপুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনসেক্ট মলিকুলার ফিজিওলজি ল্যাবের সহযোগিতায় নতুন শনাক্তকৃত মাইট দুটির জিনোম সিকুয়েন্স (আংশিক) সম্পন্ন করে জিন ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে। এ গবেষণার মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে নারিকেলে এ ধরনের আক্রমণ শুধু একটি প্রজাতির ইরায়োফাইড মাইটের আক্রমণে হচ্ছে না বরং ভিন্ন প্রজাতির মাইটেরও উপস্থিতি রয়েছে।
এই গবেষণার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, যেহেতু এই মাইটের মারাত্মক আক্রমণের কারণে নারিকেলের প্রায় ৬০% ফলন এবং ৩৬% শুষ্ক শাঁস কমে যায়। তাই আমাদের গবেষণা দল শুধু প্রজাতি শনাক্তকরণই নয় বরং কীভাবে তার বিস্তার প্রতিরোধ করা যায় তা নিয়েও কাজ করছেন।"
ভবিষ্যতে আর নতুন কোন গবেষণার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কতগুলো ইনসেক্টের প্রজাতি রয়েছে তার সঠিক কোনো চেকলিস্ট নেই। আমার লক্ষ্য হচ্ছে শত আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অর্ডারের ইনসেক্টের চেকলিস্ট তৈরিসহ তাদের জিনোমিক সিকুয়েন্স প্রকাশের নিমিত্তে কাজ করা।'
এই গবেষণায় প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আতিকুর রহমানের নেতৃত্বাধীন অন্যান্য গবেষকরা হলেন প্রফেসর ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান, প্রফেসর ড. কিয়ং ইয়ল লী, পিংকী মন্ডল ও পীযূষ কান্তি ঝাঁ।
উল্লেখ্য যে, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান গবেষণার সূচনালগ্ন থেকেই ইনসেক্ট সিস্টেমেটিক্সের উপর কাজ করে আসছেন। ইতিমধ্যে তিনি বিশ্বে ২৬ টি নতুন প্রজাতির এবং ৪০ টি দেশে প্রথমবারের মতো সনাক্তকৃত প্লান্টহোপার ও লিফহোপারের প্রজাতি শনাক্ত করেন যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
শনাক্তকৃত অধিকাংশই কোরিয়ান প্লান্ট হোপরের প্রজাতি। গত পাঁচ বছর ধরে তিনি তার পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইনসেক্টের টেক্সোনমিক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও আমের দুটি নতুন প্রজাতির লিফহোপারের জিনোম সিকুয়েনসিং এর কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, তা খুব শীঘ্রই কোন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হবে বলে তিনি জানান।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড