• মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৯ আশ্বিন ১৪৩০  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন

সর্বশেষ :

sonargao

জাতীয় পতাকা অবমাননা মামলা থেকে অব্যহতি বেরোবির ১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তার

  বেরোবি প্রতিনিধি:

১১ আগস্ট ২০২২, ১১:৪৩
জাতীয় পতাকা

জাতীয় পতাকা অবমাননা মামলা থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এর ১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে অব্যহতি দিয়েছেন রংপুর জজকোর্ট। জাতীয় পতাকা অবমাননা করার মতো কোনো উপাদান না থাকায় তাদের অব্যহতি দিয়েছে জজকোর্ট।

গত ২৫ জুলাই রংপুরের অতিরিক্ত জেলা জজ মোঃ তারিখ হোসেন ওই শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গঠিত চার্জ বাতিল করে মামলা হতে তাদের অব্যহতি প্রদান করেন। সোমবার প্রকাশিত উক্ত রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি থেকে এ সকল তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা যায়, ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর এর কিছু সংখ্যক শিক্ষক-কর্মকর্তা জাতীয় পতাকাসদৃশ ব্যানার হাতে স্বাধীনতা স্মারক চত্ত্বরে ছবি তোলেন। ছবিগুলো গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মাহামুদুল হক তার ফেসবুকে পোস্ট করে ভাইরাল করলে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে রংপুর মহানগরীর তাজহাট থানায় মাহামুদুল হক, গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ মশিউর রহমান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম জিডি করেন।

এরপর রংপুর মেন্ট্রোপলিটন আদালত-৩ এটি এনজিআর মামলা হিসেবে রেকর্ড করে এবং গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে বিভিন্ন বিভাগের ১৮ জন শিক্ষক ও এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন।

অভিযুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তারা হলেন, গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আর এম হাফিজুর রহমান,অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ মোরশেদ হোসেন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মণ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান ও প্রভাষক মোঃ রহমতুল্লাহ, ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ নুর আলম সিদ্দিক, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ ছদরুল ইসলাম সরকার, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রদীপ কুমার সরকার, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ কামরুজ্জামান ও প্রভাষক আবু সায়েদ, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ শাহজামান, ড. মোঃ রশীদুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক চালর্স ডারউইন ও কর্মকর্তা শুভংকর চন্দ্র সরকার, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ মাসুদ-উল-হাসান, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত বিভাগের প্রভাষক সোহাত আলী, রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মোস্তফা কাইউম শারাফাত, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাম প্রসাদ বর্মণ এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক প্রভাষক মোঃ শামীম হোসেন।

বিচারিক আদালতের গঠন করা উক্ত চার্জকে চ্যালেঞ্জ করে অভিযুক্ত শিক্ষক- কর্মকর্তার পক্ষ থেকে রংপুর জজকোর্টে রিভিশন মামলা দায়ের করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্র উক্ত ফৌজাদারী মামলার বাদী হলেও বেরোবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মাহামুদুল হক এবং গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মশিউর রহমান মামলায় পক্ষ হওয়ার জন্য আবেদন করেন। রংপুর জেলা জজ তা দের আবেদন নামঞ্জুর করলে তারা এ বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন এবং সেখানেও পরপর দুটি বেঞ্চ তাদের আবেদন না মঞ্জুর করে। এর ফলে দীর্ঘদিন রিভিশন মামলার শুনানী ব্যহত হয়।

এরপর গত ২৫ জুলাই দীর্ঘ শুনানী শেষে বিচারিক আদালতের চার্জশীট বাতিল করে মামলা থেকে আসামীদের অব্যহতি দিয়েছেন রংপুর জজকোর্টের ২য় আদালতের জজ মোঃ তারিখ হোসেন।

রায়ে জজ উল্লেখ করেন, মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আসামীগণ ইচ্ছাকৃতভাবে জাতীয় পতাকা অবমাননা করেননি। তারা ব্যানার আকারে জাতীয় পতাকার অনুরূপ ব্যানার ব্যবহার করেছিলেন। তারা সরাসরি বিকৃত করে জাতীয় পতাকা কোন অফিস বা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করেন নি।

এ ছাড়াও আসামীগণকে স্বাধীনতাবিরোধী দলের সমর্থক মর্মে জিডিতে উল্লেখ করা হলেও প্রসিকিউশন রিপোর্টে তা পাওয়া যায় না। বরং আসামীদের সকলেই সরকার দলীয় (স্বাধীনতার পক্ষের) শিক্ষক দলের সমর্থক। কাজেই তারা ইচ্ছাকৃতভাবে জাতীয় পতাকা অবমাননা করেছেন বলে বিশ্বাস করা যায় না।

এ ছাড়াও আসামীগণের পেসবুক ফ্রেন্ডেদেরও অভিযোগের প্রেক্ষিতে তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন যে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে জাতীয় পতাকা অবমাননা করেননি।

বিচারক রায়ে আরও বলেন, ফৌজদারী অপরাধের প্রাথমিক ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে মিনস রিয়া (আসল উদ্দেশ্য), কি‘ আসামীদের ফেসবুক স্ট্যাটাস ও পরবর্তী আচরণ হতে প্রতীয়মান হয় যে, জাতীয় পতাকা অবমাননা করার ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ে তারা জাতীয় পতাকা নয় বরং ব্যানারে জাতীয় পতাকার অনুরূপ আকৃতি ব্যবহার করেছিলেন।

রংপুরের অতিরিক্ত জেলা জজ মামলার পুর্বাপর আদেশ পর্যালোচনা করে আসামীপক্ষের আইনজীবীর উদ্বৃতি দিয়ে আরও জানান, বাংলাদেশের নোংরা শিক্ষক রাজনীতির কুশীলব হিসেবে জনাব মাহামুদুল হক থানা পুলিশ ও বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলকে প্রভাবিত করে আসামীগণকে পদোন্নতি হতে বঞ্চিত করার অসৎ অভিপ্রায়ে অতি উৎসাহী হয়ে আসামীগণকে হয়রানি করার জন্য মাহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে মামলা করেছিলেন এবং অত্র মামলায় ব্যক্তিগত আইনজীবী নিয়োগ করে রিভিশনকারীদের রিভিশন মামলা মঞ্জুর না হওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

এ বিষয়ে, আসামীপক্ষের আইনজীবী রংপুর জজকোর্টেও সিনিয়র এডভোকেট জহিরুল হক বলেন, জাতীয় পতাকা অবমাননা করার মতো কোনো উপাদান না থাকায় তাদের অব্যহতি দেয়া হয়েছে। তারা এই রায়ে সন্তুষ্ট।

বেরোবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া বলেন, রায়ের বিষয়ে আমি মাত্র শুনেছি। আইনের প্রতি সকলেই শ্রদ্ধাশীল। এ নিয়ে যদি কোন মন্তব্য করতে হয় তাহলে বলব যে ভবিষ্যতের জন্য হলেও এধরণের কর্মকান্ডে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এতে আমাদের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি জড়িত।

মামলার বাদী অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নই, শুধু আমরা কেন কেউই এই রায়ে সন্তুষ্ট নয়। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় সামনের সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টে যাব।

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড