রাজশাহী প্রতিনিধি
রাজশাহীর প্রাইভেট শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির অধিভুক্তি ও অনুমোদন বাতিল হলেও শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করা হয়েছে। প্রায় দুই বছর আগে মেডিক্যাল কলেজটির শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন বাতিল করে মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ।
রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ও শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করেন। নিবন্ধনও বাতিল করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল। এরপরও পত্রিকায় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে ও নগরীতে ব্যানার ঝুলিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করেছে।
অভিযোগ উঠেছে, ইতোমধ্যে প্রথম বর্ষ এমবিবিএস শ্রেণিতে ৩০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। আরও ২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির বুকিং নিয়েছে।
এ দিকে শিক্ষার্থী ভর্তির খবর পেয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সতর্কতামূলক নোটিশ জারি করেছে। নোটিশে শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজে কোনো শিক্ষার্থীকে ভর্তি না হতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তির কোনো অনুমোদন নেই বলেও নোটিশে বলা হয়েছে। কেউ ভর্তি হলে পরবর্তীকালে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়ও নেবে না রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. আনোয়ারুল কাদের জানিয়েছেন, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে রাজশাহী প্রাইভেট শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী ভর্তির কোনো অনুমোদন নেই। শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা শিক্ষার ন্যূনতম কোনো সুবিধা নেই। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির অধিভুক্তি বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) কোনো অনুমোদন নেই। মন্ত্রণালয়ও শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন আগেই বাতিল করেছে।
এ দিকে সতর্কতামূলক নোটিশে রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, কোনো শিক্ষার্থী যদি এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন বা অভিভাবক এখানে সন্তানকে ভর্তি করান, সে ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা হলে বিএমডিসি, মন্ত্রণালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করবে না।
অন্য দিকে নিবন্ধন, অনুমোদন ও অধিভুক্তি ছাড়াই শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ চলতি ২০২১-২২ সেশনে ( নবম-ব্যাচ) ভর্তি শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ২৮ জন বাংলাদেশি ও ২২ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে।
গত ১ আগস্ট ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের নিয়ে কলেজের খড়খড়ি ক্যাম্পাসে অরিয়েন্টেশন করা হয়েছে। রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আরও বলেন, শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাচে ২৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে মাত্র ৯ জন শিক্ষার্থী বিএমডিসির নিবন্ধন পেয়েছেন।
২০২০ সালে শিক্ষার্থী আন্দোলনের পর বাকিদের অন্য কলেজে মাইগ্রেশন করা হয়। তবে নতুন করে শিক্ষার্থীদের ভর্তির বিষয়ে সম্ভাব্য প্রতারণা ঠেকাতে পুলিশকে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজটিতে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়। প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করায় কলেজটি বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন পায়নি। ২০২০ সালে এমবিবিএস পাশ করা চারজন শিক্ষার্থী ইন্টার্নশিপ করতে না পেরে বিপাকে পড়েন।
এ অবস্থায় ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। আন্দোলনের মুখে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে কলেজ খোলা রাখা এবং বিকল্প ব্যবস্থায় অন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এ দিকে ২০২০ সালে ২ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে দুটি চিঠি দেওয়া হয়। একটি চিঠিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখা এবং অন্য চিঠিতে শাহমখদুম মেডিক্যাল কলেজের বিভিন্ন বর্ষে অধ্যয়নরতদের রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অন্য প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে বাকি কোর্স সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা মাইগ্রেশনের সুযোগ পান।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ থেকে শাহ মখদুম কলেজ কর্তৃপক্ষকে অবকাঠামো ও শিক্ষক নিয়োগসহ বেশকিছু শর্ত পূরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ তা পূরণে ব্যর্থ হয়। পরে প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজটি নিবন্ধন অধিভুক্তি ও অনুমোদন বাতিল করা হয়।
অধিভুক্তি বাতিলের পরও শিক্ষার্থী ভর্তি করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান স্বাধীন বলেন, আমাদের আসন সংখ্যা ৫০। এর মধ্যে বিদেশি কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি বুকিং দিয়েছে। তারা ভর্তি হবে। সব মিলে ৩০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরে ভর্তি বন্ধের আদেশের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের যেহেতু হাইকোর্টের রায়ের ভিত্তিতে ভর্তি, আমাদের ওপর স্টে অর্ডার আছে। পাশাপাশি হাইকোর্ট ডিভিশন থেকেও স্টে অর্ডার পাওয়া আছে। তাই আমরা শিক্ষার্থী ভর্তি করছি।
তবে রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ডা. আনোয়ারুল কাদের বলেন, কোনো স্টে নেই। যারা শাহ মখদুমে ভর্তি হবেন তারা নিজ দায়িত্বে হবেন। আমরা কোনো দায় নেব না। কারণ কলেজটির কোনো নিবন্ধন, অধিভুক্তি ও অনুমোদন নেই।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড