• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের ফেরা নিয়ে শিক্ষকদের ভাবনা

  আতিয়া ফাইরুজ ঐশী

১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:৪৩
শিক্ষার্থী
দীর্ঘদিন পর স্কুলে ফিরছে শিক্ষার্থীরা (ছবি : প্রতীকী)

কোভিড-১৯ বা করোনা মহামারির ভয়াবহতার ফলে গত বছরের মার্চ মাস থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে দেশের প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পর পর একাধিকবার খুলে দেয়ার তারিখ ঘোষণা করা হলেও কার্যকর হয়নি কোনোটি। কিন্তু দীর্ঘ সময় পরে সকলের মনে আশার আলো জাগ্রত হয়েছে। দীর্ঘ ১৭ মাসের অধিক সময় যাবত বন্ধ থাকার পর আগামী ১২ই সেপ্টেম্বর দেশের প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক (কলেজ) পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বশরীরে পাঠদান প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে।

দীর্ঘ এ বিরতির অবসানের পরে শিক্ষার্থীদের পুনরায় আগমন কতটা আবেগপ্রবণ-আনন্দদায়ক, কেমন ছিল বন্ধকালীন সময়গুলো ও পুনরায় প্রতিষ্ঠান খোলার পরে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে উপদেশগুলো কীরূপ হওয়া উচিত- এসব বিষয় নিয়ে কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছে দৈনিক অধিকার।

আবেগঘন এক পুনর্মিলনের অপেক্ষায়

মুরাদপুর সমীরণ নেসা হাই স্কুলের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক সোনিয়া কবির বলেন, প্রায় ১৮ মাস আগে যেই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ শিক্ষার্থীদের কলরবে মুখরিত ছিল, বৈশ্বিক এই করোনা মহামারির ফলে তা স্তব্ধ হয়ে যায় যা শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয় পক্ষকেই ভুক্তভোগী করে তোলে। একদিকে মহামারি যেমন আমাদের তটস্থ রেখেছে, অপরদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ না থাকাও ছিল বেদনাদায়ক।

অনলাইন ও এ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে পাঠদান প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও শিক্ষার্থী বলতে তাদের শিক্ষা-কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত মূল যেসব কর্মকাণ্ড, তা পূর্ণাঙ্গরূপে সম্ভব হচ্ছিল না। দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে যাচ্ছে, এতে শিক্ষার্থীরা যেমন প্রতিষ্ঠানে ফিরতে উচ্ছ্বসিত, তাদের সংবর্ধনা জানাতে আমরা তার চেয়েও অধিক প্রফুল্লিত। শ্রেণিকক্ষে স্বশরীরে পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলন সত্যিই খুব আবেগঘন একটি মুহূর্ত, যার অপেক্ষায় আমরা সবাই।

আর যেহেতু বর্তমান পরিস্থিতি ১৮ মাস আগের পরিস্থিতির ন্যায় স্বাভাবিক নয়, তাই কেবল শিক্ষক-শিক্ষার্থী নয় বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভেবে প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ডে পূর্বের তুলনায় বেশকিছু পরিবর্তন আনয়ন জরুরি। সেক্ষেত্রে বিদ্যালয় থেকে মাস্ক প্রদান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা রাখা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রাখা, শিক্ষার্থীদের কেউ অসুস্থ থাকলে কিছুদিন ছুটিতে থাকা এবং সর্বশেষে সকল প্রকার স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলাই একান্ত কাম্য।

কষ্টের অবসান ঘটতে যাচ্ছে

স্কুল খোলা নিয়ে কথা হয় মতিঝিলে অবস্থিত আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবা শারমীনের সঙ্গে। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৭ মাসের অধিক সময় পরে শিক্ষার্থীদের সরাসরি পাঠদান করতে পারব, ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে আনন্দের। দীর্ঘদিন ধরে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে না পারাটা একজন শিক্ষক হিসেবে আমার জন্য এবং আমার শিক্ষার্থীদের জন্য পীড়াদায়ক ছিল। এই কষ্টের অবসান ঘটবে এবার। ২০২০ সালের ১৭ এপ্রিল থেকেই আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য ডিস্টেন্স লার্নিং এর ব্যবস্থা করি। প্রথমে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে এবং পরে জুম অ্যাপের মাধ্যমে পাঠদান চলতে থাকে। জুমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করে।

মাউশি কর্তৃক এসাইনমেন্ট প্রদানের আগেই শিক্ষার্থীদের শিখন ফল যাচাই এর জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান করা হবে। এছাড়া শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং প্রতিষ্ঠানের অন্য সকল কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে সরকার প্রণীত নিয়মনীতি এবং বিধি মেনে চলা হবে। সবাই মাস্ক পড়বে, ঘনঘন হাত ধোবে এবং শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। এভাবেই সবাইকে নিউ নরমাল লাইফে অভ্যস্ত হতে হবে।

প্রাণহীন প্রাঙ্গণ প্রাণচঞ্চল হতে যাচ্ছে

মুরাদপুর সমীরণ নেসা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন মনে করেন, দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষা বিষয়ক অনেক কার্যক্রম থেকে শিক্ষার্থীরা একরকম বঞ্চিত হয়েছে। তাদের অনুপস্থিতিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ছিল প্রাণহীন এবং সময়ের বিশাল গণ্ডি পার করে তাদের পুনরায় আগমনে শ্রেণিকক্ষ তার প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে পাবে।

তিনি বলেন, এতদিনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান প্রক্রিয়ায় যতটুকু শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণের লক্ষ্যে আমরা সরকারি নির্দেশনা মেনে সাপ্তাহিক ক্লাস ও ছুটির ফাঁকে বিভিন্ন অতিরিক্ত ক্লাসসহ ইত্যাদি কর্মপরিকল্পনা করেছি। বন্ধকালীন প্রাতিষ্ঠানিক নানা কাজে শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মীদের নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে আসতে হলেও শিক্ষার্থীবিহীন সেই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ছিল খুব বেদনাদায়ক। তাই শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের সকলের স্বাস্থ্য-সুরক্ষার কথা ভেবে আমরা ব্যক্তিগতভাবে একাধিক কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, যার মধ্যে বিদ্যালয়ে প্রবেশকালে হ্যান্ড স্যানিটাইজ করা, বিদ্যালয়ের বাহিরে ও অভ্যন্তরে মাস্ক ব্যবহার এবং প্রয়োজনবোধে প্রতিষ্ঠান থেকেই তাদের মাস্ক সরবরাহ করা হবে। বিদ্যালয় ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে হ্যান্ড ওয়াশের ব্যবস্থা, বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বাহিরের কোনো খাবারের অনুমোদন না দেয়াসহ ইত্যাদি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে সুষ্ঠুভাবে শিক্ষা-কার্যক্রম পুনরায় সচল করতে আমরা খুবই আশাবাদী।

শিক্ষার্থীদের কাছে পাওয়াই বড় বিষয়

ডুকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের (ইংরেজি মাধ্যম) গণিত বিভাগের শিক্ষক তাসনুভা বাধন বলেন, করোনার প্রভাবে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম খুব একটা থেমে থাকেনি কারণ অনলাইনে পাঠদান প্রক্রিয়া চলমান ছিল। একজন শিক্ষক এর সার্থকতা তখন, যখন সে তার সম্পূর্ণটা দিয়ে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে পারে যা অনলাইনে মাধ্যমে সম্ভব হচ্ছিল না। শুনেছি শিক্ষার্থীকে জানার জন্য শিক্ষকের কিছু জাদুকরী শক্তি থাকে কিন্তু বন্ধকালীন সময়গুলোতে এই শক্তির প্রয়োগ যথাযথভাবে হচ্ছিল না, তাই দীর্ঘদিন পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরস্পরকে কাছে পাওয়ার মাধ্যমে প্রথম ধাপ শুরু হতে যাচ্ছে।

প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম কিছুদিন পর্যন্ত প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে অল্প কয়েকদিন শিক্ষার্থীদের কাছে পাওয়া অনেক বড় বিষয়। আর স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয় মাথায় রেখে পরিচ্ছন্নতা, পর্যাপ্ত দূরত্ব মেনে চলা ও মাস্ক ব্যবহার এগুলো নিশ্চিত হয়ে কার্যক্রম শুরু করা এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যেসব অভিভাবক আসবেন, তারাও যেনো ব্যক্তিগতভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে এই প্রত্যাশা।

ওডি/নিমি

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড