খাদিজা খানম ঊর্মি
বিদায়ের হাতছানি দিচ্ছে ১৪২৭ বঙ্গাব্দ। একই সাথে দরজায় কড়া নাড়ছে ১৪২৮। পয়লা বৈশাখ আসলেই তোড়জোড় শুরু হয় একদিনের বাঙালি হওয়ার। লাল-সাদা শাড়ি-পাঞ্জাবিতে নিজেদের সাজাতে ব্যস্ত হয়ে উঠে তরুণ-তরুণীরা। পান্তাভাত আর ইলিশ মাছ একদিনের জন্য বাঙালির পাতে থাকলেও পুরনো অনেক ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে। দেশের আনাচে-কানাচে মেলা বসলেও শহুরে মেলায় থাকে আধুনিকতার ছোঁয়া।
অবশ্য গত বছরের ন্যায় এ বছরও একদিনের বাঙালি সাজা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। করোনা মহামারি কেড়ে নিলো বৈশাখের উৎসব। বাংলা নববর্ষকে ঘিরে তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থী খাদিজা খানম ঊর্মি।
নতুন বছর নিয়ে আসুক আলোর বার্তা
নোবিপ্রবির তরুণ শিক্ষার্থী সাবিহা তাসমীম বলেন, ‘বার মাসে তের পার্বণ’ খ্যাত বাঙালিদের অনেক প্রিয় উৎসবের একটি পয়লা বৈশাখ। হাসি-কান্না ভুলে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা নিজেদের শিকড়কে নতুন রূপে স্মরণ করি। আমার কাছে পয়লা বৈশাখ মানেই সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ, পান্তা-ইলিশ, ভাতের সাথে বিভিন্ন পদের ভর্তা, নাগরদোলায় চড়া, বৈশাখী মেলায় ঘুরতে যাওয়া, নতুন জামা কাপড় পড়া, মেলায় কেনাকাটা ইত্যাদি। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মহামারির কারণে গত বছর আমরা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ নিজ বাসায় প্রিয়জনদের সাথে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করেছি।
এ বছরও আমাদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এখন চাওয়া নতুন বছরে নতুন সূর্যোদয়ের মাধ্যমে পুরো পৃথিবী অন্ধকারমুক্ত হোক। আলোর বার্তা নিয়ে আসুক বাংলা নববর্ষ। হাসি ফুটুক সবার মুখে।
ঐতিহ্যের সঙ্গী হোক বৈশাখ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপের মতে, পয়লা বৈশাখ’ শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে আসে বৈশাখী মেলার বর্ণিল আয়োজন, বিভিন্ন স্বাদের খাবার-দাবার এবং উৎসবমুখর একটি দিন। বৈশাখ মানেই পান্তাভাত ও ইলিশ ভাজা, মেলায় ঘুরতে যাওয়া। আর হালখাতার প্রচলনতো আছেই। বাঙালির নববর্ষ উদযাপন পুরো দেশজুড়ে হয়ে থাকে। নেই কোনো ধর্মীয় ভেদাভেদ। তবে বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের কাছে বৈশাখ মানেই নতুন কাপড় কেনা, হোটেল বা রেস্টুরেন্টে খাবারের পরিকল্পনা করা।
আজকাল আর সেই পুরনো ঐতিহ্যের বিষয়গুলো তেমন চোখে পড়ে না। ঐতিহ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে যদি নববর্ষ পালন করা হয় তবে তা অনেক বেশি অর্থবহ ও আনন্দদায়ক হবে। পহেলা বৈশাখ সবার মাঝে নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করুক আর তরুণ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা এটিকে ধারণ করুক- এবারের বাংলা নববর্ষে এমনটাই প্রত্যাশা।
বাঙালি চেতনা ধারণ করি বছরের প্রতিটি দিনে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তরুণ শিক্ষার্থী মোছা. নুসরাত জাহানের ভাষায়, বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মের কাছে বৈশাখ মানে শুধুমাত্র বিশেষ একটি দিন। একটি সরকারি ছুটির দিন। এই একটি দিনেই নিজেকে বাঙালি হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করি আমরা। পয়লা বৈশাখ এখন লাল-সাদা শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরিধানের একটি বিশেষ দিবসে পরিণত হয়েছে। অথচ বছরের অন্যান্য দিনগুলোতে তরুণ প্রজন্ম বেমালুম ভুলে যায় যে আমরা বাঙালি। বাঙালি সংস্কৃতি পালনে হীনম্মন্যতায় ভুগি। এমনকি বাংলা তারিখটা পর্যন্ত বলতে পারি না।
আরও পড়ুন : এসএসসির ফরম পূরণ : বাড়তি অর্থ নিলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ
তিনি বলেন, বাঙালির চিরায়ত রীতিনীতি সবসময় পালন করা এবং পরিপূর্ণ বাঙালি সত্ত্বাকে ধারণ করার মাঝেই বৈশাখ উদযাপনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত। শুধু একটি দিনে নয়, বছরের প্রতিটি দিনেই সবাই ধারণ করুক বাঙালি চেতনা- এটাই প্রত্যাশা।
ওডি/আইএইচএন
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড