নোবিপ্রবি প্রতিনিধি
মাছ ভাজা, মুড়িঘণ্টো কিংবা ছোট মাছের চড়চড়ি সবই ছিল বাঙালির নিত্য আহার। তবে ভোজন রসিক বাঙালির পাতে এবার যোগ হলো পুষ্টিমান সমৃদ্ধ মাছের পাউডার।
সম্প্রতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তৈরি করেছেন উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ মাছের পাউডার। খাদ্য নিরাপত্তার সকল মানদণ্ড বজায় রেখে পাউডারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের ল্যাবে তৈরি করা হয়েছে।
এরই মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বহুল ব্যবহৃত তরকারি যেমন- ডাল, আলু, কচু শাক, লাল শাক, বেগুন, শিম, লাউ, চাল কুমড়া, ফুলকপি, মুলা, শিমের বিচি ও ভর্তার মতো খাবারে ফিশ পাউডার রান্নায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
গত ১৬ সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের তিনটি অঞ্চল লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি ও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ১২০টি পরিবারের প্রায় ৬ শতাধিক সদস্যদের মধ্যে সাপ্তাহিক জনপ্রতি ৪০ গ্রাম হারে এই পাউডার বিতরণ করা হয়। নারীর ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রতিটি বাড়ির নারীরা বিশেষ প্রনোদনা পেয়েছেন। গবেষণার প্রয়োজনে ২৪০ পরিবারের কিশোরী মেয়েদের রক্তের নমুনায় আয়রন, জিংক, ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। যা ১৮ সপ্তাহ পর আগামী মার্চে পুনঃনমুনায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।
এ দিকে, শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) লক্ষ্মীপুরের চরআলেকজান্ডার দিনব্যাপী মাঠ দিবস ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সুবিধাভোগী ৪০টি পরিবারের সদস্যরা ও স্থানীয়রা অংশগ্রহণ করেন।
সভায় নোবিপ্রবি বিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মো. হানিফের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. দিদার-উল-আলম। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. ফারুক উদ্দিন।
অনুষ্ঠানের মূল আলোচনায় ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পরিচালক (পুষ্টি) ড. মো. মনিরুল ইসলাম। এছাড়া অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন রামগতি পৌরসভার মেয়র মেজবাহ উদ্দিন, নোয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল মোতালেব, নোবিপ্রবির বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান-সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।
সভায় নোবিপ্রবি উপাচার্য বলেন, নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সাফল্য অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি এই গবেষণা কার্যক্রমকে আরও বেগবান করার পাশাপাশি জনগণের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি প্রফেসর ড. ফারুক উদ্দিন বলেন, পুষ্টিমান সমৃদ্ধ মাছের পাউডার অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়ক হবে। এটি সস্তা ও সহজে সংরক্ষণ উপযোগী বিধায় রোহিঙ্গাদের মতো আর্তপীড়িত মানুষকে খাদ্য সাহায্য হিসেবেও দেওয়া যেতে পারে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পরিচালক (পুষ্টি) ড. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ফিশ পাউডার ব্যবহারের যে জনপ্রিয়তা আজকে আমরা লক্ষ্য করলাম তা আমাকে আশাবাদী করে তুলেছে। আগামী দিনে প্রজন্মের পুষ্টি চাহিদা রোধ ও উন্নত জাতি গঠনে মাছের তৈরি পুষ্টি পাউডার অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি।
আরও পড়ুন : চুয়েট শিক্ষকের আত্মহত্যা
এ দিকে, প্রকল্পের গবেষণা সহযোগী আবদুল আজিজ ও সাইদুজ্জামান সাব্বির জানান, আমরা অংশগ্রহণকারী পরিবারের সমূহের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করেছি যা সত্যিই আশাব্যঞ্জক। এ সময় প্রধান গবেষক ড. আবদুল্লাহ-আল মামুন ফিশ পাউডার স্থায়িত্বশীল ব্যবহারের আশাবাদী এবং সংশ্লিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করেন। অনুষ্ঠানে ৪০ টি পরিবারের নারী ও কিশোরীরা ফিশ পাউডার দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবার ও খাবার তৈরি প্রযুক্তি প্রদর্শন করেন।
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড