কুবি প্রতিনিধি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) পাশে অবস্থিত অনিয়ন্ত্রিত পার্ক, পিকনিক স্পট, এবং দর্শনার্থীদের বহন করা বাসের উচ্চ শব্দে বাদ্য বাজানোয় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে গড়ে ওঠা ম্যাজিক প্যারাডাইজ পার্ক, ডায়নোসর পার্ক, ব্লু ওয়াটার পার্কে নিয়মিত দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। এতে পার্ক কর্তৃপক্ষ বিনোদনের জন্য মাত্রাতিরিক্ত শব্দে গান বাজান। তবে এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিলেও নিয়মিত তদারকির অভাবে ফের অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলে।
করোনাকালীন দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ ছিল। তবে সম্প্রতি সরকারি বিধি অনুযায়ী পরীক্ষাগুলো নেওয়া শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পরীক্ষা চলাকালীন এমনকি মধ্যরাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে মাইকে গান বাজায় আশপাশে গড়ে ওঠা এ সমস্ত পার্কগুলো। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাসেল মিঞা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করে বলেন, ‘ম্যাজিক প্যারাডাইস, স্বপ্নচূড়া ও ব্লু ওয়াটার পার্কের উচ্চ শব্দ দূষণের মাত্রা যেন দিন দিন বেড়েই চলছে। পরীক্ষার হলে বসেও তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাচ্ছে না। হলের ও আশপাশের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পড়াশোনায় মনোনিবেশ করা যাচ্ছে না। আবার ঠিকঠাক মতো ঘুমানোও যাচ্ছে না। এর আগেও এ বিষয়ে বারবার কথা বলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। এ বিষয়ে পরিবেশ আদালতে মামলা করা এখন সময়ের দাবি।’
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টং বিভাগের স্নাতকোত্তরের এক শিক্ষার্থী শব্দ দূষণে অতিষ্ঠ হয়ে রাত ১০টার দিকে ৯৯৯ এ কল দেন। পরে পুলিশ এসে পাশের একটি মাইক বন্ধ করে দেয়। এছাড়া পরীক্ষা চলাকালীন একই সমস্যার কারণে মনোযোগ ঠিক রাখতে সমস্যা হয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ক্ষমতাবলে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ প্রণয়ন করা হয়। বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
আইনে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশে জেলা প্রশাসক অথবা কর্তৃপক্ষের শব্দের মান বেধে দেওয়ার কথা থাকলেও এ বিষয়ে এ যাবৎকালে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। অপরদিকে বিভিন্ন সময়ে বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসলেও চূড়ান্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তবে বিষয়টি নিয়ে ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্কের স্বত্বাধিকারী মাহবুব আলম বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে সবসময় সতর্ক। তবে পার্কে যারা মিউজিশিয়ান রয়েছে বিভিন্ন সময়ে তাদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়। ভবিষ্যতে এমন সমস্যা আর সৃষ্টি হবে না বলে আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
আরও পড়ুন : জাবি শিক্ষককে স্থায়ীভাবে অপসারণ
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন দৈনিক অধিকারকে বলেন, ‘যে সমস্ত পার্কগুলো সমস্যা সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত আছি। তবে সর্বশেষ তাদের আবার সুযোগ দেওয়া হলো। আমরা চাই তারা ব্যবসা করুক। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সমস্যা সৃষ্টি করবে এমন কোনো বিষয় আমরা মেনে নেব না। আগামীকাল থেকে যদি ফের সমস্যা দেখা যায়, তাহলে আমরা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড