• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

৪২তম বর্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

  আর এম রিফাত

২১ নভেম্বর ২০২০, ০৯:১০
ইবি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) (ছবি : সংগৃহীত)

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। বিশ্ববিদ্যালয়টি এ বছর তার জন্মের চার দশক পেরিয়ে ৪২তম বছরে পা রাখল। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুর নামক স্থানে ১৭৫ একর জমির ওপর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। সবুজে ঘেরা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার ১ ডিসেম্বর, ১৯৭৬ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ১৯৭৭ সালের ২৭ জানুয়ারি অধ্যাপক এম. এ বারীকে সভাপতি করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা কমিটি গঠন করা হয়। পরে ২০ অক্টোবর, ১৯৭৭ সালে কমিটি প্রতিবেদন পেশ করে। এরপর ৩১ মার্চ থেকে ৮ এপ্রিল ১৯৭৭ সালে ওআইসি এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মুসলিম বিশ্বে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশের ভিত্তিতে ২২ নভেম্বর ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

প্রথমদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টি ওআইসি সহযোগিতায় পেলেও পরে বিভিন্ন অভিযোগে সহযোগিতা বন্ধ করে দেয় ওআইসি। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সহযোগিতা করে বাংলাদেশ সরকার। ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে তিনটি বিভাগে আটজন শিক্ষক ও ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে প্রতিষ্ঠার ৪১ বছর পার করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। দীর্ঘ এই ৪১ বছরের পথ চলায় গৌরব উজ্জ্বল দীপ্ত মশাল নিয়ে ছুটে চলছে দেশ ও দেশের বাইরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে ১৭৫ একর ভূমির ওপর ৮টি অনুষদ, ৩৪টি বিভাগ, ১টি ইনস্টিটিউট, ১টি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজে প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থী এবং সাড়ে চার’শ শিক্ষক নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ধর্মতত্ব অনুষদের অধীনে ডিগ্রী প্রদান করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুবিশাল ম্যুরাল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’। ম‌্যুরালের পাদদেশ থেকে ডানে তাকালেই মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘মুক্ত বাংলা’ আর বাঁয়ে সততার স্মারক ‘সততা ফোয়ারা’। পাশেই ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার আর স্বাধীনতাযুদ্ধসহ অন্যান্য শহীদের স্মরণে নির্মিত ‘স্মৃতিসৌধ’।

শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য আটটি হল, চিকিৎসা সেবার জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র, ব্যায়ামাগার, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার রয়েছে। এছাড়াও আবাসিক ও পরিবহন সুবিধা প্রদান করে কর্তৃপক্ষ। তবে চাহিদা অনুযায়ী এসব সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না কর্তৃপক্ষে। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পরিবহন ও আবাসিক সংকট সমাধান হবে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবল ও টেবিল টেনিস খেলার সুবর্ণ সুযোগ।

শিক্ষার্থীদের বিনোদনের জন্য রয়েছে সবুজে ঘেরা ‘ডায়না চত্বর’। ‘ক্যাম্পাসের প্রাণ’ এই চত্বরটিতে শিক্ষার্থীরা আড্ডায় মেতে উঠে। এর পাশেই রয়েছে ঝাল চত্বর, আম চত্বর যা ছাত্র রাজনীতির গোল টেবিল। ক্যাম্পাসের পশ্চিম কিনারে আছে মনোরম ‘মফিজ লেক’। যা ইবির হতিরঝিল নামে পরিচিত। ক্যাম্পাসের এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ যে কারো মন কাড়তে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৩ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ড. এ.এন.এ মমতাজ উদ্দিন চৌধুরী এবং বর্তমানে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম।

শতভাগ আবাসিকতার মহাপরিকল্পনা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘ চার দশক পেরিয়ে গেলেও প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব চুকাতে গেলে প্রত্যাশার পাওনা এখনো বাকি। একসময়ের সেশনজটের আবদ্ধ থাকা বিভাগগুলোতে কিছুটা গতিশীলতা এসেছে। ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে সংস্কৃতির ঝিরিঝিরি হাওয়া। ৫৩৭ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পে ৯টি ১০তলা ভবনসহ ও ১৯টি ভবনের ঊর্ধমুখী সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। যা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে স্বপ্নের অনেকটাই পূর্ণতা পাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এই দিনটি প্রতিবার নানা উৎসব উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারির কারণে এবার সেই আনুষ্ঠানিকতা নেই বল্লেই চলে। তবু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থেমে নেই সেই আনন্দ-উল্লাস। ক্যাম্পাসের লোগো সম্বলিত বিভিন্ন রঙের ফ্রেমে নিজেদের প্রোফাইল ছবি আবদ্ধ করছেন নবীন-প্রাক্তনরা। স্মৃতিচারণ করে অনেকেই প্রকাশ করছেন অনুভূতি, লিখছেন স্ট্যাটাস।

আরও পড়ুন : স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকলে ভাড়া বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলবে না

বিশ্ববিদ্যালয় নীতিনির্ধারকদের কাছে আমরা প্রত্যাশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গুণগত শিক্ষা ও মৌলিক গবেষণাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিবেন। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান আরও বৃদ্ধি করবেন। দলীয় মনোভাবের বাইরে বেরিয়ে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ করবেন। বিভাগগুলো থেকে প্রকাশিত জার্নাল নিয়মিতকরণ, মৌলিক আর্টিকেল প্রকাশ এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবেন। সর্বোপরি, একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জ্ঞানের দিক থেকে নেতৃত্বদানকারী একটি সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের উপহার দিয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মিলন ঘটাবেন।

বিষয়টিতে উপাচার্য ড. শেখ আব্দুস সালাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়টি ধীরে ধীরে শ্রেণী কক্ষ, শিক্ষা ও গবেষণায় আন্তর্জাতিক মার্তৃকতা পাবে। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য মেগা প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ৮০ শতাংশ আবাসন সংকট সমাধান হবে।’

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড