• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নীরব ১৭৫ একর!

  রাকিব রিফাত

২৯ অক্টোবর ২০২০, ১০:৩৪
ইবি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) (ছবি : দৈনিক অধিকার)

‘ফেলে আসা কিছু স্মৃতি, কিছু প্রিয় মুখ, ভালোবাসার আবেশ জড়ানো কিছু চেনা সুখ। কিছু কিছু সম্ভাবনা, আর কিছু কল্পনা, বিস্মৃতির অতলে হারানো কিছু প্রিয় ঠিকানা।’

ক্যাম্পাসের চিরচেনা স্মৃতি স্মরণ করতেই মনে পড়ে গেল কবি অনির্বাণ মিত্র চৌধুরীর ‘হারানো দিনগুলো’ কবিতার এই চারণের কথা। ক্যাম্পাসের সেই পরিচিত দিনগুলো আজ বড় অপরিচিত। ভালবাসায় পরিপূর্ণ দিনগুলো আজ বড্ড অচেনা হয়ে গেছে। এখনো চোখের সামনে ভেসে উঠে সেই গান-বাজনা, উৎসব, আড্ডা ও কোলাহলের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু এসবের লেশমাত্রও নেই এখন। বদলে গেছে সেই চিরচেনা রূপ। ফেলে আসা স্মৃতিগুলো আজ হৃদয়ে নাড়া দিয়ে উঠে বারংবার।

বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রকোপে প্রায় ৭ মাসেরও অধিক সময় ধরে বন্ধ আছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। ফলে জনশূন্য ক্যাম্পাস এক বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। এক সময়ের কোলাহল পূর্ণ পরিবেশে এখন সুনসান নীরবতা। নেই কোনো কোলাহল কিংবা শিক্ষার্থীদের আড্ডা।

এখন আর নেই প্রতিদিনের মতো সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা না খেয়েই ক্লাসে যাওয়ার তাড়া। রুম থেকে বের হয়েই বন্ধুদের সাথে পায়ে হেটে ক্লাস করার দিনগুলোয় আজ নীরবতায় ছায়া। ক্লাস শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় জমিয়ে পরিচিত চত্বরগুলোতে হাঁটার দৃশ্য আর দেখতে পাওয়া যায় না। ক্যাম্পাস যেন শিক্ষার্থী শূন্যতায় যৌবন হারিয়েছে। এমন নীরব ক্যাম্পাস ও হল আগে কেউ কখনোই দেখেনি।

নেই কোন ক্লাসের প্যারা, অ্যাসাইনম্যান্ট, প্রেজেন্টেশন, ক্লাস টেস্ট, সেমিস্টার ফাইনাল। সব যেন আজ নীরবতার ঢেকে গেছে। কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে নেই কোন শিক্ষামূলক সেমিনারের আয়োজন। লাইব্রেরিতে বই পড়ার সময়গুলোও নেই। একে অপরের হলগুলোর চিত্রেও নেই কোনো ভিন্নতা। সবই নিস্তব্ধ হয়ে আছে।

হলের ডাইনিংয়ে সিরিয়াল ভঙ্গ করে খাবার খাওয়া, বিকেলে বই, গাছের পাতা, পাথর বা এক টুকরো কাগজ দিয়ে বাসের সিট ধরার প্রতিযোগিতা, গানের সুরে বাসের আড্ডার দৃশ্য, এসব কথা ভাবতেই ফিরে যেতে ইচ্ছে হয় প্রিয় ক্যাম্পাসে। আড্ডায় গানে মেতে উঠা বাসগুলো যেন নীরবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। ঘরবন্দি থেকে এখন ক্যাম্পাস ফেরার অপেক্ষার প্রহরই গুনছি।

বিকেল হলে ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস বল, বাস্কেটবল, ভলিবল খেলার মুহূর্তগুলো আজ মানসপটে ভেসে উঠে। এখন আর শহীদ মিনার, স্মৃতি শোধ, মুক্তবাংলা, ডায়না চত্বর, ক্যাফেটেরিয়ার বসে আড্ডা দেওয়া হয়না। প্রেমিক-প্রেমিকারা একে অপরের হাত ধরে মফিজ লেক, ডায়না চত্বর, আমবাগান, পশ্চিম পাড়ায় হেটে বেড়ায় না। সন্ধ্যা হলে প্রেমিকাকে হলে পৌঁছিয়ে দেওয়া, প্রেম বঞ্চিতদের নেই বঞ্চিত চত্বরে বসে আড্ডা দেওয়ার দৃশ্য, দাবি আদায়ে নেই তোড়জোড়। ক্যাম্পাস যেন আজ প্রাণ ছাড়া নিথর দেহ।

আরও পড়ুন : স্মৃতির পাতায় ক্যাম্পাসের শীতের আড্ডা

শিক্ষার্থীদের কর্মব্যস্ততা শেষে জিয়া মোড়ে গরীব চাচার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে শুরু হয় জীবনের গল্প। সফলতা-ব্যর্থতা, পাওয়া না পাওয়ার গল্প, গান বাজনা, তর্ক-বিতর্কে জমে উঠা। মোড়ের আশেপাশে দোকানগুলো পড়ে আছে নিঃশব্দে। এরকম হাজারো স্মৃতির পাতায় জমে আছে ভালবাসার সেই ১৭৫ একর। যেখানের মায়া মমতা বারবার মনে পড়ে যায়। আবার কবে আসবে সে সময়?

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড