রাকিবুল হাসান তামিম, ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি
দেশের বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অনেক প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষার্থীর সময় কাটে অন্য দশজন শিক্ষার্থীর থেকে একটু অন্যরকমভাবেই। নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা, ল্যাব, এ্যাসাইনমেন্ট, টিউশনি আর ব্যক্তিগত কাজে দিন শেষে অনেকেই যখন ক্লান্ত তখনো জীর্ণতা আর ক্লান্তি স্পর্শ করে না কিছু স্বপ্নবাজ তরুণ শিক্ষার্থীদের। ওরা ক্যাম্পাসের খবরের ফেরিওয়ালা যারা ‘ক্যাম্পাস সাংবাদিক’ বা ‘ক্যাম্পাস প্রতিনিধি’ হিসেবেই পরিচিত। ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া হাসি-আনন্দ, দুঃখ-বেদনা, সমস্যা-সম্ভাবনা সহ বিভিন্ন ঘটনার প্রবাহ দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরাতেই যেন আনন্দের পরশ খুঁজে নেন তারা।
ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের সরব পদচারণা এখন দেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানেই। ইতিহাস ঐতিহ্যের বিদ্যাপীঠ ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজেও দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রায় শতাধিক প্রতিনিধি কাজ করছেন ক্যাম্পাস সাংবাদিক হিসেবে। যারা প্রতিনিয়তই ক্যাম্পাসের ঘটে যাওয়া সব খবর তুলে ধরেছেন খবরের পাতায়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিটা অতীতের চেয়ে ঢের ভিন্ন। করোনার ভয়াল সংক্রমণ রোধে গত প্রায় ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ক্যাম্পাস। যেখানে প্রতিনিয়ত ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের সময় কাটতো বিভিন্ন সংবাদ সংগ্রহে ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে সেখানে বর্তমান করোনাকালীন বন্ধে অবসর সময় কাটাচ্ছেন তারা। কেমন কাটছে সেসব ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের সময়?
করোনাকালীন সংকটময় মুহূর্তে ক্যাম্পাসে না থেকেও কিভাবে কাজ করছেন তারা? এমন প্রশ্ন ছিলো ঢাকা কলেজের বিভিন্ন গণমাধ্যমের ক্যাম্পাস প্রতিনিধিদের কাছে। সেসব উদ্যমী তরুণ সাংবাদিক ক্যাম্পাস প্রতিনিধিদের ভাবনাগুলো জানাচ্ছেন দৈনিক অধিকার’র ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি — মোঃ রাকিবুল হাসান তামিম।
নাসরুল্লাহ শাকুরি, ক্যাম্পাস প্রতিনিধি : দৈনিক ভোরের কাগজ
একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিকের সর্বদা বেশ ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। ক্লাস,পরীক্ষার পাশাপাশি তাকে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয় সংবাদ সংগ্রহের কাজে। প্রশাসনিক ভবন থেকে ক্যাম্পাসের অলিগলি সর্বত্রই তাকে বিচরণ করতে হয় পেশাগত দায়িত্ব পালনের নিমিত্তে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি থাকলেও যেন একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিকের কোনো ছুটি নেই। ঈদ, পূজো থেকে শুরু করে সরকারি ছুটির সময়ও তাকে ক্যাম্পাসের সার্বক্ষণিক সব বিষয়ের খোঁজ খবর রাখতে হয়। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমস্যা, ছাত্ররাজনীতির হালচাল সবকিছু তার নখদর্পণে থাকতে হয়।
কিন্তু মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকায় আমাদের সেই ব্যস্ততায় কিছুটা ভাটা পড়েছে নিশ্চয়ই!
কিন্তু তাই বলে পেশাগত দায়িত্ব থেকে পালিয়ে বেড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তাই বাড়িতে বসেই ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্ট কোথায় কী ঘটছে, কী হচ্ছে তার খোঁজ খবর রাখছি এবং বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে সংবাদ অফিসে পাঠাচ্ছি। বাড়িতে এসেও যেন দায়িত্বের কমতি নেই।
তার পাশাপাশি অবসর সময়ে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বইপুস্তক অধ্যয়ন করছি। নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অনলাইনে বিভিন্ন কোর্সের মাধ্যমে নতুন কিছু জানা এবং শেখার চর্চা অব্যাহত রেখেছি। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বিষয়ের উপর লেখালেখিরও চেষ্টা করছি। অনলাইনে বন্ধু-বান্ধব, ছাত্র, শিক্ষক, শুভাকাঙ্ক্ষী ও শুভানুধ্যায়ী সবার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু এত কিছুর পরও ক্যাম্পাসের সেই ব্যস্ততাময় দিনগুলোকে খুব মিস করছি। আশা করি খুব দ্রুতই আবার শান্ত হবে পৃথিবী। আবারো কর্মব্যস্ততায় মুখরিত হবে আমাদের জীবন।
আব্দুল কাইয়ুম, ক্যাম্পাস প্রতিনিধি : একুশে টেলিভিশন অনলাইন
করোনা ভাইরাসের থাবায় বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। সব ক্ষেত্রেই কমবেশি এর প্রভাব পড়েছে। আমরা যারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পাস প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি তারাও এক শূণ্যতার নিস্পৃহা হাহাকার অনুভব করি। যদিও করোনাকালেও থেমে নেই সাংবাদিকতা। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার কারণে দীর্ঘদিন পরিচিত অগণ্য থেকে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার ফলে খারাপলাগা কাজ করে। এরমাঝেও যতটুকু সম্ভব হচ্ছে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সংবাদ বস্তুনিষ্ঠতার সাথে তুলে ধরছি খবরের কাগজে। প্রত্যাশা করছি খুব দ্রুতই আবারো ফিরে আসবো প্রিয় ক্যাম্পাসে। আবারো কর্মব্যস্ততায় ডুব দিবো। আবারো ফিরে আসবে সেই স্বর্ণালী অতীতের সুস্থ পৃথিবী।
দেলাওয়ার হোসাইন, ক্যাম্পাস প্রতিনিধি : দৈনিক দেশ রূপান্তর
স্থবির বিশ্ব! সময়ের পরিক্রমায় পৃথিবী যেন ছোট হয়ে আসছে। বদ্ধ এক কারাগার। কর্মযজ্ঞে এ যেন এক দানবের থবা। অজানা আতঙ্কে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে জনপদের পর জনপদ। একজন গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে করোনাকালের এসময়টা খুব বেশি সহজ ছিলো না।
করেনা পরিস্থিতির বেশ কিছুদিন পূর্বেই ক্যাম্পাস দৈনিক দেশ রুপান্তরের ক্যাম্পাস প্রতিনিধির পাশাপাশি নিয়মিত পরিবেশ সংশ্লিষ্ট সংবাদ নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাই। পরম উৎসাহ আর ভালোলাগা নিয়ে আনন্দের সাথেই চলছিল কার্যসম্পাদন। বেশ চলছিলো। হটাৎ ক্রমান্বয়ে স্থবির সবকিছু। বন্ধ হয়ে গেলো অফিসের দরজাও! পরক্ষণে অবশ্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসায় বসে অফিস করা। এই এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। অনলাইনের দুনিয়ায় কাছে থেকেও প্রিয় মানুষগুলো ছিল অনেক দূরে। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হারিয়ে গেছে কাছের-দূরের অনেক গুণী মানুষ ও প্রিয়জন। মানুষের উদাসীনতা আর স্বাস্থ্য তৎসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের স্বেচ্ছাচারিতা এ সংঙ্কটকে দিয়েছে নতুন মাত্রা।
দীর্ঘ কয়েক মাস। যথাক্রমে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবার কর্মস্থলে ফেরা। হয়তো সময়ের কাঁটায় করোনাকাল কিন্তু খবরের খোঁজে ঘুরে বেড়ানো এ খবরের ফেরিওয়ালার কাছে যেন লক্ষ কোটি বছর। সর্বোপরি, শত আক্ষেপ ভুলে ফিরবে আবার আগের উজ্জ্বল সুদিন এমনটাই প্রত্যাশা।
শাকিল আহমেদ, ক্যাম্পাস প্রতিনিধি : দৈনিক খোলা কাগজ
করোনার ভয়াল থাবায় জনশূন্য আজ প্রিয় ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের আনন্দঘন হাসিমাখা মুহূর্তগুলো মিলিয়ে গেছে করোনার দূষিত বাতাসে।ক্যাম্পাসের জন্য প্রতি মুহূর্তে মন কাঁদে। কবে ফিরব প্রিয় ক্যাম্পাসে এই প্রতিক্ষায় পথ চেয়ে আছি। সকল শ্রেণী পেশার মানুষই আজ করোনার যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার উপরও হয়তো কিছুটা বিরুপ প্রভাব ফেলছে করোনার সংক্রমন। তবে সবকিছুর পরেও থেমে ছিলাম না সংবাদ পরিবেশনে। নিজের অবস্থান থেকে যতটা সম্ভব হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই-বাছাই শেষে প্রেরণ করছি প্রকাশের জন্য। পাশাপাশি নিজের আত্মিক উন্নয়নের নিমিত্তে জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে সাহিত্য সংস্কৃতির, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, বিভিন্ন জার্নাল সাময়িকীর প্রতিবেদনেও চোখ বুলচ্ছি।
প্রত্যাশা করছি অতি শীঘ্রই আবারো সবাই মিলিত হবো প্রাণের বন্ধনে। সকল দুঃখ কষ্ট আর জরাজীর্ণতা কাটিয়ে উদিত হবে নতুন এক সূর্য।সেই সূর্যের দীপ্তিময় জ্যোতি আলোকিত করবে চারপাশ।
রায়হান হোসেন, ক্যাম্পাস প্রতিনিধি : রাইজিং বিডি
মহামারী করোনা ভাইরাসের এই অবসরে সারাদিন বাসায় অবস্থান করছি। তবে মন পড়ে আছে প্রিয় ক্যাম্পাসে। সাংবাদিক সমিতির প্রিয় মুখগুলোকে খুব মিস করছি। এরমাঝেও করোনার অবসরেও থেমে নেই ক্যাম্পাস বিষয়ক রিপোর্টিং। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত সবার সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং এর মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। অবসরে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পরিবেশনের পরও নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ে ফিচার লেখার চেষ্টা করছি। সর্বোপরি করোনার ফলে ক্যাম্পাস বন্ধ হলেও থেমে নেই আমাদের ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা। ক্যাম্পাসের নানা দিক এবং এ সময়ও শিক্ষার্থীদের অধিকার, সুযোগ সুবিধা নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত লিখছি। আশা করি খুব দ্রতই দেশের সব ক্যম্পাস ভরে উঠবে শিক্ষার্থীদের পুরনো সেই আড্ডা ও মজা মাস্তিতে। সবাই সুস্থ সুন্দরভাবে বেঁচে ফিরবো প্রিয় প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায়।
মুজাহিদ খান, ক্যাম্পাস প্রতিনিধি : বিডি সমাচার২৪.কম
করোনার সংক্রমণ রোধে দীর্ঘ প্রায় ছয় মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে প্রিয় প্রতিষ্ঠান। আমরা যেহেতু ক্যাম্পাস প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি সেই হিসাবে আমাদের কাজের ক্ষেত্র অধিকাংশই ক্যাম্পাস কেন্দ্রীক। করোনার এই দূ্র্যোগময় সময়ে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকা আমাদের কাজে বড় বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে বিষয়টি এমনও নয়। তবে এমন পরিস্থিতি আমাদের নতুন কিছু শিখিয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যাম্পাসে না থেকে রিপোর্টিং করার ক্ষেত্রে কাঁচা হাতের উপর বেশ জোর দিতে হয়েছে। তবে এখন বিষয়গুলো অনেক সহজসাধ্য হয়েছে। এই সহজ হয়ে যাওয়াটা আমাদের মত নবীনদের জন্য অনেকটা টনিকের মতো কাজ করেছে। এখন চাইলেই স্বল্প সময়ের মধ্যেই একটি পূর্নাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করতে পারছি।
সবমিলিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে অবসর সময়ে নিজের মান বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইন নির্ভর বিবিধ কোর্স এবং প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছি যেন বন্ধকালীন এই সময় কিছুটা হলেও পূর্ণতা পায়। সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ কামনা করছি যেনো আবারো প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরতে পারি সবাই, আবারো ফিরে আসুক পূর্বের কর্মব্যস্ততা। সবাই মিলে বেঁচে থাকি সুন্দর সেই সময়ের প্রত্যাশায়।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড