• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গবিতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:২৩
গবি
শিক্ষার্থীদের দিকে ধেয়ে আসছেন ছাত্র পরিষদের সভাপতি রনি আহম্মেদ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়।

জানা যায়, ফার্মেসি বিভাগের ১ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রাব্বি একই বিভাগের ৪র্থ সেমিস্টারের মিন্টুর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এতে মিন্টু ওই শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তুলেন। পরে ১ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী বাপ্পি ও তার ব্যাচের অন্য শিক্ষার্থীরা ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ উদ্দিনের ক্লাস বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অবস্থান নেয়।

সূত্র মতে জানা যায়, ১ম সেমিস্টারের যাদের মারা হয়েছে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র পরিষদের সভাপতি রনি আহম্মেদের এলাকার পরিচিত। এ ঘটনায় রনি আহম্মেদ এবং ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান রনি ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে অবস্থান নেন এবং বিভাগের জুনিয়র শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতন করায় আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়ার কথা জানান।

পরে তারা ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী মিন্টুকে মাঠে ডেকে নেন এবং তাদের মাঝে কথা কাটাকাটি হলে সাধারণ ছাত্র পরিষদের সভাপতি রনি আহমেদ মিন্টুর গায়ে হাত তুলেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসলে রনি আহম্মেদ তাদেরও আঘাত করেন।

একাধিক সূত্রে আরও জানা যায়, মিন্টুকে মারধরের পর ছাত্র পরিষদের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। মাঠে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক দফা সংঘর্ষ শেষে ২য় দফায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাদাম তলায় এই ঘটনায় আবারও সংঘর্ষ বাঁধে। পরে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি সমাধানের জন্য ফার্মেসি বিভাগে অবস্থান নেন। এরপর সেখানে ৩য় দফায় আবারও শিক্ষার্থীদের মাঝে সংঘর্ষ বাঁধে।

অবস্থার অবনতি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মুর্ত্তজা আলী, রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন, সহকারী রেজিস্ট্রার আবু মুহাম্মদ মুকাম্মেলসহ অন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফার্মেসি বিভাগে আসেন। পরে বিষয়টি সমাধানের জন্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনা সভায় বসেন।

মিন্টুর গায়ে হাত তোলার অভিযোগের বিষয়ে রনি আহমেদ জানান, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার সঙ্গে মিন্টুর কথা কাটাকাটি হয়েছে, তবে গায়ে হাত তুলিনি। মিন্টু যাদের মেরেছে তারা আমার ছোট ভাই। ওরা আমার কাছে বিচার দেওয়ার পর আমি মিন্টুকে ওদের মারার কারণ জিজ্ঞেস করি। তখন ওখানে অন্তু ভাই (বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী) ছিল, উনি মিন্টুকে একটা চড় মারেন। পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে মিন্টু ১ম সেমিস্টারের ৬ ছেলেকে মেরেছে। এ বিষয়ে অন্তু ভাই তাকে ডেকে সতর্ক করেছে, সমাধান করে দিয়েছে কিন্তু সে মানে নাই।’

ফার্মেসি বিভাগের ৪র্থ সেমিস্টারের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বিষয়টি বিভাগের সিনিয়র-জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুচ্ছ ঝামেলা। কিন্তু তারা কোনো শিক্ষার্থীকে মারধর করতে পারেন না। আমরা প্রশাসনের কাছে লিখিত দেব। দ্রুত মানববন্ধন কর্মসূচি করব।

এ দিকে ঘটনার সাথে সাধারণ ছাত্র পরিষদের সভাপতির সম্পৃক্ততার ব্যাপারে একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান রনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে আজ একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এটার সঙ্গে দেখলাম ছাত্র পরিষদের সভাপতি রনি আহম্মেদের নাম এসেছে। আসলে ফার্মেসির প্রথম সেমিস্টারের যাদের মারা হয়েছে, তারা নাকি রনি আহম্মেদের পরিচিত। এ জন্য এই বিষয়ে সে কথাবার্তা বলছে। তার এই ঘটনা ছাত্র পরিষদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না। ফার্মেসির ঘটনার বিষয়ে কেউ আমাদের জানাইনি বা লিখিত দেয়নি এবং আমরা এটা নিয়ে কোনো ইন্টারফেয়ার করিনি।’

সংগঠন থেকে রনি আহম্মেদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ অবশ্যই। এটা নিয়ে আমরা উপদেষ্টাদের সঙ্গে বসব। তাদের পুরো ঘটনা জানিয়ে একটা সুষ্ঠু সমাধান করা হবে।’

সার্বিক বিষয়ে সাধারণ ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা শেখ খোদারনুর রনি জানান, ‘গতকাল (শনিবার) রাতে ফার্মেসি বিভাগের জুনিয়রদের র‍্যাগ দেয় সিনিয়ররা। এই নিয়ে তারা রনি আহম্মেদের কাছে বিচার দেয়। পরে রনি আহম্মেদ ব্যক্তিগত পরিচয়ে তাকে (মিন্টু) মারছে, সাধারণ ছাত্র পরিষদের পরিচয়ে নয়।’

তিনি আরও জানান, ‘এটা সাধারণ ছাত্র পরিষদের বিষয় হলে, আমরা সবাই বসতাম এবং ফয়সালা করতাম। র‍্যাগ দেওয়াকে আমি কখনোই সমর্থন করি না। গায়ে হাত তোলাকে কখনোই সমর্থন করি না। এ ঘটনার সঙ্গে সাধারণ ছাত্র পরিষদ যুক্ত না। সাধারণ ছাত্র পরিষদের কাছেও কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। সংগঠন কোনো সিদ্ধান্তও দেয়নি।’

শেখ খোদারনুর জানান, ‘সাধারণ ছাত্র পরিষদের সভাপতি পরিচয়ে মারধর করেনি। তাদের নিজস্ব পরিচয় রয়েছে। যাকে র‍্যাগ দেওয়া হয়েছে, সে তার (রনি আহম্মেদ) এলাকার আত্মীয়। এ কারণে মারধর করেছে। এখানে সাধারণ ছাত্র পরিষদ টেনে আনার কোনো অর্থ হয় না। তবে মারামারিকে কখনোই মেনে যায় না। আমরা বসে এর মীমাংসা করব।’

ঘটনার বিষয়ে গবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম রলিফ জানান, ‘এটা বিভাগের সমস্যা। এখানে বিভাগের সিনিয়ররা-শিক্ষকরা আছেন, তারা ফয়সালা করবেন। এখানে বাহিরের সংগঠন, বাহিরের মানুষদের দিয়ে বিভাগের শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলা ঠিক না। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।’

তিনি আরও জানান, ‘যে সংগঠনের যারা এমন কাজ করছে, আমার মনে হয় এটা সুপরিকল্পিত কাজ। যে সংগঠনের নেতারা এ কাজ করেছে, সে সংগঠনের বৈধতা আছে কি না আমি জানি না। এমন সংগঠনের সভাপতি হোক আর যেই হোক তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হোক। এ ধরনের সংগঠন বন্ধ করে দেওয়া হোক।’

এ দিকে আজকের এই ঘটনার সঙ্গে ফার্মেসি বিভাগের নবগঠিত ফার্মেসি ক্লাবের একাংশের পদত্যাগের ঘটনার সম্পৃক্ততা আছে বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ফার্মেসি ক্লাবের প্রথম কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠিত হয়। কমিটি গঠনের দুই দিন পরে বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ২৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির ১৮ জন পদত্যাগ করেন। কমিটিতে স্থান পাওয়া প্রথম সেমিস্টারের কয়েকজনকে পদত্যাগের জন্য চাপাচাপি করে চতুর্থ সেমিস্টারের কিছু শিক্ষার্থী। তারা এতে রাজি না হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজকের মারামারির ঘটনা ঘটে।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মুর্ত্তজা আলী জানান, ‘ছাত্র পরিষদ বিচারক নয়। তারা গায়ে হাত তুলবে কেন? তারা প্রশাসনের কাছে লিখিত দিলে এর উপযুক্ত বিচার হবে।’

আরও পড়ুন : ল্যাম্পপোস্টে ধাক্কা লেগে ডুয়েটে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীর মৃত্যু

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ফার্মেসি ক্লাবের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করা হবে। ফার্মেসি ক্লাবের সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। খেলার মাঠে সংঘর্ষের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো লিখিত আসেনি। বহিরাগত কয়েকজন ঐ শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে। আমরা তাকে ভালোভাবে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। এরপর যদি এমন ঘটনা ঘটে আমরা গুরুতর পদক্ষেপ নিব।’

ওডি/এমআরকে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড