• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধর্ষণের পর মেয়েটাকে মারলো কেন?

  সম্পাদকীয়

২১ জুলাই ২০১৯, ১৯:৪৯
ধর্ষণ

ছয় বছরের শিশু সায়মার মায়ের এ কথাটি আমাদের কী বার্তা দেয়? ধর্ষণের ঘটনাগুলোর নিয়মিত পুনরাবৃত্তি দেশে যে এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তার প্রতিফল এই যে, একজন মা ধর্ষণটাকেও মেনে নিতে প্রস্তুত আছেন, তবু যে কোনো প্রকারে সন্তানের প্রাণটা ভিক্ষা চান৷ নাগরিক অসহায়ত্বের এর চাইতে কঠিন দৃষ্টান্ত আর কিছু হতে পারে না।

সম্প্রতি বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যেখানে ২০১৮ সালে বছরজুড়ে ৩৫৬টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিল, সেখানে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কেবল প্রথম ছয় মাসেই ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে ৩৯৯ জন শিশু। ২০১৮ সালের ঘটনাগুলোতে মারা গিয়েছিল ২২ জন এবং আহত হয়েছিল ৩৩৪ জন। সেখানে এ বছর ইতোমধ্যেই একজন ছেলে শিশুসহ ১৬ জন শিশু মারা গেছে৷ মানবতা ও মূল্যবোধের এমন অবনমন কল্পনা করতেও গা শিউরে ওঠে৷ সায়মার ঘটনাটি নিয়ে আলোচনার মাঝেই বাবা কর্তৃক কন্যার ধর্ষণের খবর এসে গেল মিডিয়ায়; এসে গেল মসজিদের ইমাম কর্তৃক শিশু ধর্ষণের খবরও৷ মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে স্কুলের শিক্ষক, প্রতিবেশী থেকে শুরু করে নিজের বাবা- কারও কাছেই যেন শিশুরা আর নিরাপদ নয়৷ বহুকাল আগে 'অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ'-এ যখন কন্যাশিশুদের জন্মের পরেই জীবন্ত কবরস্থ করা হতো, সে সময়ের চাইতেও ভয়ঙ্কর একটি সময়ে এসে যেন আমরা উপনীত হয়েছি, যখন মৃত্যুসম আশঙ্কা ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে বেড়ে তুলছে হচ্ছে আমাদের শিশুকন্যাদের।

বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, যতগুলো ধর্ষণের খবর আমাদের সামনে আসছে, তার অন্তত কয়েকগুণ খবর আমাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না৷ সমাজ ও লোকাচারের ভয়ে বেশিরভাগ যৌন হয়রানির ঘটনা মিডিয়াতে আসে না৷ সুতরাং, কতটা গভীর দুঃসময়ের ভেতর দিয়ে আমরা যাচ্ছি, সেটা সহজেই অনুমেয়৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের সমাজে সামগ্রিকভাবে মানবিক মূল্যবোধে হঠাৎ এমন ভাটা পড়ার কারণ কী? এটা তো নিঃসন্দেহ যে দীর্ঘদিন ধরে দেশের অভ্যন্তরে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, এই অতিনিয়মিত অপরাধকর্মগুলো তারই একটি প্রত্যক্ষ ফলাফল৷ কিন্তু শিশুধর্ষণের মতো এমন জঘণ্য অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে কারণ সম্ভবত অন্য। পৃথিবীর অপরাধ সম্পর্কিত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট দেখা যায় যে একটি দেশের অভ্যন্তরে অপরাধপ্রবণতা সে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও অন্যান্য নাগরিক আশা-নিরাশার দ্বারা প্রভাবিত হয়।

অপরাধের ধরনধারণ কেমন হবে, সেটাও সমাজবলয়ের মধ্যে মানুষের জীবনাচরণপ্রক্রিয়ার ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে৷ আমাদের সমাজে এ ধরনের অপরাধকর্মের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবার পেছনে কোন ধরনের সামাজিক কাঠামো দায়ী, তা খুঁজে বের করা প্রয়োজন৷ যে কোনো ধরনের অপরাধ নির্মূলের ক্ষেত্রেই কেবল শাস্তির বিধান যথেষ্ট নয়৷ বরং এর পেছনের মূলীভূত কারণগুলো খুঁজে বের করে তার সমাধান করা দরকার।

অপরাধের শাস্তিপ্রদানের চাইতে অপরাধপ্রবণতা প্রতিরোধে ব্যবস্থাগ্রহণ অধিক যুক্তিযুক্ত৷ তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এসব বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে৷ সেই সাথে সাধারণ জনগণকেও অপরাধ দমনে আরও সোচ্চার হতে হবে৷ চোখের সামনে অন্যায় হতে দেখেও সেটি প্রতিহতের চেষ্টা না করাটাও একটি অপরাধ, অপরাধকে অপরাধ বলে স্বীকার না করাটাও যে একটি অপরাধ- সে বোধ আমাদের মধ্যে তৈরি হতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড