• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে

  সম্পাদকীয়

১২ মে ২০১৯, ২২:০৭
সম্পাদকীয়

ভৌগোলিকভাবেই বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ৷ এখানে মানুষের জীবন ইতিহাস মানেই প্রকৃতির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণের ইতিহাস৷ এক আঘাতের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে যখনই মেরুদণ্ড সোজা করে কিছুটা দাঁড়ানোর সময় আসে, তখনই আরেক দুর্যোগ এসে হানা দেয়৷ পরিসংখ্যান বলছে— গত ৫০ বছরে দেশের উপর দিয়ে বয়ে গেছে ৩২টি ঘূর্ণিঝড়৷ আর এতে প্রাণ গিয়েছে ৬ লাখের অধিক মানুষের৷

১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় গর্কি, ১৯৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়, ১৯৯১ সালের ম্যারিএন, ২০০৭ সালের সিডর ও ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলা গত ৫০ বছরে এদেশে ঘটে যাওয়া সবচাইতে বড় ৫টি ঘূর্ণিঝড়৷ সবশেষ গত ৬ মে আঘাত করলো ঘূর্ণিঝড় ফণী৷ সব দিক বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, যতই দিন এগোচ্ছে, পূর্বের তুলনায় কাছাকাছি সময়ের ব্যবধানে ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনা বাড়ছে৷ সঙ্গত কারণেই এ ধরনের দুর্যোগগুলো মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জনের বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷

সর্বশেষ যে ঘূর্ণিঝড়টির মোকাবেলা আমাদের করতে হলো, তার নাম ছিল ফণি৷ এ ঘূর্ণিঝড়ে ১৬ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানা গেছে৷ এছাড়া ২১ হাজার ৩৩টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে; ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২ কিলোমিটার বাঁধ৷ এতে প্লাবিত হয়েছে ৫৯টি গ্রাম৷ ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে প্রায় ৩৫টি জেলার ২০৯টি উপজেলায় বোরো ধান, ভুট্টা, সবজি, পাট ও পান ফসলের প্রায় ৬৩ হাজার ৬৩ হেক্টর জমি আংশিক এবং ৪৯ হেক্টর জমি সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ সব মিলিয়ে প্রায় ৩৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে৷

এই যে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরা হলো, এটি প্রকৃতপক্ষে সম্ভাব্য অনুমিত ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় অনেকটাই কম৷ ঘূর্ণিঝড়টির শক্তিমত্তা বিবেচনায় ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ার পেছনে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটি পালন করেছে দেশের গণমাধ্যমগুলো৷ দিনরাত ফণীর সম্ভাব্য ভয়াবহতা সম্পর্কে তথ্য প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে সক্ষম হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি কমানো গেছে৷ তাছাড়া অতীতের ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার সাধারণ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা, নৌজাহাজে ত্রাণসামগ্রী মজুদ রাখা ও দুর্যোগ মোকাবেলায় সুদক্ষ কর্মীবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা— আগে থেকেই এ ধরনের ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে আপাতত আমরা রক্ষা পেয়েছি৷ সব মিলিয়ে, আগের তুলনায় দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা যে বেড়েছে এ কথা বলাই যায়৷

তবে দুর্যোগ-পরবর্তী পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার চাইতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো দুর্যোগপূর্ব প্রস্তুতি৷ এ ক্ষেত্রে অনেক দিকেই আমাদের ঘাটতি রয়ে গেছে যা এবারের ঘূর্ণিঝড়ের সময়টাতেও পরিলক্ষিত হয়েছে৷ বিশেষ করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর মানবেতর পরিবেশের ব্যাপারে আরও বেশি সচেতন হওয়া দরকার৷ প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাই স্কুল ও মসজিদসহ যেসব ভবন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী, সেগুলোকে আরও শক্তিশালী ও মজবুত করে তৈরি করতে হবে৷ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বিকল্প বিদ্যুৎ-সংযোগের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে৷ মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু ও অন্যান্য প্রাণিসম্পদ রক্ষার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন৷ দুর্যোগে মানুষ, ঘরবাড়ি ও গবাদি পশুর ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম প্রধান কারণ হলো গাছ ভেঙে পড়া৷ তাই অধিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে অত্যধিক পুরোনো ও দুর্বল গাছ অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে৷

ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগগুলোকে মোকাবেলার ক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শক্তিশালী ও মজবুত বাঁধ নির্ণয় করা৷ আরও উঁচু ও মজবুত বাঁধ নির্ণয় করা গেলে লোকালয় ও ফসলকে প্লাবনের হাত থেকে রক্ষা করার সুযোগ তৈরি হবে৷ এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ নিয়ে এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে৷ এছাড়া আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তরকে আরও চৌকশ ও কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলারও বিকল্প নেই৷

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীজুড়েই প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিয়মিত সংঘটন যখন একটি অত্যন্ত দুশ্চিন্তাব্যঞ্জক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন পৃথিবীর একটি অতি দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসেবে বাংলাদেশকে সামনের দিনগুলোতে দুর্যোগ মোকাবেলায় আরও অনেক বেশি সক্ষমতা অর্জন করতে হবে৷ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ হিসেবে ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অন্যতম ভুক্তভোগী হতে হবে বাংলাদেশকে৷ তাই এখন থেকেই তা প্রতিরোধের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ও সতর্কতার সাথে শক্তিশালী দুর্যোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে আমাদের মনোযোগী হতে হবে৷

ওডি/আরএইচএস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড