• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অপতথ্য প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার রোধ করতে হবে

  অধিকার ডেস্ক

০৭ মে ২০১৯, ১৬:০৫
সম্পাদকীয়

তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবের এ যুগে অবাধ তথ্যপ্রবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু৷ আর এ অবাধ তথ্যপ্রবাহে যে মিডিয়ার অর্জন সন্দেহাতীতভাবে সবচাইতে বেশি, সেটি হলো ফেইসবুক৷ বর্তমানে পৃথিবীজুড়েই যেসব তথ্য ও সংবাদ প্রধান মিডিয়াগুলোতে আসে না সময়, যোগাযোগব্যবস্থা ও তথ্যপ্রাপ্তির নানান সীমাবদ্ধতার কারণে, সেসব তথ্য ও সংবাদ মুহূর্তেই পৃথিবীর সামনে উন্মোচিত হয় যে মিডিয়ার মাধ্যমে, সেটি ফেইসবুক৷ ফেইসবুকের সৌজন্যে নাগরিক সাংবাদিকতা এখন ছড়িয়ে গেছে পৃথিবীর প্রতিটি ইঞ্চিতে৷ সাংবাদিকতা সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নেই, এমন ব্যক্তিও নিজের অজান্তেই সাংবাদিক হয়ে উঠছেন৷ এর ফলে তথ্যপ্রবাহে যেমন একটি দারুণ গুণগত পরিবর্তন এসেছে বিশ্বজুড়ে, সেই সাথে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে সত্য লুকোবার সুযোগও কমে এসেছে৷ এ সকল কারণে ফেইসবুক নিশ্চয়ই প্রশংসা দাবি করতে পারে৷

এতসব ইতিবাচক দিক থাকলেও গত কয়েক বছরে নানাবিধ অপরাধ সংঘটনে ফেইসবুকের পরোক্ষ অথচ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই৷ ফেইসবুকের নেতিবাচক ব্যবহার নিয়ে আলোচনা শুরু হয় মূলত ২০১৬ সালের দিকে৷ সে বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তথ্য বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে গ্রাহকের তথ্য বিক্রি করে ফেইসবুক। সেই তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ট্রাম্পকে নির্বাচনী প্রচারে সহায়তা করে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ বিষয়টি জানাজানি হলে জাকারবার্গ বেশ ভালোই বিপাকে পড়েন। এমনকি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্ষমা পর্যন্ত চাইতে হয়। কেবল তাই নয়, গ্রাহকের তথ্যের অপব্যবহার করায় ব্রিটিশ এমপিদের কাছে ব্যাখ্যাও দিতে হয় তাকে। সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে সন্ত্রাসী হামলার পুরো দৃশ্যটি অপরাধী কর্তৃক ফেইসবুকে লাইভে দেখানো হলে তা তুমুল আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলে পৃথিবীব্যাপী৷ স্বল্প সময়ে ব্যাপকভাবে সে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে ফেইসবুক কর্তৃপক্ষের পক্ষে সেটি ফেইসবুক থেকে পুরোপুরি মুছে ফেলতে দারুণ বেগ পেতে হয়৷

বিশেষত কয়েকটি ক্ষেত্রে ফেইসবুকের অপারগতা ও দুর্বলতা খুঁজে পাওয়া যায়৷ এর মধ্যে শুরুতেই রয়েছে নানা ধরনের ক্ষতিকর কন্টেন্ট ছড়িয়ে দিতে ফেইসবুকের ব্যবহার৷ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রচারণা ও উস্কানি, ঘৃণামিশ্রিত বক্তব্য এবং গুজব ছড়ানোর মধ্য দিয়ে সহিংসতা সৃষ্টির প্রচেষ্টায় সাম্প্রতিককালে ফেইসবুককে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ ফিলিস্তিন-ইজরাইল দ্বন্দ্ব, মায়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনসহ বিশ্বব্যাপী নানান গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ফেইসবুক ব্যবহারের মাধ্যমে সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়ার উদাহরণ রয়েছে৷

বিভিন্ন রাষ্ট্রের নির্বাচনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতেও ফেইসবুকের সাহায্য নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ নির্বাচনের সময় অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট দলকে সাহায্য করার বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে৷

ফেইসবুকের বিরুদ্ধে সবচাইতে বড় যে অভিযোগটি বর্তমানকালে বিশেষভাবে বিবেচিত হচ্ছে, সেটি হলো ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তাহীনতা৷ গ্রাহকের তথ্যের নিরাপত্তা বিধানে অনেক ক্ষেত্রেই ফেইসবুকের ব্যর্থতা স্পষ্ট৷ বিশেষত কোনো একজনের তথ্য ব্যবহার করে ফেইসবুকের মাধ্যমে অপদস্থ করা, এমনকি ব্ল্যাকমেইলিংয়ের ঘটনার দৃষ্টান্তও রয়েছে৷

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তথ্যের সুরক্ষা৷ কোনো ব্যবহারকারী যে সকল তথ্য শেয়ার করছেন, তার প্রামাণ্য তথ্যাবলি সংরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রেও ফেইসবুকের দুর্বলতার জায়গা রয়েছে৷ এ নিয়ে অবশ্য সম্প্রতি ফেইসবুক কাজ শুরু করেছে৷

ফেইসবুকের এসব নেতিবাচক ও দুর্বলতার দিক নিয়ে কোনো সমাজবিশ্লেষক নন, কথা বলেছেন স্বয়ং ফেইসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ৷ সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টের মতামত বিভাগে লেখা এক কলামে এসব বিষয় নিয়ে বলেছেন তিনি। এ লেখায় কেবল ফেইসবুক নয়; প্রত্যেকটি ওয়েবসাইটের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালার প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি আলেচনা করেছেন৷ বিশেষত ক্ষতিকর কনটেন্ট, নির্বাচনী নিরপেক্ষতা, প্রাইভেসি এবং ডেটা সুরক্ষা— এ চারটি ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রবণতা রোধে নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ ফেইসবুকের নেতিবাচক ব্যবহার রোধে জাকারবার্গ পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রকর্তারও সাহায্য চেয়েছেন৷

এ থেকেই বোঝা যায় যে, সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার বিষয়ে লুকোচুরির আর কোনো সুযোগ নেই৷ এ সমস্যাটিকে সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে এর সমাধানে যত দ্রুত সম্ভব সকলকে একমত হয়ে কাজ করতে হবে৷ তথ্যবিপ্লবের অগ্রনায়ক ফেইসবুককে তার সকল কালিমা ধুয়েমুছে পরিচ্ছন্ন হতে হবে; একইসাথে পুরো ইন্টারনেট জগতেই এ ধরনের শুদ্ধিপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে৷

ওডি/আরএডি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড