সম্পাদকীয় ডেস্ক
কিছুদিন আগে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছিলেন, সারাদেশে বর্তমানে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ১ হাজার ২৪৮টি। এর বিপরীতে অনলাইন পত্রিকা আছে ১ হাজার ৮৭৪টি৷
নিউইয়র্ক টাইম্স এর সিইও মার্ক টমসন গত বছর বলেছিলেন, তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর এ পৃথিবীতে ছাপানো সংবাদপত্র বা প্রিন্ট মিডিয়ার আয়ু আর সর্বোচ্চ ১০ বছর৷ পৃথিবীব্যাপী অনলাইন মিডিয়ার ব্যাপক প্রসার টমসনের এ ইঙ্গিতকে সত্য প্রমাণের দিকেই এগোচ্ছে সম্ভবত৷ বর্তমানে প্রায় সকল দেশেই ছাপা সংবাদপত্রের সংখ্যা দিনকে দিন কমে আসছে, বিপরীতে বাড়ছে অনলাইন পত্রিকার সংখ্যা৷
প্রযুক্তি-নির্ভরতা বৃদ্ধি, সময়ের অপচয় রোধ এবং সংবাদ-সচেতনতা বৃদ্ধি বর্তমানে মানুষের অনলাইন মিডিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ার অন্যতম প্রধান তিনটি কারণ৷ হাতে হাতে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের কারণে কাগজে ছাপা সংবাদপত্র বহনের কার্যত কোনো প্রয়োজন না থাকায় এর গুরুত্ব হ্রাস পেয়েছে৷ তাছাড়া, ক্রমবর্ধমান ব্যস্ততা ও যান্ত্রিক-জীবনে এখন আর ঘরে বসে পত্রিকা হাতে অলস সময় কাটাবার ফুরসত কারোরই নেই৷ তাই কাজের ফাঁকে, বিশ্রামের সময়, যানজটে বসে অহেতুক সময় নষ্ট করার পরিবর্তে হাতের মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করে অনায়াসেই দিনের গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো পড়ে নেয়া যায় অনলাইন পত্রিকা থেকে৷
সংবাদ বিষয়ে মানুষের সচেতনতাও অনলাইন পত্রিকার চাহিদা বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ৷ যে কোনো একটি ঘটনা ঘটে যাবার ১২-১৮ ঘণ্টা পরে সংবাদপত্রের মাধ্যমে সেটার বিস্তারিত জানার জন্য অপেক্ষা করার সময় পেরিয়ে গেছে৷ এখন যে কোনো কিছু ঘটার মিনিটখানেকের মধ্যেই সে তথ্য পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের কাছে৷ আর এটি সম্ভব করছে অনলাইন পত্রিকাগুলো৷ টেলিভিশনের স্ক্রিনে লাইভ নিউজ দেখার মতোই দ্রুততার সাথে প্রতি মুহূর্তে আপডেট পাওয়া সম্ভব হচ্ছে৷ খেলাধুলার ক্ষেত্রে প্রতিটি মুহূর্তের লাইভ আপডেট ও স্কোর দেখা যাচ্ছে অনলাইন পত্রিকাগুলোর মাধ্যমে৷ তাৎক্ষণিকভাবে সংবাদপ্রাপ্তির এ সুযোগই অনলাইন পত্রিকার প্রতি সচেতন পাঠকের আকর্ষণ বৃদ্ধির প্রধানতম কারণ৷
অনলাইন মিডিয়ার জয়জয়কার দৃশ্যমান হলেও এর নানান নেতিবাচক দিকও ভাবিয়ে তুলছে সচেতন মহলকে৷ কেননা ভুয়া সংবাদ প্রচার, গুজব ছড়িয়ে দেয়া এবং হলুদ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অনলাইন মিডিয়ার ভূমিকা দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্নবিদ্ধ৷ বিভিন্ন সময়ে নানা অনলাইন পত্রিকা কর্তৃক ভিত্তিহীন ও মিথ্যা সংবাদ প্রচারের কারণে এর বস্তুনিষ্ঠতার প্রতি সাধারণ মানুষের এক ধরনের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে বেশ কিছুদিন যাবত৷ তবে অনলাইন মিডিয়ার সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে, কোনো সংবাদ সন্দেহজনক মনে হলে অন্যান্য পত্রিকা থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হবার সুযোগ রয়েছে৷ যেহেতু পৃথিবীর হাজার হাজার অনলাইন পত্রিকায় কেবল একটি ক্লিকেই চোখ বুলিয়ে নেয়া যাচ্ছে, সেহেতু সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতার প্রশ্নেও এখানে সংশয়ের তেমন কোনো সুযোগ নেই৷ এত এত ইতিবাচক দিক থাকায় পৃথিবীব্যাপী অনলাইন পত্রিকার প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধির দরুণ অসংখ্য কাগুজে সংবাদপত্র ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে; আরও হাজার হাজার পত্রিকা হয় বন্ধের পথে, অথবা তারা অনলাইন ভার্শনে কর্মকাণ্ড বিস্তার শুরু করেছে৷ পৃথিবীর বড় বড় সব পত্রিকা এখন তাদের ছাপা সংবাদপত্রের চাইতে অনলাইনেই আয় করছে বেশি৷ পাঠকসংখ্যাতেও অনেক পত্রিকাই প্রিন্টেড ভার্শনের চাইতে অনলাইন ভার্শনে এগিয়ে গেছে অনেক৷ তাছাড়া অনলাইন সংবাদের ক্ষেত্রে সরাসরি পাঠকের মন্তব্য-মূল্যায়ন জানতে পারার সুযোগ থাকায় পত্রিকাগুলোর নিজেদের মানোন্নয়নে সিদ্ধান্ত নেয়াও সহজ হয়ে গেছে৷ ফলে একদিকে যেমন অনলাইন পত্রিকার সংখ্যাধিক্যের কারণে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পত্রিকাগুলো নিজেদের মানের ব্যাপারে অধিকতর সচেতন হয়ে উঠছে, আবার প্রত্যেকেই মান-সচেতন হবার কারণে সামগ্রিকভাবে সংবাদমাধ্যমের মানোন্নয়নের সুযোগ তৈরি হয়েছে৷ তাই, সর্বোচ্চ দ্রুততার সাথে সঠিক সংবাদ পৌঁছবার ক্ষেত্রে কাগুজে সংবাদপত্রের চাইতে অনলাইন পত্রিকা যে অধিক কার্যকরি— এতে সন্দেহের কোনোই অবকাশ নেই৷
সব বিবেচনায়, সম্প্রতি অনলাইন পত্রিকায় অভ্যস্ত হবার ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন৷ কেননা প্রযুক্তির বিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারলে আমাদের পিছিয়ে পড়তে হবে নিশ্চিত৷ তাই অনলাইন মিডিয়ার কৃতিত্ব স্বীকার করে তাকে স্বাগ্রহে গ্রহণ করার এখনই সময়৷
ওডি/আরএইচএস
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড