• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রমজানে বাজার কি স্বস্তি দেবে?

  সম্পাদকীয় ডেস্ক

২৬ এপ্রিল ২০১৯, ১৫:১০
সম্পাদকীয়

পবিত্র মাহে রমজান আসন্ন৷ প্রতি বছর রমজান এলেই যেটি আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়, সেটি হলো দ্রব্যমূল্য৷ রমজানের সময় এলেই দেশে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির একটি 'স্বাভাবিক' প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় প্রত্যেক বছরেই৷ এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি না পেলেও দেশের অভ্যন্তরে ব্যবসায়ীরা কখনো সিন্ডিকেট করে, আবার কখনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধি করে থাকেন৷ এসব কারণে প্রতি রমজানেই ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ব্যাপক নাজেহাল হতে হয়৷

প্রতি বছরের মতো এবারও পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে নানামুখী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে৷ পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখা এবং পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী ইতোমধ্যেই বিভাগীয় কমিশনারদের চিঠি দিয়েছেন বলে জানা গেছে৷

কিন্তু বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গিয়েছে যে এরই মধ্যে পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ, আদা, বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ডাল, শাক, মুরগি ও মাছসহ অধিকাংশ পণ্যের মূল্যই ১০-২২ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে৷ যদিও এর আগে দু-তিন মাস দ্রব্যমূল্য অনেকটাই স্থিতিশীল থাকতে দেখা গেছে, শবে বরাত আসতে আসতেই পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে৷

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও দেশীয় বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকার ও উৎপাদকদের ওপর দায় চাপাচ্ছেন৷ অপরদিকে পাইকারি বিক্রেতাদের পক্ষ থেকে পণ্যের সরবরাহ কম হওয়ার কারণে এ মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে বলে দাবি করা হচ্ছে৷ অথচ খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে মূলত ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে৷ এসব বিবেচনায়, অন্যান্য বছরের সাথে এ বছর বাজার পরিস্থিতিতে বিশেষ কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে না৷ অথচ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবকে কেন্দ্র করে ভোগ্যপণ্যের মূল্য কমতে দেখা যায়৷

কিছু অসাধু আমদানিকারক, উৎপাদক ও ব্যবসায়ীর কারণে ইদসহ বিভিন্ন জাতীয় উৎসবের সময় পণ্যের বাজার মূল্যাগ্নিতে ছেয়ে যায়৷ অথচ এসব অপতৎপরতা রোধে তেমন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায় না৷ তাই বিশ্লেষকদের মতে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণটি হলো বাজার মনিটরিংয়ে দুর্বলতা৷ বাজার-অস্থিতিশীলতার কারণ হিসেবে টিসিবির অকার্যকারিতাকেও দায়ী করেন অনেকে৷ এছাড়াও ট্যারিফ কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা৷ এসব কারণে ভোক্তা ও ক্রেতার স্বার্থ ও অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যায়।

পণ্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রেখে সাধারণ মানুষের রমজান উদযাপন স্বস্তিদায়ক করে তুলতে ন্যায্যমূল্যে সয়াবিন তেল, চিনি ও মসুর ডাল বিক্রয়ের মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যেই নিজেদের কার্যক্রম শুরু করেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি। এ তিনটি পণ্যের পাশাপাশি পহেলা রমজান থেকে ছোলা ও খেজুর বিক্রয়ও শুরু হবে বলে জানা গেছে৷ এর মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি কিছুটা রোধ করা যাবে বলে মনে করেন টিসিবি কর্তৃপক্ষ৷ ভোক্তাদের স্বার্থে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও৷

তবে কেবল টিসিবির ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রয় ও মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর পাঠানো নির্দেশনায় যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আটকানো যাবে না, তা ইতোমধ্যেই বোঝা যাচ্ছে৷ এগুলোর পাশাপাশি তাই পণ্যের নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিতকরণ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজার মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে৷

ওডি/আরএইচএস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড