• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

এ ধ্বংসের শেষ কোথায়?

  সম্পাদকীয়

২৩ এপ্রিল ২০১৯, ২১:০৮
সম্পাদকীয়

আধুনিক মানবসভ্যতায় গৃহযুদ্ধের একটি বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত হচ্ছে শ্রীলঙ্কা৷ দীর্ঘ পঁচিশ বছর ধরে চলার পর ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধের এ অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছে দেশটির জনগণ৷ একটা সময় ছিল যখন পর্তুগিজ ও ডাচরা শ্রীলঙ্কাকে নিয়ন্ত্রণ করতো; এরপর ১৫০ বছর ব্রিটিশ শাসনের আওতায় থাকা দেশটি ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করলেও দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়ে ওঠেনি৷ সুদীর্ঘকাল পরাধীন, শোষিত, নিপীড়িত, অনিশ্চিত ও ভীতিকর সময় যাপনের পর ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধ বন্ধ হলে সেখানে কিছুটা স্বস্তিদায়ক অবস্থা তৈরি হয়৷ এরপর গত ১০ বছরে আর বড় ধরনের কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি৷ কিন্তু গত ২১ এপ্রিল যা ঘটলো, সেটা কেউ দুঃস্বপ্নেও ভাবতে চাইবেন না৷

রোববার সকালে এ দ্বীপরাষ্ট্রটিতে একের পর এক বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। রাজধানী কলম্বোতে, কোচকিকাদ, কাতুয়াপিটিয়া ও বাট্টিকালোয়া নামক স্থানের তিনটি গির্জায় এবং কলম্বো শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত দেশের বড় তিনটি পাঁচ তারকা হোটেল সাংরি লা, কিংসবেরি এবং সিনামন গ্রান্ড হোটেলে অন্তত আটটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে৷ এসব হামলায় নিহতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত অন্তত ২৯০, যার মধ্যে ৩৫ জন বিদেশি নাগরিক৷ এছাড়া আহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৫০০ ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে৷ হামলার সময় গির্জাগুলোতে খ্রিস্টধর্মের ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডে উপলক্ষে প্রার্থনা চলছিল৷ এ হামলার সাথে জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ২৪ জনকে আটকের খবর পাওয়া গেছে৷

হামলার দু সপ্তাহ আগেই গোয়েন্দা সংস্থার সতর্কবার্তা রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছানো হয়েছিল বলে মন্ত্রিপরিষদের মুখপাত্র জানিয়েছেন৷ সেখানে দুয়েকটি হামলার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল৷ তবে হামলা যে এত বড় আকারে রূপ নেবে, সেটা কারও ধারণার মধ্যেও ছিল না৷ গোয়েন্দা সংস্থার সতর্কবার্তায় ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত (এনটিজে) নামক সংগঠনের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে৷ সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, জামাত আল তৌহিদ আল ওয়াতানিয়া নামক একটি সংগঠন এ সিরিজ বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে৷ এটি এনটিজে এর কোনো গ্রুপ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷

হামলা যে সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী কর্তৃকই হয়ে থাকুক, প্রশ্ন হচ্ছে, এসবের শেষ কোথায়? মানবসভ্যতার চূড়ান্ত পরিণতি পর্যন্তই কি এর ব্যাপ্তি? মাসখানেক আগেও নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলার শিকার হয়েছেন নামাজরত মুসল্লিরা৷ ফ্রান্সের প্যারিস, ভারতের মুম্বাই, ব্রিটেনের লন্ডন, পাকিস্তানের পেশোয়ার, লেবাননের বৈরুত— ইতিহাস ঘাটলে এ রকম অসংখ্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে৷ খুব বেশি দূর আমাদের যেতে হবে না, ২০০১ সালে টুইন টাওয়ার হামলার মধ্য দিয়ে যে সন্ত্রাসবাদের উত্থান, গত বিশ বছরে তা ফুলেফেঁপে মারাত্মক শক্তিশালী সত্তায় রূপ নিয়েছে৷ ২০০১ সাল-পরবর্তী সময়ে সন্ত্রাসীদের সাংগঠনিক সক্ষমতা বেড়েছে বহুগুণে। উন্নত অস্ত্রশস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও আর্থিক ভিত্তিও হয়েছে মজবুত। ইসলামিক স্টেট, বোকো হারাম, তালেবান, আল-কায়েদা, ফুলানি ও আল-শাবাবের মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর অনুপ্রেরণায় আরও অসংখ্য সন্ত্রাসবাদী ও জঙ্গি গোষ্ঠীর তৎপরতায় সারা বিশ্বই এখন যেন এক প্রাক্-নরকে পরিণত হয়েছে৷ গোটা পৃথিবীর মানচিত্রটাই এখন এসব সন্ত্রাসবাদী শক্তির নিজস্ব মানচিত্রে রূপ নিয়েছে৷ কেবল গত ১৫ বছরেই ছোট-বড় মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী লক্ষাধিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে৷

এমন পরিস্থিতি যখন পৃথিবীজুড়ে, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে— এসব হিংসা-বিদ্বেষ, রেষারেষিতে প্রকৃতপক্ষে কেউ কি লাভবান হচ্ছে? এসব হত্যা ও ধ্বংসের খেলায় মেতে ওঠার মধ্য দিয়ে মানবসভ্যতা কেবল ক্ষতিগ্রস্তই হচ্ছে না, এক অজানা অনিশ্চিত আশঙ্কায় নিপতিত হচ্ছে ক্রমেই৷ তাই এখনই সময়, পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একক ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক প্রস্তুত করতে হবে৷ সন্ত্রাসবিরোধী শক্তিকে মজবুত করতে হবে, সন্ত্রাসবাদের বিপরীতে কঠোর সম্মিলত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে৷ সেই সাথে, সকল স্বার্থকে পাশ কাটিয়ে সন্ত্রাসবাদমুক্ত পৃথিবী গড়তে প্রতিটি রাষ্ট্রকেই নীতিগতভাবে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করতে।

ওডি/আরএইচএস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড