• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

যানজটে নয়, স্বস্তিতে এক নম্বর হতে হবে

  অধিকার ডেস্ক    ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:৫৪

একটি শহরের গল্প শোনা যাক৷ বসবাসযোগ্যতার বিবেচনায় একটি বড় শহরের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ রাস্তা থাকা দরকার, সেখানে এ শহরে আছে ৭ শতাংশের কম৷ এটি পৃথিবীর সবচাইতে ঘনবসতিপূর্ণ শহর, যেখানে প্রতি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ৫ লাখের বেশি৷ এ শহরে নিবন্ধিত যানবাহন রয়েছে ১৩ লক্ষ ৯৫ হাজার ৯১৯টি, যার প্রায় ৫০ শতাংশ মোটরসাইকেল এবং ১৫ শতাংশ প্রাইভেট কার৷ এসব ব্যক্তিগত গাড়ি শহরের মোট যাত্রীসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশকে বহন করতে শহরটির এ স্বল্প পরিমাণ সড়কের ৫০ শতাংশ দখল করে রাখছে৷ বাকি ৫০ শতাংশ জায়গায় যে বাসগুলো চলাচল করতে পারছে তার পরিমাণ যানবাহনের মোট সংখ্যার মাত্র ২.৫ শতাংশ৷ এ আড়াই ভাগ যানবাহন যাত্রী পরিবহন করছে মোট সংখ্যার প্রায় ৮৮ শতাংশ৷

শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো একজন-দুজন যাত্রী বহনকারী ব্যক্তিগত গাড়ির তোপের মুখে এক অর্থে প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে বলা চলে৷ এখানে যানবাহনগুলো প্রতি ঘণ্টায় গড়ে মাত্র ৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে৷ ফলস্বরূপ এ শহরে দৈনিক গড়ে প্রায় ৫০ হাজার কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, যার আর্থিক মূল্য বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা৷ এমন সব অপ্রত্যাশিত বৈশিষ্ট্যের দরুণ এ শহরটি সম্প্রতি যানজটে পৃথিবীর শীর্ষ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে৷ সঙ্গত কারণেই সময় অপচয় সূচকেও এ শহরটি পৃথিবীর সকল দেশকে ছাড়িয়ে প্রথম স্থানটি দখলে নিয়েছে৷ সুদীর্ঘকাল ধরে এমনই এক নিশ্চল, নিথর, স্থবির শহরে রূপ নিয়েছে যে শহরটি, তার নাম ঢাকা৷

দেশের রাজধানী, রাষ্ট্রীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সকল কর্মকাণ্ডের মূল কেন্দ্র যে শহরটি, তার এ রকম ভয়াবহ রূপের রহস্য কী? দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা-গবেষণা-পর্যালোচনায় যে কারণগুলো বের হয়ে এসেছে, তার মধ্যে প্রধানতম হলো প্রতিনিয়ত আশঙ্কাজনক হারে এর জনসংখ্যা বৃদ্ধি৷ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস করতে না পারলে যানজট কমাতে যত ধরনের ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হোক না কেন, আদতে তা কোনো কাজেই আসবে না৷

ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণটি হলো অতি কেন্দ্রীকরণ৷ হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মোহনীয় সুরের মতোই কর্মসংস্থানের খোঁজে ব্যাপক পরিমাণে মানুষ ভিড় জমাচ্ছে ঢাকায়৷ তাই, অগ্রাধিকারভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকেন্দ্রীকরণ করা প্রয়োজন; যাতে ঢাকাগামী বিপুল এ জনসংখ্যা অন্যান্য শহরগুলোতে ভাগ হয়ে যেতে পারে৷

যানজটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাধিক্য৷ একজন বা দুজন যাত্রী বহন করতে এ গাড়িগুলো রাস্তার একটি বড় অংশ দখলে নিয়ে নিচ্ছে৷ তাই অযাচিতভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির নিবন্ধন দেয়ার আগে শহরে চলাচলযোগ্য মোট গাড়ির একটি আনুমানিক সংখ্যা নির্ধারণ করা প্রয়োজন৷ একই সাথে গণপরিবহণগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহও তৈরি করা দরকার৷

যানজট ও সময় অপচয় সূচক ছাড়াও আরও একটি সূচকে ঢাকা বিশ্বে এক নম্বর অবস্থানে রয়েছে; সেটা হলো ট্রাফিক অদক্ষতা সূচক৷ বিআরটিএ বলছে, ঢাকা শহরের প্রধান সড়কগুলোতে অন্তত ১৯ ধরনের যানবাহন চলাচল করছে৷ এ যানবাহনগুলোর একটির সাথে আরেকটির তেমন কোনো সামঞ্জস্য নেই৷ ফিটনেসে তো নেই-ই, গতিতেও নেই৷ পৃথিবীর আদর্শ শহরগুলোর প্রধান সড়কে কাছাকাছি গতিসম্পন্ন যানবাহনের অনুমতি দেয়া হয়৷ কেননা গতিতে সামঞ্জস্য না থাকলে সামগ্রিকভাবে যানবাহনের দ্রুততা কমে আসে৷ তাই ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে গাড়ির বৈচিত্র্য যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে৷ পাশাপাশি সড়কগুলো দখলমুক্ত করারও কোনো বিকল্প নেই৷

পৃথিবীর অন্যান্য বড় শহরগুলোর তুলনায় ঢাকায় রাস্তার পরিমাণ এমনিতেই অনেক কম, মাত্র এক-চতুর্থাংশের মতো; তার ওপর আবার যথেষ্ট পরিমাণ ফুটপাত না থাকা, ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়া, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা, অযাচিতভাবে রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি ইত্যাদি কারণে রাস্তার একটি বড় অংশ ব্যবহার-অযোগ্য রয়ে যাচ্ছে৷ এসব দিক বিবেচনায় যত দ্রুত সম্ভব যানজট নিরসনে বাস্তবসম্মত ও গঠনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷ অতি দ্রুত ঘটে যাওয়া নগরায়নের সাথে তাল মিলিয়ে এসব সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা হয়তো বসবাস-অযোগ্য শহরে পরিণত হয়ে যাবে৷

ওডি/ আরএডি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড