• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কর্মসংস্থান ও গণমাধ্যমের বিকল্প সহায়ক হয়ে উঠতে পারে মোবাইল সাংবাদিকতা

  অধিকার ডেস্ক    ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ২০:৫৯

আমাদের নিশ্চয় মনে আছে, মার্চের শেষ দিকে বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার পর ভবনের ভেতরে আগুন ও ধোঁয়ার মধ্যে আটকা পড়া মানুষদের ছুটোছুটির একটি ভিডিওচিত্র বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছিল৷ ভিডিওচিত্রটিতে বারবার শোনা যাচ্ছিল, ‘আমাদের জন্য সিঁড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করুন৷’ আগুনের তাপে এবং ধোঁয়ার আক্রমণে যেখানে ভবনের সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠাই দুষ্কর, যখন সকল টেলিভিশন চ্যানেল রাস্তার অপর পাশ থেকে কেবল ভবনের বাইরের অংশের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করতে পারছে, ঠিক এমন একটি সময়ে ভবনের ভেতরের সেই ভিডিওটি দারুণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল৷ শক্তিশালী মিডিয়ার এ যুগে টেলিভিশন ক্যামেরার চাইতেও শক্তিশালী হয়ে ওঠা ডিভাইসটি ছিল একটি মোবাইল ফোন৷ মোবাইল ফোন বা ট্যাবলেট পিসি বা যে কোনো চলমান ডিভাইসের সাহায্যে তথ্য প্রকাশের এ ধরনের কাজকে বর্তমান বিশ্বে মোবাইল সাংবাদিকতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে৷ যারা মোবাইল সাংবাদিকতা করছেন, তাদের বলা হচ্ছে মোজো (mojo)৷

তথ্যপ্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের এ সময়ে যেখানে উন্নত প্রযুক্তি ও সর্বাধুনিক ক্যামেরা সেটআপ পৌঁছাতে পারছে না, সেখানে অতি সহজেই কাজ করতে পারছে স্মার্টফোন৷ বিশেষত সারা পৃথিবীব্যাপী মোবাইল ফোনের ব্যবহার যে অবিশ্বাস্য গতিতে বেড়ে চলেছে, তা দেখে মোবাইল সাংবাদিকতার গুরুত্ব সহজেই অনুমান করা যায়৷ তথ্য বলছে, বর্তমান পৃথিবীতে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা সাড়ে চারশ কোটির উপরে৷ কেবল এশিয়া মহাদেশেই মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা তিনশ কোটির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে৷ বাংলাদেশে এ সংখ্যা সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যানুসারে ১৫ কোটি ৬০ লাখ৷ মোবাইল ফোনের এ ব্যাপক ব্যবহারকে সময়োপযোগী ও সমাজকল্যাণমূলক কাজে লাগানোর সুযোগ সৃষ্টি করা গেলে বর্তমান সময়কালে নাগরিক সাংবাদিকতা (সিটিজেন জার্নালিজম) একটি অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যেতে পারে৷

ফেইসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, বর্তমানে পৃথিবীতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় মানুষের সংখ্যা ২৭০ কোটির বেশি৷ সময়ের সাথে সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের হার ব্যাপক বৃদ্ধির কারণে তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রটি এখন যেমন আরও উন্মুক্ত হয়েছে, তেমনি বেড়েছে এর দ্রুততাও৷ গণমাধ্যমের যেখানে পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে, মোবাইল ফোন সেখানে পৌঁছে যেতে পারছে অনায়াসেই৷ ফলে যে কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলের খবরাখবরও মোবাইল ফোনের ভিডিও ধারণ ক্ষমতা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় মুহূর্তেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে৷ তাই আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে নাগরিক সাংবাদিকতার উৎকর্ষ সাধনে মোবাইল ফোনের ব্যবহার একটি দারুণ গুণগত উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম৷ এসব দিক বিবেচনা করেই সারা পৃথিবীতে মোবাইল সাংবাদিকতাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সংবাদমাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে৷ পৃথিবীর বড় বড় বার্তাকক্ষ মোবাইল ফোনে ধারণ করা ছবি ও ভিডিওচিত্রকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করছে৷ যদিও বাংলাদেশে মোবাইল সাংবাদিকতার ধারণাটি এখনও বিস্তৃত হতে পারেনি, এ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে ইতোমধ্যেই রাশিয়াসহ ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই মোবাইল সাংবাদিকতা বিষয়ক কোর্স ও প্রশিক্ষণব্যবস্থা চালু করা হয়েছে৷

ইন্টারনেট ওয়ার্ল্ড স্ট্যাটাস কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্টারনেট ব্যবহারে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫ম৷ ফেইসবুক বলছে, ফেইসবুক ব্যবহারের ক্ষেত্রে পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান ৮ম৷ বিটিআরসি বলছে, দেশে বর্তমানে সাড়ে পনেরো কোটির বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী রয়েছেন৷ এ তিনটি তথ্য সমন্বয় করলে খুব সহজেই বোঝা যায়, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের একটি দারুণ সহায়ক বিকল্প হয়ে উঠতে পারে মোবাইল সাংবাদিকতা৷ এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে বাংলাদেশে মোবাইল সাংবাদিকতা একটি অন্য মাত্রায় উন্নীত হতে পারে৷ প্রায় ২৭ লক্ষ বেকারের এ দেশে স্বাধীন পেশা হিসেবেও মোবাইল সাংবাদিকতা অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বলেই মনে হচ্ছে৷

তবে, যেখানে যত বেশি সম্ভাবনা থাকে, সেখানে আশঙ্কাও থাকে তত বেশি৷ অবাধ তথ্যপ্রবাহের অন্যতম বৃহৎ একটি নেতিবাচক দিক হচ্ছে, গুজব ছড়িয়ে দিতে এর ব্যবহার৷ কেবল একটি গুজবের কারণে যে একটি গ্রামের একটি সম্প্রদায় সম্পূর্ণরূপে উজাড় হয়ে যেতে পারে— এ রকম ঘটনার সাক্ষী তো আমরা নিজেরাই৷ তাই নেতিবাচক নানান সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে ইতিবাচকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে মোবাইল সাংবাদিকতাকে স্বাধীন কর্মসংস্থানের একটি উপায় হিসেবে চিহ্নিত করতে পারলে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি মিডিয়া হিসেবে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি মোবাইল সাংবাদিকতা দেশের শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর বেকারত্ব লাঘবেও ভূমিকা রাখতে পারবে৷

ওডি/আরএডি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড