• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মাদকের অন্ধকার গিলে খাচ্ছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা

  অধিকার ডেস্ক    ০৬ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:২৬

ছয় হাজার কোটি টাকা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে দেশে বর্তমানে কেবল ইয়াবার বাজারের আর্থিক মূল্য এটি। এ তথ্য দিয়েছেন খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। তথ্য বলছে, দেশে প্রতিদিন প্রায় ২০০ কোটি টাকার মাদক কেনা-বেচা হয়ে থাকে এবং এর সাথে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ৩০ লাখ মাদক ব্যবসায়ী। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট কর্তৃক পরিচালিত একটি সমীক্ষা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩৬ লক্ষ। এর অন্তত ৭০ থেকে ৮০ ভাগ রয়েছে যারা ইয়াবা দ্বারা আসক্ত।

একটা সময় দেশে মাদক হিসেবে ফেনসিডিলের ব্যবহার বেশি হতে দেখা গেলেও ১৯৯৯ সাল থেকে সে স্থান দখল করতে থাকে ইয়াবা। গবেষকেরা বলছেন, দেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৪০ কোটি পিস ইয়াবা ঢুকছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমানে মাদক চোরাচালানে বাংলাদেশ একটি সুবিধাজনক আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের সীমান্ত এলাকাগুলোতে প্রায় ২৫০টির মতো পয়েন্ট আছে যেগুলোর ভেতর দিয়ে মাদক বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

মাদক ব্যবসায় ও ব্যবহারের উপর্যুক্ত তথ্যসমূহ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার সময় এসেছে। কেননা মাদক ব্যবসায়ের এ ক্রমবর্ধমান বাজার সামাজিক ও অর্থনৈতিক নানান ক্ষেত্রে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করছে। বিশেষত অর্থনৈতিক খাতের ওপর মাদক ব্যবসায়ের প্রভাব প্রকট হয়ে উঠেছে।

মাদক গ্রহণকৃত মানুষের মধ্যে ভয়ানক অপরাধপ্রবণতা সৃষ্টি করে। একটি জরিপ বলছে, দেশে মাদকসেবীদের প্রায় ৮০ শতাংশ যুবক, যার ৫০ শতাংশ কোনো না কোনো অপরাধের সাথে জড়িত। এভাবে সমাজে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির ফলে তার সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যের ওপর।একদিকে ব্যবসায়ের পরিবেশ যেমন বিনষ্ট হচ্ছে, এর দরুণ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের উৎসাহও হারিয়ে ফেলছেন। এছাড়া, মাদকের বহুল বিস্তার বিদেশে অর্থ পাচারেরও একটি অন্যতম কারণ।যেহেতু মাদক অবৈধ, তাই মাদক ব্যবসায় থেকে উপার্জিত অর্থ দেশের মধ্যে কাজে লাগানোর ঝুঁকি এড়াতে তা পাচার করা হচ্ছে অন্য দেশে। যে বিপুল পরিমাণ অর্থ মাদকগ্রহণের উদ্দেশ্যে ব্যয় হয়, তা থেকে দেশের অভ্যন্তরে একটি বিশাল বাণিজ্যিক বিনিয়োগ সৃষ্টি করা যেত, যা থেকে রাষ্ট্র বঞ্চিত হচ্ছে।

তাছাড়া, মাদকসেবনের ফলে নানাবিধ রোগব্যাধি বৃদ্ধি পাওয়ায়- এর পেছনে চিকিৎসাখাতেও একটি বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে, যা রাষ্ট্রীয় অন্যান্য অর্থনৈতিক লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করা সম্ভব। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মাদক কেবল পারিবারিক বা সামাজিক সমস্যাই নয়, বরং রাষ্ট্রের বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় সামগ্রিক অর্থে এটি একটি বৃহৎ জাতীয় সমস্যাই বটে।

রাষ্ট্রীয় বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় তাই যত দ্রুত সম্ভব মাদক ব্যবসায় ও মাদকসেবন উভয় বিষয়কে অগ্রাধিকারভিত্তিতে গুরুত্ব দিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মাদক ব্যবসায় বিস্তারের অন্যতম প্রধান উদ্দীপক দেশের অভ্যন্তরে মাদকের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কর্মসংস্থানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় অর্থ উপার্জনের তাগিদে মানুষ এসব ব্যবসায়ের দিকে ঝুঁকছে। তাই দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলে অনেকেই এসব অবৈধ পথে পা বাড়ানো থেকে বিরত হবেন। এছাড়া, মাদক সম্পর্কিত মামলাগুলোর বিচারকাজ যথেষ্ট দক্ষতার সাথে পরিচালিত না হওয়ার ফলে মামলার দীর্ঘসূত্রতা এবং বিচারহীনতাও মাদক ব্যবসায়কে উৎসাহিত করছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে বিচারাধীন মাদক মামলা রয়েছে সাড়ে তিন লাখের ওপর। এমনকি এর মধ্যে ২৭ বছরের পুরোনো মামলাও রয়েছে৷ এভাবে বছরের পর বছর কোনো বিচার না হওয়ায় মাদক ব্যবহার ও মাদক ব্যবসায় পরিচালনায় পরোক্ষ উদ্দীপনা তৈরি হচ্ছে। তাই মাদক সম্পর্কিত মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সেই সাথে ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ নানা বিকল্প উপায় ব্যবহারের মাধ্যমে মাদকের ভয়াবহতা বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, পর্যাপ্ত পরিমাণে গড়ে তুলতে হবে মাদক নিরাময় কেন্দ্র। সর্বোপরি, বাংলাদেশকে যেন কেউ মাদক পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সুসংহত করারও কোনো বিকল্প নেই৷

ওডি/আরএডি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড