• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কেমন করছে বাংলাদেশ?

  অধিকার ডেস্ক    ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ১৬:০৩

সম্পাদকীয়

গত কিছুদিন যাবত একটি বিষয় বিভিন্ন সচেতন মহলে বিশেষভাবে আলোচিত হতে দেখা যাচ্ছে৷ দিনকে দিন দেশে অপরাধপ্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিধায় এক ধরনের দুশ্চিন্তার রেখাপাত সৃষ্টি হচ্ছে৷ অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি একটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও হতাশাব্যঞ্জক সংবাদ হলেও প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে বসে এ নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবার কোনো কারণ নেই৷

বর্তমান বিশ্বে সামগ্রিকভাবে প্রায় প্রতিটি দেশেই অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের এখানে সে বৃদ্ধি খুব বেশি মারাত্মক নয় বলেই মনে হয়৷ গত দেড় যুগের গড় অনুযায়ী বাংলাদেশের থানাগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ১০টি করে হত্যা মামলা রুজু হয়েছে। হিসাবটি বাহ্যত খুব ভয়ংকর মনে হলেও আদতে তা নয়৷ পৃথিবীর শীর্ষ পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যদি তুলনা করা হয়, তাহলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়ায়— দেখা যাক৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের চাইতে প্রায় ৬৬ গুণ বড়৷ অথচ বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে যে সংখ্যক মানুষ বাস করে, তা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় প্রায় ৩৪ গুণ বেশি৷ অপরাধবিজ্ঞানীদের মতে, অপরাধ-সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান উদ্দীপক হলো জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি৷ সে হিসাবে বাংলাদেশে খুনের ঘটনা সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের চাইতে অন্তত ত্রিশ গুণ বেশি হবার কথা৷ কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যাচ্ছে, প্রকৃত অবস্থা উল্টো৷ এফবিআই এর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে দৈনিক গড়ে প্রায় ৪২টি খুনের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে যা বাংলাদেশের তুলনায় চার গুণ বেশি৷

সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসাবে বাংলাদেশ উতরে গেলেও প্রকৃতপক্ষে কোনো যুক্তিতেই অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধিকে মেনে নেয়া যায় না৷ গত ২০ মার্চ প্রকাশিত সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের সুখী দেশের তালিকায় ১৫৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৫৷ আগের বছর ১১৫তম অবস্থানে থাকলেও এবার বাংলাদেশের ১০ ধাপ অবনতি হয়েছে৷ এমনকি পাকিস্তানের চাইতেও বাংলাদেশ ৫৮ ধাপ পিছিয়ে৷ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, অপরাধ প্রবণতার হার যদি স্বাভাবিক অবস্থার চাইতেও ভালো হয়ে থাকে, তাহলে সুখী দেশের সূচকে আমরা এত পিছিয়ে পড়েছি কেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুব সোজা৷ অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির হার আশঙ্কাজনক না হলেও দেশে আইনের শাসন নিশ্চিতে ব্যর্থতার দিকটি দিন দিন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে৷

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৫ লাখ ৭ হাজার ৮৯৮টি৷ বাংলাদেশের ইতিহাসে এ সংখ্যাটি সর্বোচ্চ৷ শুধু ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতেই মামলার সংখ্যা ৭৩ হাজার ৮৯৯টি। তাছাড়া সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে ৫ লাখ ২৭ হাজার মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। বোঝাই যাচ্ছে, দেশে অপরাধ যে পরিমাণে হচ্ছে, তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না৷

পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে প্রতি এক লক্ষ মানুষের জন্য বিচারক আছেন মাত্র এক জন৷ অপরদিকে, প্রতি এক লক্ষ মানুষের জন্য বিচারকের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে ১১ জন, কানাডায় ৮ জন, ইংল্যান্ডে ৫ জন, অস্ট্রেলিয়ায় ৪ জন৷ এমনকি পাশের দেশ ভারতেও এক লক্ষ মানুষের জন্য ২ জন বিচারক রয়েছেন। ভারতে প্রতি একজন বিচারকের বিপরীতে বিচারাধীন মামলা রয়েছে ১ হাজার ৩৫০টি৷ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি ২ হাজার ১২৫৷ ভারতে একজন বিচারক যখন বছরে ৫১৬টি মামলা নিষ্পত্তি করছেন, তখন এদেশে একজন বিচারক বছরে নিষ্পত্তি করছেন ৭০০ মামলা। বিচারক স্বল্পতার কারণে গত এক যুগে শুধু ঢাকার ৪০টি আদালতে মামলা বেড়েছে চার গুণেরও বেশি। সেখানে এখন মোট মামলার সংখ্যা ৪ লক্ষ ৪১ হাজার ৪৭১টি৷

বিশেষজ্ঞদের মতে, মামলার এ বিশাল জটের পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ তিনটি৷ এর মধ্যে প্রথম কারণটি হলো, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি। দ্বিতীয়ত, বিচারকের ঘাটতি৷ তৃতীয়ত, নিম্ন আদালতের ওপর নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ।

এসব অব্যবস্থাপনার ফল মিলেছে হাতে হাতে৷ সম্প্রতি প্রকাশিত আইনের শাসন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারেই তলানিতে৷ ১২৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অবস্থান করছে ১১২তে। গত বছরের তুলনায় অবনতি হয়েছে ১০ ধাপ।

অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির হার অন্যান্য দেশের তুলনায় কম হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে তা আমাদের জন্য মারাত্মক হয়ে উঠছে একটি কারণেই, আর তা হলো বিচারকার্যে অদক্ষতা। ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতাই আমাদের দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতিতে নিপতিত করছে। তাই এ ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিচারবিভাগকে বাস্তব অর্থেই পূর্ণরূপে স্বাধীন সত্তায় পরিণত করার কোনো বিকল্প নেই।

ওডি/আরএইচএস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড