• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

প্রযুক্তির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচুক শিশুরা 

  অধিকার ডেস্ক    ২৭ মার্চ ২০১৯, ১৪:০০

সম্পাদকীয়

শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে লেখাপড়ার পাশাপাশি যে জিনিসটি সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হচ্ছে খেলাধুলা৷ শিশুর প্রত্যাশিত শারীরিক গঠন নিশ্চিত করতে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ যতটা প্রয়োজন, ততটাই প্রয়োজন খেলাধুলা৷ মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রেও খেলাধুলা দারুণ ভূমিকা রাখে৷ মানুষের সাথে মিশতে পারা, একাত্মতাবোধ তৈরি হওয়া, পরমতসহিষ্ণুতার শিক্ষা— এগুলোর জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়৷ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই খেলার মাঠের পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে৷ তাই এ বিষয়টি প্রতিনিয়ত মারাত্মক আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠছে৷

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতিটি মানুষের জন্য ৯ বর্গমিটার সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রয়োজন৷ কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেখা যাচ্ছে যে, ঢাকা শহরের খেলার মাঠ ও পরিবেশবান্ধব পার্কের পরিমাণ দিনকে দিন কমে যাচ্ছে৷ নগরীর বেশিরভাগ খেলার মাঠই বিভিন্ন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কর্তৃক বেদখল হয়ে আছে৷ বিশেষত বিভিন্ন ক্লাবের নিয়ন্ত্রণে থাকা মাঠগুলোতে সংশ্লিষ্ট ক্লাবের সাথে যুক্ত বাচ্চারা ছাড়া আর কারও ঢোকার প্রবেশাধিকার নেই৷ ফলে শিশুদের খেলাধুলার সুযোগ তো নষ্ট হচ্ছেই, বয়স্কদের হাঁটাহাঁটি করার ব্যবস্থাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে৷ এমনকি কোনো কোনো মাঠে তৈরি হচ্ছে নানান স্থাপনা; কোথাও কোথাও আবার মাঠ দখল করে রাখা হয় ট্রাকসহ নানা ধরনের গাড়ি৷ বিভিন্ন উপায়ে নগরীর বেশিরভাগ মাঠ অন্যায়ভাবে দখলদারিত্বের শিকার হওয়ায় বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হচ্ছে৷

খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য নগরীর মোট আয়তনের দশ ভাগ খোলা জায়াগা থাকার কথা থাকলেও রাজধানীতে তা রয়েছে মাত্র চার ভাগ। খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় শিশুরা ঝুঁকে পড়ছে কম্পিউটার ও নানা রকম ভিডিও গেমস এর দিকে৷ দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারের ফলে কম্পিউটার মনিটরের পর্দা একদিকে যেমন শিশুর দৃষ্টিশক্তির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে, শারীরিক কসরত কমে যাওয়ায় নানান শারীরিক জটিলতা বৃদ্ধিতেও তা ভূমিকা রাখছে৷ কেবল শারীরিকভাবেই নয়, মানসিকভাবেও শিশুরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ হলো ভিডিও গেমসের প্রতি তাদের আসক্তি৷ বেশিরভাগ ভিডিও গেমসেই অস্ত্রচালনা ও মানুষ হত্যার ব্যাপারটিই মুখ্য বিনোদন হওয়ায় শিশুদের মধ্যে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক কাঠিন্য বা নিষ্ঠুরতার ভাব তৈরি হচ্ছে; গণ্ডগোল ও রক্তারক্তি দেখলে তাদের মধ্যে যতটা ভীতির সঞ্চার হবার কথা, বাস্তবে তা বহুলাংশে হ্রাস পেয়ে যাচ্ছে৷ শুধু তা-ই নয়, প্রযুক্তির প্রতি অতিমাত্রায় আসক্তি যে কোনো জিনিসের প্রতি শিশুর মনোযোগ দেবার ক্ষমতা এবং স্মৃতিশক্তির ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে৷

খেলাধুলার মতো নিখাদ ও নিরীহ বিনোদনের সুযোগ কমে যাওয়ায় নৈতিকতার প্রশ্নেও শিশুদের বিকাশে বিঘ্ন ঘটছে৷ খেলার মাঠে যাবার সুযোগ কমে যাওয়ায় মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার শিশুদের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে৷ যার ফলস্বরূপ অনেক ক্ষেত্রেই শিশুরা তাদের বয়স-অনুপযোগী অনুষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত হবার সুযোগ পাচ্ছে৷ অগ্রহণযোগ্য ভিডিওদৃশ্যের প্রতি শিশুদের আকর্ষণ তৈরি হলে পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়৷ তাই এ ঘরকুনো প্রযুক্তিমুখিতার কারণে সামগ্রিকভাবে পুরো সমাজব্যবস্থাকেই প্রযুক্তি-আসক্তির অপ্রত্যাশিত ফলভোগ করতে হচ্ছে৷

এ সময়ের বেশিরভাগ শিশুর মধ্যেই একা একা থাকা, কারও সাথে মিশতে না পারা, প্রাণ খুলে হাসতে না পারা, সামাজিকতার অভাব ইত্যাদি যে নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো ধরা পড়ছে, তার প্রধানতম কারণ খেলাধুলা ও সুস্থ বিনোদনের সুযোগ নষ্ট হওয়া৷ বোঝা যাচ্ছে যে খেলার মাঠ ও পার্ক কমে যাওয়া কোনো সাময়িক সমস্যা নিশ্চয় নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক সমস্যা হিসেবে পরিণতি পাবার প্রথম লক্ষণ৷ আর তাই, সমাজ-রাষ্ট্রের সুদূরপ্রসারী কল্যাণের কথা মাথা রেখে ঢাকাসহ সারা দেশের খেলার মাঠগুলোকে অন্যায় ও অবৈধ দখলদারিত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা এখন সময়ের দাবি৷

ওডি/আরএইচএস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড