• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জনসম্পদের অপচয় রোধ করতে হবে

  সম্পাদকীয়

২৩ মার্চ ২০১৯, ২১:৩৬
সম্পাদকীয়

দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীরা যে সকল সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন, বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হওয়া সেগুলোর মধ্যে অন্যতম৷ সামান্য ত্রুটির কারণে পরীক্ষা-নিরীক্ষার অসংখ্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে থাকছে বছরের পর বছর৷ এভাবে পড়ে থাকতে থাকতে এর একটা বড় অংশ সম্পূর্ণরূপে অচল হয়ে যাচ্ছে৷ ফলে নষ্ট হচ্ছে সরকারি হাসপাতালের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ৷ একদিকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি যেমন হচ্ছে, এর ভুক্তভোগী হচ্ছে দেশের অগণিত দরিদ্র মানুষ যাদের চিকিৎসার জন্য একমাত্র ঠিকানা সরকারি হাসপাতাল৷

এসব সমস্যা সমাধানে এক যুগ আগে দেশের ৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে চালু করা হয় ইলেক্ট্রো মেডিকেল টেকনোলজি বিভাগ৷ নতুন বিষয় হওয়ায় নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হবার সম্ভাবনা থাকলেও চাকরি পেতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না এই আশায় অসংখ্য শিক্ষার্থী এ বিভাগে ভর্তি হয়৷ এখন পর্যন্ত আটটি ব্যাচে প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থী এ বিভাগ থেকে পাস করে বের হয়েছেন৷ এরপরে কেটে গেছে আট বছর৷ অথচ এখন পর্যন্ত তাদের চাকরির কোনো ক্ষেত্র তৈরি করা হয়নি৷ সরকারি হাসপাতালগুলোতে ইলেক্ট্রো মেডিকেল টেকনোলজি বিভাগের প্রকৌশলীদের জন্য এখনো পর্যন্ত কোনো পদ সৃষ্টি না করায় এ ছয় হাজার শিক্ষার্থী বেকারজীবন যাপন করছেন৷ তাছাড়া, এ বিভাগে উচ্চতর শিক্ষার কোনো ব্যবস্থাও তৈরি করা হয়নি বিধায় দ্বিমুখী সংকটের সৃষ্টি হয়েছে৷ এত বড় একটা উদ্যোগ নেয়ার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগে উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে না পারার ব্যাপারটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক৷ এই দ্বিমুখী সমস্যার কারণে পাসকৃত প্রকৌশলীরা চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ছেন৷ কেবল তা-ই নয়, সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিভাগে বর্তমানে অধ্যয়নরত আরও যে দুই হাজার শিক্ষার্থী আছেন, তাদের মধ্যেও ভবিষ্যৎ কর্মজীবন নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হচ্ছে৷

শিক্ষার্থীদের মতে, যদি এ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের সুযোগ থাকতো, তাহলে অনেকেই বিএসসি প্রকৌশলী হবার যোগ্যতা অর্জন করতে পারতেন; চিকিৎসাক্ষেত্রে অবদান রাখার মাধ্যমে দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পেতে পারতেন৷ একদিকে যেমন উচ্চতর ডিগ্রি লাভের সুযোগ নেই, আবার হাসপাতালগুলোতে ডিপ্লোমা ইন ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার পদও সৃষ্টি করা হয়নি; যদিও এ পদে প্রকৌশলী নিয়োগ দিলে চিকিৎসাখাতে সরকারের নানাবিধ অপচয় রোধ করা যেত এবং এ খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও সহজেই কমিয়ে আনা সম্ভব হতো৷ কেবল যথাযথ কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার অভাবে বহুমুখী এ অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, যা অচিরেই সমাধান করা জরুরি৷

সারা দেশের পাসকৃত শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে দাবি আদায়ে আন্দোলন করলেও তেমন কোনো কাজ হয়নি৷ বিষয়টি সম্পর্কে ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছেন৷ এমনকি সংসদের উত্তর-পর্বেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে৷ তবু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গৃহীত হতে দেখা যাচ্ছে না৷ এমন পরিস্থিতিতে, যে কোনো নতুন বিভাগ ও বিষয় চালু করার পূর্বে সে ব্যাপারে যথেষ্ট চিন্তাভাবনা ও 'স্টাডি' করা হয় কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে৷ এত বছরেও এ সমস্যা সমাধানের কোনো পথ উন্মোচিত না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরিকল্পনাহীনতার ব্যাপারটি স্পষ্ট৷ এ বিপুল পরিমাণ প্রকৌশলীকে রাষ্ট্রের সেবায় নিযুক্ত করার মাধ্যমে জনসম্পদের এহেন অপচয় রোধ করতে হবে৷ সেই সাথে, পরবর্তী সময়ে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ধরনের কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়নের পূর্বে একটি সুসংহত ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কোনো বিকল্প নেই৷ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিরা এ ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠবেন— এই প্রত্যাশা৷

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড