সম্পাদকীয়
স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেল৷ ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে৷ এ দীর্ঘ সময়েও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত তালিকা প্রস্তুত করা গেল না৷ অথচ বিস্ময়করভাবে সত্য হলো কেবল সরকারিভাবেই মুক্তিযোদ্ধাদের ভিন্ন ভিন্ন পাঁচটি তালিকা পাওয়া যায়৷
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সমগ্র দেশের মানুষ যে দলটিকে অনুসরণ করে জীবনমায়া তুচ্ছ করে দেশমাতাকে মুক্ত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সে দলটিই টানা তৃতীয়বারের মতো এখন রাষ্ট্রক্ষমতায়৷ সঙ্গত কারণেই দেশবাসীর আশা ছিল যে এবার মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে৷ সরকার সে ব্যাপারে কাজ শুরু করলেও আদালতের নির্দেশনায় সে কাজ পুনরায় প্রলম্বিত হলো৷ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী শুরুতে ২৬ মার্চের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আশ্বাস দিলেও তা আপাতত থমকে গেছে৷
দেশ ও দেশের মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তি ও স্বাধীনতার লক্ষ্যে একাত্তরে যারা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, নিঃসন্দেহে সেখানে তাদের কোনো ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্ক্ষা বা ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থের কোনো সুযোগ বা উদ্দেশ্য ছিল না৷ যে জাতির মুক্তির জন্য তারা যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত ছিলেন, সে জাতি তাদের উপযুক্ত মর্যাদা প্রদানে কোনো কার্পণ্য করেছে, তা যদিও বলা যাবে না; মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানস্বরূপ রাষ্ট্র কিছু আর্থিক ভাতা প্রদান শুরু করলে এখানে অনেক 'নব্য' মুক্তিযোদ্ধার আবির্ভাব ঘটেছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক একটি ব্যাপার৷ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে নিজ নামে মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহ করে যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সরকারের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে৷ কিছু মানুষ মুক্তিযোদ্ধা সেজে রাষ্ট্রীয় নানান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুতে ব্যর্থতার দরুণ অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাই মানবেতর জীবনযাপন করলেও রাষ্ট্রের কাছ থেকে উপযুক্ত সম্মান ও ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন৷ রক্ত দিয়ে অর্জিত স্বাধীন দেশে এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না৷ তাই, অতিদ্রুত এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া দরকার৷ বিশেষত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ যারা ধারণ করছেন, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে৷ এটা করা গেলে রাষ্ট্র কিছুটা হয়তো দায়মুক্তির সুযোগ পাবে৷
তবে বিলম্বিত হলেও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক শেষ পর্যন্ত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশের কাজ শুরু হয়েছে— এটা এক ধরনের আশার সঞ্চার করছে৷ ২৬ মার্চের মধ্যে তালিকা প্রস্তুত সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে এগোলেও, যদিও আদালতের নির্দেশে আপাতত কাজটি থেমে গেছে, দ্রুতই এ তালিকা প্রকাশের ব্যাপারে তৎপর হতে হবে৷ তবে তড়িৎগতিতে করতে গিয়ে আবারও কোনো ত্রুটিপূর্ণ তালিকা যেন না হয়, সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে৷
উপজেলাভিত্তিক যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক যে নীতিমালা করা হয়েছিল, সে অনুযায়ী যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ থাকলেও অধিকাংশ উপজেলাতেই সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়নি৷ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে এক প্রশ্নের জবাবে মাননীয় মন্ত্রী এ তথ্য দিয়েছেন৷ সে দিক বিবেচনায়, যদি আরও কিছুটা সময় লেগেও যায়, তাড়াহুড়া করে কোনো অগ্রহণযোগ্য তালিকা প্রকাশ করা সমীচীন হবে না৷
তাই, পর্যাপ্ত সময় নিয়ে সম্ভব-দ্রুততার সাথে একটি পরিপূর্ণ ত্রুটিমুক্ত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা-তালিকা প্রকাশ করা হবে— সচেতন নাগরিকদের এটাই প্রত্যাশা৷
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড