• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

এক বছরে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ১৪ শতাংশ ৭৬ শতাংশ

  অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

২৫ আগস্ট ২০১৯, ১৩:২৭
বাংলাদেশ ব্যাংক
(ছবি: সংগৃহীত)

বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতিতে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ১৪ শতাংশ ৭৬ শতাংশ।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের চেয়ে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বেড়েছে। পাশাপাশি আমদানি ব্যয় কমে আসায় বিদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে চাপ আরও কমে আসবে বলেও মনে করেন তারা।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-জুন মাসে এক হাজার ৫৪৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি হয়েছে। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ এক হাজার ৮১৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর পয়েন্ট টু পয়েন্টে এক বছরে ঘাটতি কমেছে ২৬৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ১৪ শতাংশ ৭৬ শতাংশ। আগের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি ও আমদানিতে কম প্রবৃদ্ধির কারণে রপ্তানিতে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। একই সময়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এবং আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এ সময়ে ইপিজেডসহ রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ তিন হাজার ৯৯৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার আয় করেছে। আর আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে পাঁচ হাজার ৫৪৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অর্থাৎ এই সময়ে দেশে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় এক হাজার ৫৪৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা এক লাখ ৩০ হাজার ১৫০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের সঙ্গে বহির্বিশ্বের চলতি হিসাব ঋণাত্মক রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এটি কমেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫২৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার, আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৯৫৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

এছাড়া গেল অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ বেশ উচ্চ অবস্থানে ছিল। এ সময় রেমিটেন্স বেড়েছে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। পাশাপাশি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগও (এফডিআই) বেড়েছে।যার প্রভাব পড়েছে চলতি হিসাবেও।

অর্থনীতির ভাষায়, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হচ্ছে নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সে হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেতনভাতা বাবদ সেবাখাতে বাংলাদেশ বিদেশিদের পরিশোধ করেছে এক হাজার ৫০ কোটি ডলার। আর এ খাতে আয় করেছে মাত্র ৬৭৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ফলে সেবাখাতে ৩৭১ কোটি ৫০ খাল ডলার বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৪২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

একই সময়ে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৪৫০ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের তুলনায় যা ৩৬ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে নিট এফডিআই বেড়েছে ৪২ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

দেশের শেয়ারবাজারে চলা অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ২০১৮ সাল থেকে বিদেশিরা পুঁজি প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা চলতি বছর টানা পাঁচ মাস শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। আর শেয়ার বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় নিট বিনিয়োগে ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। মূলত শেয়ারবাজারের টালমাটাল অবস্থার কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ১৯ মাসে ৬০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মূলত ভালো শেয়ারের অভাব ও টাকার অবমূল্যায়ন না হওয়ায় বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করছেন। ২০১৮ সাল থেকে চলতি জুলাই মাস পর্যন্ত ১৯ মাসের মধ্যে ১৪ মাসই শেয়ার ক্রয়ের চেয়ে বিক্রি বেশি ছিল।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সাত বছরে দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশিদের নিট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। তবে ২০১৭ সালের পর থেকে বিদেশিরা এদেশ থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। বর্তমানে শেয়ারবাজারে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার ৫০ কোটি টাকা।

সূত্র থেকে জানা গেছে, বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সঙ্গে নির্বাচন ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার যুক্ত আছে। বাংলাদেশ ছাড়াও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর অধিকাংশই স্থানীয় মুদ্রার মান কমিয়েছে বা অবমূল্যায়ন করেছে। তবে বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশ এখনো টাকার শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। গত সাত বছরে ভারত ও পাকিস্তান তাদের নিজস্ব মুদ্রার ৫০ শতাংশের বেশি অবমূল্যায়ন করলেও টাকার তেমন অবমূল্যায়ন হয়নি। আর বাংলাদেশও তার মুদ্রার অবমূল্যায়ন করলে বিদেশিরা আরও বেশি বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

সম্প্রতি বাংলাদেশের শেয়ার থেকে বিএটি কোম্পানি নিজেদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেন। ২০১৮ সালে কোম্পানিটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ বোনাস ঘোষণা করা হয়। স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এই বোনাস ঘোষণায় এ কোম্পানির শেয়ারদের আয় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। আর এই সুযোগেই বিদেশিরা এ কোম্পানির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করে দেন।

এছাড়া লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, বার্জার, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, গ্লাক্সেস্মিথক্লাইন, জিএসপি ফাইন্যান্স, আইএলএফএসএল, সিঙ্গার, ওরিয়ন ফার্মা, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এনবিএল, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, আইএফআইসি, রানার অটোমোবাইল, সিটি ব্যাংক, আইডিএলসি, বাংলাদেশ সাবমেরিন কাব্ল কোম্পানি, ইসলামী ব্যাংক, বেক্সিমকো লিমিটেডসহ উল্লেখযোগ্য কিছু কোম্পানির শেয়ার থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেন।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে। পাশাপাশি সিঙ্গাপুর, দুবাইভিত্তিক কিছু বিনিয়োগ কোম্পানিরও বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়া নরডিক দেশগুলোর ব্যবসায়ীদের সমন্বিত বিনিয়োগ কোম্পানি ব্রামার্স অ্যান্ড পার্টনার্স দেশের শেয়ারবাজারে প্রায় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।

ওডি/টিএফ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড