অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত খনন বা ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। বিগত কয়েক বছর ধরে চলছে এই নদী খনন বা ড্রেজিং প্রকল্পগুলো। তাই এই প্রকল্পগুলো শেষ হলে অর্থাৎ নদী তার নাব্যতা ফিরে পেলে বছরে বিভিন্নভাবে এক হাজার ৩৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় নিশ্চিত হবে। কেননা আমাদের দেশে সড়ক ও রেল পথের চেয়ে পণ্য পরিবহন খরচ নৌ পথে অনেক কম। আর কৃষি ও মৎস্য খাত থেকে বছরে আয় বাড়বে এক হাজার ২০১ কোটি টাকা। সম্প্রতি এক জরিপ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নৌ পথে পরিবহন ব্যয়ও অনেক কম। প্রতি টন কার্গো পরিবহনে সড়কপথে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় সাড়ে ৪ টাকা, রেলপথে আড়াই টাকা এবং নৌ পথে খরচ মাত্র ১ টাকা। অভ্যন্তরীণ নদীপথ ব্যবহার করে এই খাতে প্রতি বছর পাঁচ কোটি ৮৫ লাখ লিটার ডিজেল বাঁচানো যেতে পারে। তাই নৌপথগুলোর নাব্যতা রক্ষা করা গেলে কৃষিতে বছরে এক হাজার ১৯৭ কোটি আট লাখ ১৯ হাজার টাকা এবং মৎস্য খাতে তিন কোটি ৬৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত আয় বাড়ানো সম্ভব। আর নৌপথের মাধ্যমে বছরে ১৩৭ কোটি ১১ লাখ ১১ হাজার টাকা আয় সম্ভব। আর নদী ভাঙন প্রতিরোধের ফলে ১১ কোটি ২১ লাখ ৫১ হাজার টাকা সাশ্রয় হত। শুধু ছয়টি নদীপথ খনন করে নাব্যতা ধরে রাখা গেলে বছরে প্রায় ১৪ শ কোটি টাকা সাশ্রয় হত।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবস্থার অবদান অপরিসীম। আমাদের অভ্যন্তরীণ নৌপথের দৈর্ঘ্য ২৪ হাজার কিলোমিটার; এদের মধ্যে বর্ষা মওসুমে পাঁচ হাজার ৯৬৮ কিলোমিটার এবং শুষ্ক মওসুমে তিন হাজার ৮৬৫ কিলোমিটার নাব্যতা থাকে। দেশের শতকরা ৫০ ভাগ অথনৈতিক কেন্দ্র নাব্য নৌপথের আশপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়েই গড়ে উঠেছে।
এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের শতকরা ২৫ ভাগ মানুষ এই নৌ পথ ব্যবহারের সুযোগ পায়। কিন্ত নদীপথের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় নৌ পথগুলো ড্রেজিং করা না হলে অচিরেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ নৌ পথ বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ নাব্যতা বাড়ানোর জন্য ড্রেজিং কার্যক্রম নিয়েও তা নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় জটিলতা বাড়ছে। ছয় বছরের ড্রেজিং কাজ তাই নয় বছরে গিয়ে ঠেকছে।
বাংলাদেশ ইন্টেগ্রেটেড ট্রান্সপোর্ট সেক্টর স্টাডি-১৯৯৮ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে সর্বমোট ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌ যোগাযোগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে; এদের মধ্যে ১৯৬৩ সালে আট হাজার কিলোমিটার নৌবহর ছিল, যা বাংলাদেশের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত। ১৯৮৯ সালে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডিএইচভি অ্যাসোসিয়েটের জরিপে নৌ পথের নাব্যতা কমে ছয় হাজার কিলোমিটার হয়। আর নদীগুলোতে প্রতি বছর বন্যায় ৫০ লাখ কিউসেক পানি এবং ২৪০ কোটি টন পলি পরিবাহিত হয়, যা সারা বিশ্বের পরিবাহিত পলির সাড়ে ১৮ শতাংশ। ফলে নদীগুলো ক্রমান্বয়ে মৃত হয়ে পড়েছে এবং নাব্য নৌ পথের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে।
তবে ১৯৮৯ সালের পর আর কোনো জরিপ পরিচালিত না হওয়ায় বর্তমানে নদীর দৈর্ঘ্যরে কোনো দাপ্তরিক হিসাব নেই। মূলত ক্রস-বাউন্ডারি প্রবাহ হ্রাস, পানিপ্রবাহ হ্রাস, পলি প্রবাহ বৃদ্ধি এবং জোয়ারের প্রবাহ কম থাকার কারণে নদীগুলো নাব্যতা হারাচ্ছে।
নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে ছোট-বড় ও মাঝারি আকারের প্রায় সাড়ে সাতশ টি নদী রয়েছে নদী রক্ষা কমিশন জানিয়েছে। কিন্তু ড্রেজিং ও অপরিকল্পিত ইন্টারভেনশনের কারণে দেশের প্রায় ২৩০টি নদী এখন মৃত। বর্তমানে নদীগুলো তীর দখল, পলিউশন, সিলটেশন, ব্লকেজ ইত্যাদির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া বেশির ভাগ শিল্প নদীর তীরঘেঁষে স্থাপন করায় প্রতিদিন একশ টন শিল্পের বর্জ্য নদীতে পড়ছে।
আন্তর্জাতিক এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহর ও শিল্পাঞ্চলগুলোর ৮০ শতাংশ পয়:বর্জ্য কোনো ধরনের পরিশোধন ছাড়াই নদীর পানিতে ফেলা হচ্ছে। ফলে নদীগুলোতে রাসায়নিক পদার্থের দূষণ বাড়ছে। নদীর স্বাস্থ্য দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। শুধু আমাদের দেশই নয়, নদী গঙ্গা অববাহিকার দেশ ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালের নদীগুলোও দূষিত হচ্ছে। অথচ নদীগুলোকে মৃতাবস্থা থেকে জীবিত করতে প্রতি বছরই ড্রেজিংয়ের জন্য শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। কিন্ত নদীগুলো তার হারানো যৌবন ফিরে পাচ্ছে না। যা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ আন্দোলনের সাথে জড়িতরা বলছেন, বুড়িগঙ্গার তলদেশে ১৩ ফুট পুরু পলিথিনের স্তরে জমা হয়েছে। অথচ কোনোভাবে এগুলো অপসারণ করা হচ্ছে না। নদীতে কারখানার ৬০ ভাগ বর্জ্য, ঢাকা ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের ৩০ ভাগ বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এছাড়া সরকারিভাবেও নদী দূষণ করা হচ্ছে। আর নৌযানের বিষাক্ত বর্জ্যও নদীতে ফেলা হচ্ছে।
পরিবেশ আন্দোলনকারীরা আরও বলেন, বুড়িগঙ্গা নদীর শতকরা ৯০ ভাগ পিলার যথাস্থানে স্থাপন করা হয়নি। এছাড়া সীমানা পিলার স্থাপনের নামে তুরাগের অনেক এলাকা জমি বেদখল হয়ে গেছে।
ওডি/টিএফ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড