অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যয় হিসাব করার মাধ্যমে ঋণের সুদহার কমিয়ে আনার অভিন্ন সূত্র তৈরি করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তহবিল ব্যয় হচ্ছে এমন এক ব্যয় যেখানে ঋণ গ্রহীতা ব্যাংক থেকে তহবিল নিয়ে ব্যবসায় ব্যবহার করে ব্যাংককে সুদ দেয় এবং তহবিল প্রদান ও পরিচালনার জন্য ব্যাংক এটি হিসাব করে।
তহবিল ব্যয় হিসাব করার জন্য বর্তমানে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ধরনের সূত্র ব্যবহার করছে। ফলে এই ব্যয় হিসাব করার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এরূপ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি অভিন্ন ও সার্বজনীন তহবিল ব্যয় হিসাব করার সূত্র নিয়ে আসছে। এটি ব্যবহার করে ব্যাংকগুলো তাদের তহবিল ব্যয় হিসাব করবে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, এই অভিন্ন তহবিল ব্যয় পদ্ধতি ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে সাহায্য করবে। তবে ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকগুলোর ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, নতুন এই পদ্ধতিতে তহবিল ব্যয় কমে যাবে। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক অংকের সুদে ঋণ বিতরণের জন্য তহবিল ব্যয় কমিয়ে আনতে যে অভিন্ন সূত্র ব্যবহার করতে যাচ্ছে, তাতে ঋণ ও আমানতের সুদহারও কমে যাবে।
মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলো ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান সব সময় ৫ শতাংশ রাখে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোর মুনাফা করার প্রধান উৎস হচ্ছে ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে আদায় করা সুদ ও তহবিল ব্যয়। গ্রহীতাদের যখন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ বিতরণ করার জন্য যে তহবিল ব্যবহার করা হয় তখন কম খরচে ব্যাংকগুলোর ভালো আয় হয়।
অন্য দিকে নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হলে ব্যাংকগুলো তখন সুদের হার কমাতে বাধ্য হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন।
এই অভিন্ন হিসাবের নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো তাদের ব্যয় হিসাব করার জন্য আমানত, ঋণ সভরেন্ট বন্ড প্রশাসনিক ও অন্যান্য ব্যয় মোট ব্যয়ের মধ্যে হিসাব করতে হবে। তবে খেলাপি ঋণের বিপরীতে রাখা নিরাপত্তা সঞ্চিতি এই হিসাবের মধ্যে পড়বে না।
ব্যাংকগুলো কর্মকর্তাদের বেতন প্রদানের জন্য প্রশাসনিক ব্যয়ের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ তহবিল ব্যয়ের অর্ন্তভুক্ত করার অনুমতি পাবে।
তবে কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচিতে ব্যয়, কর্মীদের কর্মদক্ষতা ও প্রণোদনা প্রদান মোট ব্যয়ের মধ্যে অর্ন্তভুক্ত করা যাবে না।
বর্তমানে ব্যাংকগুলো সিএসআর ব্যয়, খেলাপি ঋণের বিপরীতে রাখা নিরাপত্তা সঞ্চিতি, শতভাগ প্রশাসনিক ব্যয়, কর্মদক্ষতা ও প্রণোদনা ভাতা সবগুলোই মোট ব্যয়ের মধ্যে হিসাব করে।
তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করেন, নতুন তহবিল ব্যয় হিসাব পদ্ধতি কার্যকর করা হলে ব্যাংকগুলোর মোট ব্যয় কমে যাবে। এতে ঋণ বিতরণে ইতিবাচক প্রভাবও পড়বে।
মোট তহবিল নির্ধারণের জন্য ব্যাংকগুলো দৈনিক জমা আমানত, সাধারণ মূলধন, শেয়ার, ঋণ বিতরণ, সাব অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুর হিসাব করে থাকে।
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশেন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের ব্যাংকগুলো বর্তমানে তহবিল ব্যয় হিসাবের জন্য বিশ্বমানের পদ্ধতি ব্যবহার করছে। তবে নীতিমালাটি এখনো জারি না হওয়ায় তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অন্য দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব সময় ব্যাংকিং খাত ও জনগণের জন্য কাজ করছে। সময়ের প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করছে।
ওডি/টিএফ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড