• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

৭৯ ব্যক্তি ও ১২৪ প্রতিষ্ঠানের কাছে এনবিআরের পাওনা ২৭ হাজার কোটি টাকা

  অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

২১ জুলাই ২০১৯, ১৩:০১
এনবিআর
(ছবি: সংগৃহীত)

একাধিকবার তাগাদা দেওয়ার পরও পাঁচ অর্থবছর ধরে বকেয়া পরিশোধ করছে না এমন ৭৯ ব্যক্তি ও ১২৪ প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এসকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পাওনা আছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গত সপ্তাহে এ তালিকা পাঠানো হয়েছে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।

শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এদের বকেয়ার পরিমাণ, বকেয়া পরিশোধে তাগাদা দিয়ে এনবিআর থেকে কতবার চিঠি পাঠানো হয়েছে, বকেয়া আদায়ে আরও কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে—এসব তথ্যও পাঠানো হয়েছে।

জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান মো.মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেশি। তাই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। যারা এতোদিন বিভিন্ন কৌশলে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে, তাদের কাছ থেকে পাওনা আদায়ে এনবিআর কঠোর অবস্থান নিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অতীতে বড়মাপের অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পাওনার অতি সামান্য দিয়ে সময় নিয়েছে। তারা পরবর্তী সময়ে দিচ্ছি বা দেব বলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্নভাবে সময় বাড়ানো হলেও এবারে সে সুযোগ দেওয়া হবে না।’

এনবিআরের প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, ৭৯ ব্যক্তির কাছে এনবিআরের রাজস্ব পাওনা তিন হাজার ৭২২ কোটি টাকা। আর ১২৪ প্রতিষ্ঠানের কাছে এনবিআরের পাওনা ২৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এনবিআরের বিভিন্ন কর অঞ্চল এবং কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যক্রম নজরদারি করেছে। আর এখন এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্ট সেল (সিআইসি), ভ্যাট বা মূসক গোয়েন্দা এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর থেকেও ওই সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার এনবিআর চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চল ও ভ্যাট কমিশনারেট গত পাঁচ বছরেও কেন তাদের কাছ থেকে বকেয়ার বড় অংশ আদায় সম্ভব হয়নি তার ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে এ চিঠির জবাব দিতে হবে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৭৯ ব্যক্তির প্রত্যেকেই ব্যবসায়ী। তাঁদের নিজেদের নামে দেশে-বিদেশে একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। এদের পরিবারের একাধিক সদস্যও দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন ব্যবসা করছেন। গত পাঁচ বছরে ৭৯ জনকেই বকেয়া পরিশোধে তাগাদা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ জনকে ২০ বার করে, ১০ জনকে ১৬ বার, অন্যদের ১৪ বারের কম চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭৯ জনই পাওনা রাজস্বের অতি সামান্য কিছু অর্থ এনবিআরের কোষাগারে জমা দিয়ে আবারও সময় নিয়েছেন। বারবার সময় নিয়েও গত পাঁচ বছরে পাওনার ২০ শতাংশও পরিশোধ করেননি। ৭৯ জনের মধ্যে ১৭ জনের হিসাব সাময়িক জব্দ করা হয়। পাওনার অতি সামান্য দিয়ে হিসাবগুলো আবারও সচল করা হয়। তারা নিয়মিত রিটার্ন জমা দিলেও রিটার্নে ব্যবসায় লোকসান দেখিয়েছেন।আর অল্প কয়েকজন সামান্য লাভ দেখিয়েছেন।

এই ৭৯ জনের মধ্যে ১৩ জন রাসায়নিক আমদানি শিল্প, ৯ জন তৈরি পোশাক ও এর সহযোগী খাতের, আটজন মানবসম্পদ রপ্তানি, সাতজন ঠিকাদার, ছয়জন পরিবহন, চারজন সিগারেট খাতের ব্যবসায়ী, তিনজন হোটেল, দুজন সিরামিক খাতের, দুজন খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারক ব্যবসায়ে,একজন জুয়েলারি খাতের, একজন অটোমোবাইল খাতের এবং অন্যরা বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করেন। এসব ব্যবসার বাইরে প্রত্যেকের আরও ব্যবসা আছে। তাঁরা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বছরে একাধিকবার বিদেশে আসা-যাওয়া করেন। প্রত্যেককে এনবিআরে একাধিকবার তলব করা হয়। এতে ৩৬ জন আইনজীবী সঙ্গে করে হাজির হয়েছিলেন। অন্যরা নিজে না এসে প্রতিনিধি হিসেবে আইনজীবী পাঠান

আর ১২৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৭টি শতভাগ রপ্তানিমুখী, ১২টি স্থানীয় শিল্প, চারটি মোবাইল খাতের, তিনটি হোটেল, বাকি আটটি আমদানির সঙ্গে জড়িত।

রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা বেশি থাকায় চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ে কঠোর হচ্ছে এনবিআর। রাজস্ব দপ্তরকে প্রতি মাসের জন্য রাজস্ব আদায় ও করদাতা সংগ্রহে পৃথক লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হবে। এক মাসের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে তা পরের মাসের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে আদায় করে দিতে হবে। এছাড়া কোনো রাজস্ব দপ্তর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে এর যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা দিতে হবে। আর এই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য না হলে দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। শুধু তাই নয়, এনবিআরের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী করদাতাকে ভোগান্তিতে ফেললে তাঁকেও কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান গত মঙ্গলবার এসব নির্দেশ দিয়ে বিভিন্ন রাজস্ব দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন। তিনি ইবিআইএন (ব্যবসা চিহ্নিতকরণ নম্বর) গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে ধরতে বলেছেন। ইবিআইএন না থাকলে কোনো ব্যবসায়ী আমদানি-রপ্তানি করতে পারবেন না। কোনো টেন্ডারে অংশ নিতে পারবেন না। ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন না বলেও কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এনবিআর চেয়ারম্যান চিঠিতে ইএফডি (ইলেট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস) যন্ত্র সরবরাহে গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, ইএফডি সরবরাহে এনবিআর চেষ্টা করছে। ব্যবসায়ীদের জানাতে হবে, এসব যন্ত্র ব্যবহার অত্যন্ত সহজ। একটি মোবাইল ফোন চালানোর মতোই এসব যন্ত্রের সাহায্যে ক্রয়-বিক্রয়ের হিসাব রাখা যাবে।

প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের শুরুতে এর লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। পরে এই লক্ষ্যমাত্রা ১৬ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা করা হয়।

ওডি/টিএফ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড