অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০১২ সাল থেকে আদালতের বাইরে কর মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) প্রক্রিয়া চালু করে। সাত বছরে এই খাতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সাফল্য না মিললেও এনবিআর গত দুই অর্থবছরে এ পদ্ধতিতে ৩৪৫টি মামলা নিষ্পন্ন করতে পেরেছে। আর এখান থেকে প্রতিষ্ঠানটি ২ হাজার ৪১২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা আদায় করতে পেরেছে।
জানা গেছে, এডিআর পদ্ধতিতে চারজন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ হাজার ৪১২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। আর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা মো. তারিক হায়দারের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৫১৬ কোটি ৭ লাখ ১৯ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। এই কর্মকর্তা প্রায় মোট ১৩৯টি মামলা নিষ্পন্ন করেছেন। আর মামলার ফি হিসেবে নিয়েছেন ৫৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা সৈয়দ মো. আমিনুল করিমের মধ্যস্থতায় ১৪৯ কোটি ৮৮ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, নিরীক্ষক মো. হুমায়ুন কবিরের মধ্যস্থতায় ৭১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকা এবং মো. আলাউদ্দীনের মাধ্যমে ৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে।
এডিআর প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তির জন্য এনবিআর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২০০টি মামলার আবেদনের লক্ষ্য ঠিক করে। তবে এ সংক্রান্ত আবেদন পড়ে ২৩১টি। সংশ্লিষ্ট মোট রাজস্বের পরিমাণ ১ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা যার মধ্যে পূর্ণ নিষ্পত্তি হয়েছে ১২৪টি মামলা। এছাড়া আংশিক নিষ্পত্তি হয়েছে ১৮টি ও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ৪১টি মামলা। এদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে লক্ষ্য ছিল ১৯০টি মামলার লক্ষ্য আবেদন এসেছিল ৩৬০টি। আর সংশ্লিষ্ট রাজস্বের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২২১টির, আংশিক নিষ্পত্তি হয়েছে আটটি মামলার। তবে ১৩১টি মামলার কোনো নিষ্পত্তি হয়নি।তবে লক্ষ্য বাড়লেও আবেদনের সংখ্যার পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও দিন দিন কমছে।
এডিআর আইনে বলা হয়েছে, ‘আদালতের বাইরে একজন মধ্যস্থতাকারী বা সহায়তাকারীর মাধ্যমে করদাতা ও এনবিআরের মধ্যকার মামলা আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে নিষ্পন্ন করা হবে। এখানে মধ্যস্থতাকারী নির্ধারিত হারে ফি পাবেন। ফির ৫০ শতাংশ এনবিআর ও বাকি অংশ সংশ্লিষ্ট করদাতা বহন করবেন। আইনটি ২০১২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
এখন পর্যন্ত এডিআর পদ্ধতিতে নিষ্পত্তির আবেদন করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- এশিয়ান পেইন্টস (বাংলাদেশ) লিমিটেড, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মাইডাস ফিন্যান্সিং লিমিটেড, ল্যাবএইড মেডিকেল সেন্টার গুলশান লিমিটেড, ইটাফিল (বাংলাদেশ) লিমিটেড, এইচপি কেমিক্যালস লিমিটেড ইটাফিল অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড ও মৌসুমী ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
এডিআরের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্যবসায়ীদের আগ্রহ না থাকায় এ উদ্যোগ খুব একটা কার্যকর হয়নি। তবে এটি সচল করতে এনবিআর অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। সাবেক একজন সদস্যকে নিয়ে নিরপেক্ষ সেলও গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।
এনবিআর সদস্য (ট্যাক্স লিগ্যাল ও এনফোর্সমেন্ট) হাফিজ আহমেদ মুর্শেদ বলেন, এডিআর পদ্ধতিতে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। ব্যবসায়ীদের এমন সহজ সুযোগ দেওয়ার পরও তারা না এলে আমাদের কিছু করার থাকে না।
আর যারা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন, তারা আদালতে বিষয়টি নিষ্পন্ন করতে বেশি উৎসাহী। আর যারা আদালতে সুবিধা করতে পারেন না, তারাই এডিআর পদ্ধতিতে আসছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।
সূত্র জানিয়েছে, আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও শুল্ক খাতে প্রায় ৩২ হাজার মামলায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব বকেয়া আছে। বছরের পর বছর আদালতের দীর্ঘসূত্রতার কারণে মামলা ঝুলে থাকায় এনবিআর রাজস্ব আদায় করতে পারছে না। এজন্যই আদালতের বাইরে সমঝোতার মাধ্যমে কর আদায়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইন করা হয়েছে।
ওডি/টিএফ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড