অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
বিশ্বের ক্ষমতাধর দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন কিছু নয়। তবে তাদের মধ্যে চলমান এ যুদ্ধের ফায়দা নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। এরই ধারবাহিকতায় বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। প্রাথমিক পর্যায়ে সুবিধা পাওয়া চারটি দেশের তালিকায় আমাদের দেশ স্থান করে নিয়েছে। কারণ চীনে উৎপাদিত পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকরা খরচ কমাতে এশিয়ার দেশগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রথম পাঁচ মাসের হিসাবে দেখা গেছে, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ১২ শতাংশ কমে গেছে। আর দেশটি ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করছে।
সিএনএন এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই পাঁচ মাসে যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম থেকে সবচেয়ে বেশি আমদানি করেছে, যার পরিমাণ ৩৬ শতাংশ। আর অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ান ২৩ শতাংশ, বাংলাদেশ থেকে ১৪ শতাংশ ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১২ শতাংশ আমদানি করেছে। মূলত উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও বাড়তি শুল্কের হাত থেকে রক্ষা পেতে চীন থেকে শিল্প-কারখানাও এখন এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে সরছে। চীনের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টসহ আরও কিছু খাতে বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে বলেও জানা গেছে।
মার্কিন ক্রেতাদের জন্য চীনের উৎপাদিত বেসবল ক্যাপ, ব্যাগ, মোটরসাইকেলের মতো পণ্য ব্যয়বহুল হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র আমদানি শুল্ক বাড়ানোয় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও ইলেকট্রনিক পণ্য যেমন—ওয়াশিং মেশিন, ডিশ ওয়াশার, হেয়ার ড্রায়ার, ওয়াটার ফিল্টার ইত্যাদির দামও বেড়েছে।
অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসন চীনের গার্মেন্ট পণ্যের ওপরও বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যা আগামী সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। দেশটি গত বছর চীনের সঙ্গে বাণিজ্য হয়, এমন ২০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ করেছিল। এখানেই শেষ নয়, তারা আরও চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দিয়ে রেখেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা অন্য দেশগুলো থেকে আমদানিতে ঝুঁকছেন। বিপরীতক্রমে চীনও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া বেশকিছু পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে। তবে সম্প্রতি জাপানে অনুষ্ঠিত জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর নতুন ট্যারিফ স্থগিত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন।
আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের এক জরিপে দেখা যায়, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান তাদের কারখানা স্থানান্তর বিবেচনা করছে। আর যারা চীন ছেড়েছে, তাদের এক-চতুর্থাংশ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে গিয়েছে। আর মাত্র ৬ শতাংশ কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা সরিয়ে নিয়ে গেছে।
কম মজুরির সুবিধা থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য ক্ষেত্রে সক্ষমতার ঘাটতির কারণে বাংলাদেশ চীন থেকে স্থানান্তর হওয়া ক্রয়াদেশ কিংবা বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত হারে ধরতে পারছে না বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।
এ প্রসঙ্গে গবেষণা-প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভিয়েতনাম কেবল তৈরি পোশাকনির্ভর নয়। দেশটির প্রযুক্তিসহ উচ্চমূল্যের বহুমুখী পণ্য রয়েছে। ফলে চীন থেকে সরে আসা বাজার তারা খুব সহজে ধরতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশটি কেবল গার্মেন্টস- নির্ভর হওয়ায় সেই সম্ভাবনার খুব সামান্যই কাজে লাগাতে পারছি। এছাড়া গার্মেন্টসেও আমাদের উচ্চমূল্যের পণ্য কম। অনেক দেশই আরও শুল্ক আরোপের শঙ্কা কিংবা অনিশ্চয়তায় চীন থেকে বিনিয়োগও সরছে। তাই বাংলাদেশ এ বাজার ধরতে পারলে দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান হবে। তবে আমরা অবকাঠামোসহ বিনিয়োগ প্রস্তুতিতে ভিয়েতনামের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। তাই যতদ্রুত এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যাবে, বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে তত দ্রুত সেটি সহায়ক হবে।
এদিকে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের ক্রয়াদেশ বাড়লেও দাম কমছে। আর এদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে চীনের আগ্রহ বেড়েছে। চীন গার্মেন্টসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে।
বাংলাদেশ এখন একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে। আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য হচ্ছে তৈরি পোশাক। ইউএস অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (ওটেক্সা)- এর হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি। দেশটিতে এ সময়ে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৬ দশমিক ১২ শতাংশ। আর চীন থেকে পোশাক আমদানি না বেড়ে কমেছে শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ। এছাড়া ভিয়েতনাম থেকে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ভারত থেকে ১২ শতাংশ, পাকিস্তান থেকে ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়েছে।
ওডি/টিএফ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড