অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) প্রস্তাব কার্যকর হলে তার প্রভাব পড়বে মোটরসাইকেলে। ফলে বিভিন্ন কোম্পানির মোটরসাইকেলের দাম বাড়বে। জানা গেছে, ভ্যাটের কারণে কম দামি মোটরসাইকেলের দাম ৪ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ দামের মোটরসাইকেলের দাম ২১ হাজার টাকা পর্যন্ত ভ্যাট বাড়তে পারে। শুধু নয়, ক্রেতাদের নিবন্ধন ব্যয়ও বাড়বে।
প্রস্তাবিত বাজেটে, ব্যবসায়ী পর্যায়ে সব পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর মোটরসাইকেলের পরিবেশকেরা এর আওতায় পড়বেন। বর্তমানে পরিবেশকদের কমিশনের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আছে। কিন্তু নতুন বাজেটে মোটরসাইকেলের সম্পূর্ণ মূল্যের ওপর ভ্যাট বসবে। ফলে পরিবেশকরা এর দাম বাড়িয়ে দেবে।
জাতীয় সংসদে গত ১৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০১৯–২০ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। এ সময় মোটরসাইকেল নিবন্ধন ও মালিকানা পরিবর্তনে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হলে ভ্যাটের হারেও পরিবর্তন আসবে।
বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বেলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএএমএ) ও মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (এমএইএবি) যৌথভাবে অর্থমন্ত্রী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে তারা বাজেট ও ভ্যাট আইন মোটরসাইকেলশিল্পের ওপর কী কী প্রভাব ফেলবে এবং উদ্যোক্তারা কী কী চান, তা জানতে চান। এনবিআরের পক্ষ থেকে ভ্যাট বিষয়ে একটি সুরাহার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এক কোম্পানির সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা একজন পরিবেশককে সাড়ে ৫ হাজার টাকা কমিশন দেয়। এ কমিশনের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ৭১৭ টাকা ভ্যাট আসে। কিন্ত নতুন আইনে সরবরাহ মূল্যের ওপর ভ্যাট আরোপ হবে। ফলে ৫ শতাংশ হারে সাড়ে ৯১ হাজার টাকা সরবরাহ মূল্যের একটি মোটরসাইকেলে ভ্যাট আসবে ৪ হাজার ৭০০ টাকা। এজন্য প্রায় ৪ হাজার টাকা দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে সর্বোচ্চ মূল্যের একটি মোটরসাইকেলের দাম যদি প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা হয়, তাহলে সেখানে ভ্যাট আসবে প্রায় ২১ হাজার টাকা।
চিঠিতে বলা হয়, কম মূল্যযুক্ত পণ্যের ক্ষেত্রে সংকুচিত হারে ভ্যাট সুবিধাজনক হলেও মোটরসাইকেলের মতো উচ্চ মূল্যযুক্ত পণ্যের জন্য সুবিধাজনক নয়। এটা বাজারে দাম অনেকটাই বাড়িয়ে দেবে। পাশাপাশি ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই সংগঠন দুটি আগ্রহী ব্যবসায়ীদের জন্য রেয়াতের সুযোগ রেখে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদানের প্রচলিত পদ্ধতি বহাল রাখার অনুরোধ জানিয়েছে।
এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বা তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিযুক্ত অবস্থায় (সিকেডি) মোটরসাইকেল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করেন। ফলে সিসিভেদে (ইঞ্জিনের ক্ষমতা) মোটরসাইকেলের দাম ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা কমে যায়। পরবর্তীতে কোম্পানিগুলো দেশে মোটরসাইকেল কারখানা করেছে। তারা নানা শুল্ক সুবিধা পেয়েছে। আর সব মিলিয়ে মোটরসাইকেলের দামও কমেছে। তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে মোটরসাইকেল বিক্রিতে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। সেসময় প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি বেড়েছে।
বাড়বে নিবন্ধন ব্যয়
প্রস্তাবিত বাজেটে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, থ্রি হুইলার, অ্যাম্বুলেন্স ও স্কুলবাস ছাড়া সব গাড়ির নিবন্ধন, রুট পারমিট, ফিটনেস সনদ, মালিকানা সনদ গ্রহণ ও নবায়নকালে পরিশোধিত ফি বা মাশুলের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়। ইতোমধ্যেই এই কর কার্যকর হয়েছে। যার আওতায় মোটরসাইকেলও রয়েছে।
বর্তমানে ১০০ সিসির বেশি একটি মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ব্যয় মোট ২১ হাজার ২৭৩ টাকা। এর মধ্যে নিবন্ধন মাশুল (করসহ) ৬ হাজার ৪৪০ টাকা, ডিজিটাল নিবন্ধন সনদ বাবদ ৫৫৫ টাকা, নম্বরপ্লেটের দাম ২ হাজার ২৬০, পরিদর্শন মাশুল ৫১৮ এবং সড়ক কর বা রোড ট্যাক্স বাবদ ১১ হাজার ৫০০ টাকা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হোন্ডা লিমিটেডের (বিএইচএল) প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন, ‘নতুন করের কারণে সব মিলিয়ে ১ হাজার টাকার মতো খরচ বাড়তে পারে। এর আগে দেড় লাখ টাকার মোটরসাইকেলে নিবন্ধন ব্যয়ের পরিমাণ ছিল মোট দামের ১৩ শতাংশের মতো। এখন মোটরসাইকেলের দাম কমে লাখ টাকার নিচে নামায় নিবন্ধন ব্যয় মোট দামের ২২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমরা চাই এটা কমানো হোক।’
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেশির ভাগ মোটরসাইকেল অনিবন্ধিত অবস্থায় চালানো হয়। এই নিবন্ধন ব্যয় বেশি বলেই গ্রাহকেরা নিবন্ধনে আগ্রহ দেখান না। বিশেষ করে, গ্রামে নিবন্ধনহীন অনেক মোটরসাইকেল চলে বলে জানান উদ্যোক্তারা।
ওডি/টিএফ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড