অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
ব্যাংকগুলো নানা অনিয়ম-দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় ঋণ দিলেও সময় মতো সে ঋণ আদায় হচ্ছে না। ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক ঋণ খেলাপিতে ডুবছে। অথচ এই ব্যাংকগুলোর দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছে না। ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতিও এখন নাজুক অবস্থায়। তাছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক শীর্ষ খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায় নিয়েও সন্তুষ্ট হতে পারেনি।
রবিবার (১২ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের বৈঠক হয়। এ সময় ব্যাংকগুলো ২০১৮ সালের প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে ব্যাংকগুলোর ব্যবসা পরিচালনার বিভিন্ন সূচকে মিশ্র প্রবণতা রয়েছে। ব্যাংকগুলোতে লোকসান কমলেও বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণ রয়েছে। প্রভিশনের সঙ্গে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকগুলো। তাছাড়া শীর্ষ-২০ খেলাপিদের থেকে ব্যাংকগুলো নগদ অর্থ আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বৈঠকে খেলাপিঋণ ও শীর্ষ খেলাপিদের থেকে আদায় পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
মূলত ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) করে আসছে। চুক্তি অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ প্রবৃদ্ধি যথাযথ রাখা, খেলাপি ঋণ আদায়, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, লোকসানি শাখা ও পরিচালন ব্যয় কমানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। তিন মাস পর পর ব্যাংকগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে এসব লক্ষ্য অর্জনের মূল্যায়ন করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, বৈঠকে চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ব্যাংকগুলো ২০১৮ সালের আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে।বেশ কিছু সূচকে প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো করলেও অনেক ক্ষেত্রে তারা সফল হয়নি। তাদের অসফলতার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণ। ব্যাংকগুলো শীর্ষ খেলাপিদের থেকে সেভাবে অর্থ আদায় করতে পারেনি। এছাড়া মুনাফা অর্জনের টার্গেটও তারা পূরণ করতে পারেনি।
সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মধ্যে জনতা ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে যার পরিমাণ ১৭ হাজার ২২৫ কোটি টাকা; যা ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৩৬ শতাংশ। ২০১৭ সালে তাদের খেলাপি ঋণ ছিল ৭ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সোনালী ব্যাংক। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ৬১ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ২০১৭ সালের তুলনায় অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। বর্তমানে এর পরিমাণ ৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, এক বছর আগে যার পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা।
তাছাড়া রূপালী ব্যাংকেরও খেলাপি ঋণ কিছুটা কমে হয়েছে ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালে ছিল ৪ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত এই চার ব্যাংকের তিনটি প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে বলে ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের ৫৯৩ কোটি, সোনালী ব্যাংকের ৩ হাজার ৮৮ কোটি ও রূপালী ব্যাংকের ৮৩৪ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি ছিল। একই সময়ে অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে ছিল। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের ৮৮৩ কোটি টাকা ও জনতা ব্যাংকের ৫ হাজার ৮৫৩ কোটি মূলধন ঘাটতি রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৮ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর শীর্ষ-২০ খেলাপিদের কাছ থেকে নগদ আদায় নিয়ে সন্তুষ্ট ও হতে পারেনি।
শীর্ষ-২০ খেলাপিদের কাছ থেকে অগ্রণী ১ কোটি ৭৪ লাখ, সোনালী ১১৯ কোটি, জনতা ৯৯ কোটি, ও রূপালী ৫ কোটি টাকা নগদ আদায় করেছে। এছাড়া অন্যান্য খেলাপিদের থেকে জনতা ৩৮৪ কোটি, অগ্রণী ৩১৭ কোটি, সোনালী ৮৮৮ কোটি ও রূপালী ১৮০ কোটি টাকা আদায় করেছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে রূপালী ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি ২৩ শতাংশ ছিল। এছাড়া সোনালীর ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ, অগ্রণীর ১৭ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং জনতার ৪ দশমিক ০২ শতাংশ আমানতের প্রবদ্ধি হয়।
এছাড়া গতবছর অগ্রণী ব্যাংকের সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক ৯১ শতাংশ ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়। আর রূপালীর ১৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ, জনতার ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ ও সোনালীর ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
অন্যদিকে ২০১৮ সালে রূপালী ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় ছিল ৭৭০ কোটি টাকা। আগের বছরের চেয়ে জনতা ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় ১০৬ কোটি টাকা বেড়ে ১ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা হয়েছে। অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় ২৮ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। আর সোনালী ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় ৫২ কোটি টাকা কমে হয়েছে ১ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা।
সোনালী ও রূপালী ব্যাংক নিট মুনাফা অর্জনে সক্ষম হলেও জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক লোকসানে ছিল। তবে সব ব্যাংকেরই লোকসানি শাখা কমে এসেছে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে রূপালীর লোকসানি শাখার কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮টি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে যার সংখ্যা ছিল ৩৩টি।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সোনালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা নেমে এসেছে ৯৩টিতে। ২০১৭ সালে যার সংখ্যা ছিল ১৮১টি।
২০১৭ সালে অগ্রণী ব্যাংকের লোকসানি শাখা ছিল ৪৩টি, তা ২০১৮ সালে দাঁড়িয়েছে ২১টি।
আর জনতা ব্যাংকের ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ৫৭টি শাখা থাকলেও এক বছরের ব্যবধানে ২০১৮ সালে মাত্র ১টি কমে ৫৬টিতে দাঁড়িয়েছে।
ওডি/টিএফ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড