বন্ডের বিনিময়ে খেলাপি ঋণ ক্রয়ের সুপারিশ

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি কমিটি ঋণ ক্রয়-বিক্রয়ে কর মওকুফ সুবিধা, বন্ডের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ ক্রয় ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির বাইরে খেলাপি ঋণ ক্রয়-বিক্রয়ে মধ্যম বাজার ব্যবস্থার সুপারিশ করেছে।

দুই মাস আগে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠনের জন্য ছয় সদস্যের ওই কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কোম্পানি গঠনের কাজ এগিয়ে চলেছে। এখন সেই সুপারিশগুলো অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতকে চাঙা করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ (এনপিএল) কমিয়ে আনতে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে।

বিভিন্ন সময় খেলাপি ঋণ আদায়ে বিকল্প পথ খোঁজার কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এরই আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত কমিটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

এই কমিটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশে ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সালে ব্যাপক অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হওয়ার পরও তারা কীভাবে খেলাপি ঋণ কমিয়ে এনেছে, তার একটি বিশ্লেষণ সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যে সাতটি দেশ নিয়ে কাজ করেছে, সেগুলো হলো- দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া,ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড,মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস ও তাইওয়ান। এ সাত দেশের প্রতিটিই ওই সূত্রটি প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের খেলাপি ঋণ সফলভাবে কমিয়ে নিয়ে এসেছে।

কমিটির একজন সদস্য বলেন, উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, এক সময় ইন্দোনেশিয়ায় আর্থিক সংকটের সময় ঋণের প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত খেলাপি হয়েছিল, কিন্তু ২০১৭ সালের শেষে দেশটির খেলাপি ঋণ ৩ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। আমরা এর ধারণা নিয়ে এসেছি। আশা করছি, এটি ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সহায়তা করবে।

কমিটি ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে খেলাপি ঋণ কিনে নেবে এবং এর দ‍াম দর চূড়ান্ত করে ব্যক্তি বা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকিং খাতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, এটি মোট একই সময়ে বিতরণ করা মোট ঋণের ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ।

এছাড়া অনেক ব্যাংক খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এসকল ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমে গেছে। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে বিশেষ বন্ডের বিনিময়ে খেলাপি ঋণ নেবে। ঋণের অর্থ ব্যাংকগুলো একটি নির্দিষ্ট সময় পরে পাবে। এভাবে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা হবে।

এছাড়াও কমিটি একটি মধ্যম আকারের বাজার গঠনের ব্যবস্থা করবে। যেখান থেকে গ্রহীতাকে খেলাপি ঋণ বিক্রি এবং ক্রয় করার অনুমতি দেওয়া হবে।

কমিটি মনে করে, সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির জন্য একটি গতিশীল বন্ড মার্কেট সুবিধা দেওয়ার প্রয়োজন। গতিশীল বন্ড মার্কেট হলে পর্যাপ্ত মূলধন পাবে। এতে সহজেই খেলাপি ঋণ কিনতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর বাইরেও কমিটি খেলাপি ঋণের জন্য আলাদা তথ্য ভাণ্ডার করার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ ক্রয় এবং বিক্রয়ের জন্য কর মওকুফ সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

শিগগিরই অর্থ মন্ত্রণালয়ে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠনের অনুমোদনের জন্য কমিটির সুপারিশগুলো পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।

ওডি/টিএফ