• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

তহবিল সঙ্কটে পড়েছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো

  অধিকার ডেস্ক

২০ এপ্রিল ২০১৯, ১৬:৩৪
বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে চরম তহবিল সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ব্যাংকিং খাতে আমানত কমে যাওয়ায় তহবিল সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার নির্ভর এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে। আগে যেখানে ব্যাংকগুলো তহবিল ঘাটতি কমাতে এসব প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিতো, এখন ব্যাংকের তহবিলে টান পড়ায় এসব প্রতিষ্ঠান থেকে তহবিল প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।

এমনকি কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান এ সঙ্কট মেটাতে বর্তমান বাজারের তুলনায় উচ্চ সুদেও তহবিল জোগাড় করতে পারছে না। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে এ সঙ্কট আরও প্রকট আকার নিতে পারে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীরা এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এ প্রসঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) চেয়ারম্যান মো: খলিলুর রহমান জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল সঙ্কট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংককে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া তাদের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আওতায় গৃহায়ন তহবিল আবারও চালু করার বিষয়ে বিবেচনা করতে হবে।পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে কর রেয়াত সুবিধায় বন্ড ছাড়ার অনুমতি দিতে হবে। তারা দীর্ঘ দিন ধরে এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর সরকারকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল পরিমাণ আয়কর প্রদান করে। একইসাথে তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে। এসব প্রতিষ্ঠান সমস্যায় পড়ার অর্থ হলো মুনাফা কমে যাওয়া।আর মুনাফা কমে গেলে সরকার রাজস্ব কম পাবে। একইসাথে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিও বাধাগ্রস্ত হবে। এজন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর চলমান সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

অপর একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডি জানান, বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে চরম আর্থিক সঙ্কটে রয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিলের প্রধান উৎস ব্যাংকিং খাতে তহবিল সঙ্কট শুরু হওয়ার পর তাদের ওপরও এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে। আগে ব্যাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত তহবিল বিনিয়োগ করতে না পারায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ধরনা দিতো। বিনিয়োগ চাহিদা না থাকায় ব্যাংকগুলোর তহবিল উদ্বৃত্ত ছিল। তখন ব্যাংকগুলো ক্ষতি কমাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধার দিতো। কিন্তু এখন চিত্র সম্পন্ন ভিন্ন।ব্যাংকিং খাতে আমানত কমায় অনেক ব্যাংকেরই এখন তহবিল সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে অনেক ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে রাখা তহবিল প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এখানেই বিপত্তি দেখা দিয়েছে।

এ অবস্থায় কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান তহবিল সঙ্কট মেটাতে উচ্চ সুদেও আমানত পাচ্ছে না। এক বছর খানেক আগেও যেখানে সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করা যেতো, এখন কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান তা সাড়ে ১০ থেকে ১৪ শতাংশ সুদে আমানত নিচ্ছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সামনে সঙ্কট আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। গভর্নরের কাছেও এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, সামনে ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য নানামুখী সঙ্কট দেখা দিতে পারে। কারণ, সঞ্চয়পত্রে সুদ হার বেশি হওয়ায় ব্যাংকের আমানত সঞ্চয়পত্রে চলে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। দিন দিন ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়ে চলছে। এছাড়া যে পরিমাণ ঋণ দেওয়া হচ্ছে তা উৎপাদনশীল খাতে যাচ্ছে না। সঠিক কাজেও ঋণের অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে না। ঋণের অর্থ হয় হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হচ্ছে, না হয় গ্রাহক ঋণ নিয়ে অন্য ঋণ পরিশোধ করছে।ফলে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে।আর আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় ব্যাংকিং খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য কমে যাচ্ছে।আগে উদ্বৃত্ত তারল্য প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা ছিল।কিন্ত বছরের শেষ সময়ে এসে তা ৭০ হাজার কোটি টাকায় নেমে গেছে। এর সিংহভাগই সরকারের কোষাগারে ব্যাংকের অর্থ দীর্ঘ মেয়াদের জন্য আটকে গেছে।

দেশের আমানতও কমে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকিং খাতে আবারও তহবিল সঙ্কট শুরু হয়েছে। কিছু কিছু ব্যাংক প্রতিদিনই আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপোর মাধ্যমে ধার নিচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে। ইতোমধ্যে কোনো কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, তার কাছে সুদহার এখন মুখ্য বিষয় নয়, তার দরকার নগদ টাকা। তিনি প্রয়োজন মেটাতে ১২-১৩ শতাংশ হারেও তহবিল সংগ্রহ করতে রাজি আছেন।

অন্যদিকে এক বেসরকারি ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে জোর করে টাকা রাখা হতো, এখন তারই টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তাই তিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসছেন। এ পরিস্থিতি সামনে আরও প্রকট আকার দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ খাতের শীর্ষ নির্বাহীরা এমন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিকল্প তহবিল সংস্থানের পরামর্শ দিয়েছেন। ওডি/টিএফ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড