অধিকার ডেস্ক ২৬ মার্চ ২০১৯, ১৫:১১
দিন দিন বাংলাদেশে মাংস আর ডিমের চাহিদা মেটাতে পোল্ট্রি শিল্প অপরিহার্য এক খাতে পরিণত হয়েছে। এ খাতে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ কর্মরত আছে, যাদের ৪০ শতাংশই নারী। তাই বলা যায়, নারীর ক্ষমতায়নেও এ শিল্প অনন্য ভূমিকা রাখছে। আর বর্তমানে পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
আশা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ এ খাত থেকে ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। শুধু তাই নয়, এ খাত মাথাপিছু আয় বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জাতীয় অর্থনীতিতেও এ শিল্পের অবদান ২ দশমিক ৪ শতাংশ। পোশাক শিল্পের পরেই সম্ভবনাময় খাত হিসেবে বর্তমানে এর অবস্থান ধরা হচ্ছে।
পোল্ট্রি শিল্পের বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশের পোল্ট্রি শিল্প থেকে সরাসরি ২৫-৩০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। এ শিল্পে বিনিয়োগ যত বাড়বে কর্মসংস্থানও তত বাড়বে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) মতে, ২০৩০ সাল নাগাদ এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে। যেহেতু এ খাতে নিয়োজিত জনশক্তির শতকরা ৪০ ভাগই নারী, সেহেতু এটি নারীদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি তাদের ক্ষমতায়নে বিশেষভাবে অবদান রাখছে।
তারা আরও জানিয়েছে, বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৬৫-৭০ হাজার ছোটবড় খামার আছে। দেশে মুরগির মাংসের দৈনিক উৎপাদন প্রায় ১ হাজার ৮৫১ টন। আর প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ ডিম উৎপাদিত হচ্ছে।
সংগঠনটির সভাপতি মসিউর রহমানের মতে, ‘এ খাতে ২০২১ সাল নাগাদ ৫৫ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। দেশে বার্ষিক ডিম উৎপাদন ছিল ২০১৪ সালে ৬৩৯ কোটি, ২০১৫ সালে ৭১২ কোটি এবং ২০১৬ সালে ছিল ৮২১ কোটি। ২০২১ সাল নাগাদ দেশে বার্ষিক ডিমের চাহিদা প্রায় ১ হাজার ৪৮০ কোটি দাঁড়াবে।’
অন্যদিকে, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও’র মতে, বছরে জনপ্রতি ন্যূনতম ডিম খাওয়া উচিত ১০৪টি। উন্নত দেশগুলোতে জনপ্রতি গড়ে প্রায় ২২০টির মতো ডিম খাওয়া হয়। জাপানে জনপ্রতি ডিম খাওয়ার পরিমাণ বছরে প্রায় ৬০০টি। অথচ কিন্তু বাংলাদেশে বছরে মাথাপিছু ডিম খাওয়ার হার বর্তমানে প্রায় ৭০টি।
অন্যদিকে, বছরে মাছ ও মাংস মিলে প্রাণিজ আমিষ খাওয়া দরকার অন্তত ২৫ থেকে ৩০ কেজি। কিন্তু বাংলাদেশে তার হার প্রায় ২৩ কেজি (মাংস ৮ কেজি, ১৫ মাছ) । আর সুষম খাদ্যের মধ্যে প্রথম সারির একটি খাদ্য হচ্ছে ডিম। তাই মানুষের আয় বৃদ্ধি ও জীবনমানের উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আগামীতে পোল্ট্রির চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাবে। সেই চাহিদা মেটানোর জন্য পোল্ট্রি উৎপাদনে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা দরকার। এজন্য পোল্ট্রি শিল্পের সমস্যাগুলো সমাধান করার পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকা দরকার।
এদিকে, বর্তমান সরকার ২০২১ সাল নাগাদ জনপ্রতি বার্ষিক ডিম খাওয়ার গড় পরিমাণ ১০৪টিতে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। লক্ষ্য পূরণ করতে দৈনিক প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ডিম এবং দৈনিক প্রায় ৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ হাজার টন মুরগির মাংস উৎপাদনের প্রয়োজন হবে। আর ৫০-৬০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজনও হবে। এজন্য বাস্তবসম্মত স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা সংশোধনেরও প্রয়োজন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড