• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

করোনাতে কসবা সীমান্ত হাটে স্থবিরতা

  অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

১৮ মার্চ ২০২০, ১৫:১৯
কসবা সীমান্ত হাট
কসবা সীমান্ত হাট (ছবি : সংগৃহীত)

'অসম' বাণিজ্যের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত হাটের বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে আছেন। তাদের বেচাকেনা ভারতীয় ব্যবসায়ীদের তুলনায় খুবই কম। এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সীমান্ত হাটের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের পণ্য রপ্তানি কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়েনি করোনার।

গত রবিবার (১৫ মার্চ) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পর থেকেই কসবা সীমান্ত হাটের সার্বিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসায়ীদের এ ঘোষণা না জানানোতে অনেকেই সেদিন হাটে এসে ফিরে গেছেন। হাট বন্ধ থাকায় প্রতি হাটে ব্যবসায়ীরা ৮-১০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি থেকে বঞ্চিত হবেন।

তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পচনশীল পণ্য বিক্রেতারা। তাদেরকে লোকসান গুণতে হবে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত কসবা সীমান্ত হাট বন্ধ থাকবে।

২০১৫ সালের ৬ জুন কসবা উপজেলার তারাপুর ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহীজলা জেলার কমলাসাগর সীমান্তে নির্মিত হাটটি যাত্রা শুরু করে। ভারতের ৫০টি এবং বাংলাদেশের ৫০টি দোকান রয়েছে হাটে। বাংলাদেশি ক্রেতাদের কাছে ভারতীয় প্রসাধনী, বিস্কুট, চকলেট, চাপাতা, শাড়ি, থ্রি-পিস ও শিশুদের ডায়াপারের চাহিদা বেশি।

অন্যদিকে ভারতীয় ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশি পণ্যগুলোর মধ্যে জামদানি শাড়ি, ফলমূল, শুটকি, কুটির শিল্প ও প্লাস্টিক পণ্য, লৌহজাত পণ্য এবং ক্রোকারিজ পণ্যসামগ্রীর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তবে বাংলাদেশি পণ্যের তুলনায় ভারতীয় পণ্য বেশি বেচাকেনা হয় হাটে। প্রতিহাটে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা জনপ্রতি ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা এবং বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা জনপ্রতি ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করে।

বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর অতিথি পাস কার্ড ইস্যু বন্ধ থাকায় প্রায় দুই মাস বসেনি হাট। কারণ যারা অতিথি পাস নিয়ে আসেন, তারাই হাটের বড় ক্রেতা। আর অতিথি পাস বন্ধ থাকায় দুই দেশের ব্যবসায়ীদের কেউই আসেনি হাটে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ঠিকই বাৎসরিক ১০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে সরকারকে।

কসবা হাটের এক ব্যবসায়ী বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে হাট বন্ধের ব্যাপারে কোনো কিছু জানানো হয়নি। রবিবার হাটে গিয়ে জানতে পারি অনির্দিষ্টকালের জন্য হাট বন্ধ। পণ্য বেচাকেনা যেখানে কম ছিল, সেখানে বন্ধের কারণে তো লোকসানে পড়তে হবে। ব্যবসা হোক বা না হোক, প্রতিবছর তো সরকারকে ঠিকই ১০ হাজার টাকা ফি জমা দিতে হবে।

তবে পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে। প্রতিদিন ভারতের আগরতলায় যাচ্ছে কয়লা, পাথর, মাছ, শুটকি, প্লাস্টিক সামগ্রী ও খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য বোঝাই অন্তত ৪০-৫০টি ট্রাক, যার রপ্তানিমূল্য ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। এসব পণ্য আগরতলা থেকে ভারতের সেভেন সিস্টার্সখ্যাত সাতটি রাজ্যে সরবরাহ করা হয়।

আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, যাত্রী পারাপার বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিকভাবে চলছে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম। প্রতিদিন আগরতলায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। আবার কখনো কখনো এর বেশি টাকার পণ্যও রপ্তানি হচ্ছে।

আরও পড়ুন : করোনায় কেনাকাটার হিড়িকে বেড়েছে চালের দাম

এ দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান মিতু মরিয়ম কসবা সীমান্তহাটের বিষয়ে বলেন, হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে অনির্দিষ্টকালের জন্য হাট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ দিকে ভারতের হাট ব্যবস্থাপনা কমিটিও বন্ধ করে দিয়েছে হাট। আবার দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে হাট খুলে দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করেছে করোনা ভাইরাস। এটার তুলনায় খুবই সামান্য ক্ষতি হবে ব্যবসায়ীদের। তবে যদি কারও অসন্তোষ থাকে তাহলে লিখিতভাবে জানালে হাট ব্যবস্থাপনা কমিটি যতটুকু সম্ভব সাহায্য সহযোগিতা করবে। হাট থেকে সরাসরি কোনো রাজস্ব পায় না হাট ব্যবস্থাপনা কমিটি। ব্যবসায়ীদের নবায়ন ফি এবং টিকিট বিক্রির টাকাই সরকারের আয়ের উৎস।

ওডি/এওয়াইআর