• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

৯ দিনের ব্যবধানে অর্ধলাখ টাকা উধাও

  অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

১৭ মার্চ ২০২০, ১৫:৫৩
শেয়ারবাজার
শেয়ারবাজার (ছবি : ইন্টারনেট)

দেশের শেয়ারবাজার করোনা ভাইরাস আতঙ্কে মহাধসের মধ্যে পড়েছে। এতে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের শেষ ৯ কার্যদিবসেই উধাও হয়ে গেছে প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলের উহান শহরে প্রথমবারের মতো প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসটিকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে। ইতোমধ্যে ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছে প্রায় ২ লাখ মানুষ এবং ৭ হাজারের বেশি প্রাণ দিয়েছে।

বেশ কিছুদিন ধরেই করোনা ভাইরাসের এই ভয়াবহ প্রকোপের জন্য বিশ্ব শেয়ারবাজারে মন্দা বিরাজ করছে। বড় ধসের কবলে পড়ায় ভারত, পাকিস্তান ও ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ারবাজার সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া ফিলিপাইনের শেয়ারবাজারসহ সকল ধরনের আর্থিক বাজার স্থগিত করা হয়েছে।

বিশ্ব শেয়ারবাজারের বেহাল দশা মন্দা ডেকে এনেছে দেশের শেয়ারবাজারেও। গত ৯ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম ৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য প্রকাশ পায়। এ পরিস্থিতিতে পরের কার্যদিবসে শেয়ারবাজারেও পড়ে করোনার প্রভাব। একদিনেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমে যায় ২৭৯ পয়েন্ট।

যত দিন যাচ্ছে শেয়ারবাজারের পরিস্থিতির তত অবনতি হচ্ছে। পুঁজিহারা বিনিয়োগকারীদের বাড়ছে হাহাকার। পরিস্থিতির ক্রমান্বয়ে অবনতি হওয়ায় আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখার দাবি তুলেছেন।

তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, শেয়ারবাজার করোনা ভাইরাসের কবলে পড়ে শেষ ৯ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন হারিয়েছে ৪২ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের সম্মিলিতভাবে লোকসান হয়েছে প্রায় অর্ধলাখ কোটি টাকা।

ডিএসই এই পতনের মুখে পড়ে প্রধান মূল্যসূচক হারিয়েছে ৬৯৪ পয়েন্ট। ২০১০ সালের মহাধসের পর ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ডিএসইর সূচকে পরিবর্তন আনা হয়। বাজারটিতে প্রধান মূল্যসূচক হিসেবে ডিএসইএক্স চালু করা হয়। বর্তমানে সূচকটি ৩ হাজার ৭৭২ পয়েন্ট কমে শুরুর অবস্থান থেকে ২৮৩ পয়েন্ট নিচে নেমে এসেছে।

বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের এই পরিস্থিতিকে রক্তক্ষরণের সঙ্গে তুলনা করছেন। বড় বড় বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ না করায় পতনের মাত্রা বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের রক্ষার্থে শেয়ারবাজার কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখা উচিত।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, কোভিড-১৯-এর কারণে সবার মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এই করোনা ভাইরাসকে পুঁজি করে কিছু চক্র শেয়ারবাজারে আতঙ্ক বৃদ্ধি করছে। বড় বড় বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠান নীরব থাকার কারণেই এমন পতন হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে হলে কমপক্ষে ২ সপ্তাহ শেয়ারবাজারের লেনদেন বন্ধ রাখা উচিত।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, করোনা ভাইরাস আতঙ্ক এবং বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেওয়ার পরও ব্যাংকের বিনিয়োগ না বাড়ায় এমন পতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সবাই শেয়ারবাজার ভালো করার চেষ্টা করছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব দ্রুতই ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়বে এবং ঘুরে দাঁড়াবে শেয়ারবাজার।

এ দিকে বিনিয়োগকারীদের করা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লেনদেন বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। কারণ আমাদের এ ধরনের কোনো আইন নেই। এর আগে শেয়ারবাজার টেনে তুলতে স্টেকহোল্ডারদের একটি অংশের দাবির প্রেক্ষিতে এবং সরকারের ওপর মহলের হস্তক্ষেপে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য তফসিলি ব্যাংকগুলোকে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন : শেয়ারবাজার বিনিয়োগে ৫ ব্যাংকের ফান্ড গঠন

এ তহবিলের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো নিজস্ব উৎস অথবা ট্রেজারি বিল বন্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারবে। ব্যাংকগুলো ৫ শতাংশ সুদে ৫ বছরের জন্য এ অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে এবং সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ প্রদান করতে পারবে।

ব্যাংকগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য সাড়া না পাওয়ায় চলতি মাসের ১০ তারিখে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে ডিএসই বৈঠক করে। বৈঠকে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ না বাড়ায় ডিএসই ক্ষোভ প্রকাশ করে। এরপর এ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে বড় ধস নামলে বিনিয়োগকারীদের একটি দল ডিএসইতে গিয়ে লেনদেন বন্ধ রাখার দাবি জানান।

এই দাবির প্রেক্ষিতে ডিএসইর এমডি ছানাউল হক তাদের বলেন, শেয়ারবাজারে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের চেষ্টায় শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে।

ওডি/এওয়াইআর